হিল ভয়েস, ২৪ মে ২০২৪, বান্দরবান: বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার সদরে ও বান্দরবান সদর উপজেলার উজানী পাড়ায় কেএনএফের সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করা এবং নির্দোষ-নিরীহ আটককৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তি দাবিতে বম জনগোষ্ঠী কর্তৃক বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে।
বিগত ২২ মে ২০২৪, সকাল ১০.০০ ঘটিকায় রুমা সদরে সাধারণ বম সমাজের ব্যানারে কেএনএফ বিরোধী সমাবেশ করেছে বম জনগোষ্ঠী। সমাবেশে প্রায় হাজারের কাছাকাছি লোকের সমাগম ঘটে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, “বম জনগোষ্ঠী আজ নিরাপত্তাহীনতা, ভয় ও আতঙ্কে দিননিপাত করছে এবং অধিকাংশ গ্রাম আজ জনশূন্য হয়ে পড়েছে, দেশান্তরী হচ্ছে, বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। বম ছাত্র-ছাত্রীরা আজ স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না, তাদের স্বাভাবিক শিক্ষাজীবন ব্যহত হচ্ছে। তাহলে মেধাহীন জাতি তৈরি করাটাই কি কেএনএফের রাজনৈতিক আদর্শ?
বক্তারা আরো বলেন, বম জনগোষ্ঠীর আয়ের উৎস হচ্ছে ফল বাগান চাষ এবং জুমচাষ। কেএনএফের অদূরদর্শীতার কারণে আজ বম জনগোষ্ঠীর উৎপাদিত ফসল ও ফল-মূল অবিক্রিত অবস্থায় বাগানে পড়ে আছে। তাহলে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু জাতিতে পরিণত করাটা কি কেএনএফের রাজনৈতিক দর্শন? চলমান অপারেশনের কারনে আজ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত বম-রা তাদের কাজে যেতে পারছে না।”
উক্ত সমাবেশে বক্তারা কেএনএফ ও সরকারের প্রতি নিম্ন কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন-
১. অনতিবিলম্বে কেএনএফ কর্তৃক লুট করা অস্ত্র ও গোলাবাবরুদ ফিরিয়ে দেওয়া।
২. কেএনএফের সমস্ত অপকর্ম ও অবাস্তব স্বপ্নকে ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে বম জনগোষ্ঠীকে স্বাভাবিক জীবন-যাপনের সুযোগ দেওয়া।
৩. কিছু বিপথগামী ও পথভ্রষ্ট কেএনএফ/কেএনএ সদস্যের কর্মকান্ডের জন্য সমস্ত বম জনগেষ্ঠীকে দোষারোপ করা চলবে না।
৪. নিরপেক্ষ ও সুষ্টু তদন্তের সাপেক্ষে প্রকৃত ও চিহ্নিত অপরাধীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা।
৫. কোন নিরপরাধ ব্যক্তি যাতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে শাস্তিভোগ না করে, সেদিকে সুদৃষ্টি দেওয়া এবং
৬. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয়ের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে অবিলম্বে পণ্য ক্রয়ের সুযোগ নিশ্চিত করা।
অন্যদিকে গত ১৯ মে ২০২৪, বিকাল ৩.০০ টায় বান্দরবান সদর উপজেলার উজানি পাড়ায় সাধারণ বম সমাজের ব্যানারে কেএনএফ বিরোধী একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সমাবেশে বম মহিলা দলের সভানেত্রী লালঅয় পার বম, ইয়ং বম এসোসিয়েশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক লালপেকথার বম, বম মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক ঙুনচুয়ান বম, বান্দরবান উপজেলা সদর বম মহিলা দলের সভানেত্রী তুয়ারনেম বম বক্তব্য রাখেন। উক্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কালাঘাটা এলাকার প্রেস ব্যাটারিয়ান চার্চের প্যাস্টর এবং বম সোশ্যাল কাউন্সিলের উপদেষ্টা রেভাঃ জর্জেও লনচেও বম।
উক্ত সমাবেশের মাধ্যমে বম সমাজের পক্ষ থেকে নিম্নোক্ত দাবি উত্থাপন করা হয়-
১. তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা।
২. নির্দোষ-নিরীহ আটককৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তি দেওয়া; দোষীদের দায় বম ছাত্রসমাজ নেবে না।
৩. প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া;
৪. নিরপেক্ষ ও সঠিক তদন্তের মাধ্যমে কেএনএফের উত্থান দেশবাসীর সামনে তুলে ধরা;
৫. বম সমাজকে স্বাভাবিক বেঁচে থাকার অধিকার দেওয়া।
উল্লেখ্য, গত ২ ও ৩ এপ্রিল পরপর রুমার সোনালী ব্যাংক শাখা এবং থানচির সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংক শাখায় ডাকাতি করে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা অর্থ সহ ১৪টি অস্ত্র লুট করলে সেনাবাহিনী ও ডিজিএফআই-এর নেতৃত্বে যৌথবাহিনী কেএনএফের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।
আরো উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং ভাগ করো শাসন করো উপনিবেশিক নীতির ভিত্তিতে একের পর এক সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ গঠনের ষড়যন্ত্র হিসেবে সেনাবাহিনী কর্তৃক কেএনএফ সৃষ্টি করা হয়। পরে অর্থের বিনিময়ে কেএনএফ কর্তৃক ইসলামী জঙ্গী গোষ্ঠীকে আশ্রয় ও সামরিক প্রশিক্ষণের তথ্য ফাঁস হলে আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে সেনাবাহিনী তথা বাংলাদেশ সরকার বাধ্য হয় কেএনএফের সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে। এভাবে আজ কেএনএফ সেনাবাহিনীর বুমেরাং ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।