হিল ভয়েস, ২৮ মে ২০২৪, রাঙামাটি: ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক প্রতিষ্ঠিত পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ শাসনব্যবস্থার সর্বোচ্চ প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান “পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ”-এর রজতজয়ন্তী রাঙ্গামাটিতে উদযাপিত হয়েছে।
এ উপলক্ষে সোমবার (২৭ মে) সকাল ১১:০০ ঘটিকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের উদ্যোগে রাঙামাটি জেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অতিথিদের প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে উক্ত আলোচনা সভা উদ্বোধন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য ও বেসামরিক পরিবহন পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুপ্রদীপ চাকমা, শরণার্থী পুনর্বাসনবিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান সুদত্ত বিকাশ চাকমা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যাশৈহ্লা মারমা, চাকমা সার্কেলের প্রধান রাজা দেবাশীষ রায়, বোমাং সার্কেলর প্রধান সাচিং প্রু চৌধুরী। সভায় এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য কংজেরী চৌধুরী, পার্বত্য নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য নুরুল আলম, বম নেতা জোয়াম লিয়ান আমলাই বম, শিক্ষাবিদ নিরূপা দেওয়ান ও শিশির চাকমা প্রমুখ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা সুবর্না চাকমার সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ প্রতিষ্ঠার ২৫ বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক গৌতম কুমার চাকমা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুবই আন্তরিক উল্লেখ করে তিনি বলেন পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সকল সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। পাহাড়ে সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হলে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ১৯০০ বাতিল করা এই অঞ্চলের মানুষ মানবে না। এটি যাতে বাতিল না হয়, সে বিষয়ে সোচ্চার থাকতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ অকার্যকর করে রাখা হয়েছে উল্লেখ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও আলোচনা সভার সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা বলেন, পাহাড়ের পরিস্থিতি অশান্ত। এখানে বলা হচ্ছে পরিস্থিতি যাতে অশান্ত না হয় সে জন্য আমাদের মিলিতভাবে চেষ্টা করা দরকার। কিন্তু পাহাড় তো অশান্ত হয়ে আছে। সেটো নতুন করে বলার, উদাহরণ দেওয়ার কোন অবকাশ নেই। ২৬ বছর আগে চুক্তি স্বাক্ষর করেছি অনেক আশা আকাঙ্ক্ষা, ভরসা নিয়ে, অনেক বিশ্বাস নিয়ে। আজকে পার্বত্য চুক্তি দীর্ঘ ২৭ বছরে পদার্পন করেছে। এই চুক্তি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। চুক্তিকে বুলিয়ে দেওয়ার জন্য এক ধরণের ষড়যন্ত্র চারিদিকে দেখতে পাই।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যে বাস্তবতা, এখানে ত্রিমুখী শাসন চলছে। তার মধ্যে সবচেয়ে যেটা পীড়াদায়ক, যেটা বলতে সাহস করে না বা স্বীকার করে না সেটা হলো এখানে সেনা কর্তৃত্ব বা সেনা শাসন। আজকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে প্রথম অন্তরায় হলো সেনা শাসন- সেনা কর্তৃত্ব। ১৯০০ সালের শাসন বিধি এখানকার সেনা কর্তৃপক্ষ এবং পার্বত্য মন্ত্রণালয়, আঞ্চলিক পরিষদ, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ নিয়ে গঠিত শাসন। এই ত্রিমুখী শাসন আজকে পার্বত্যাঞ্চলে বিরাজমান। এই ত্রিমুখী শাসন, দমন-পীড়ন ইত্যাদি কারণে পার্বত্যাঞ্চলের জুম্ম জনগণ আজকে তারা হতাশাগ্রস্ত, বিক্ষুব্ধ। তারা অধিকর চায়, তারা মানুষের মর্যাদা-অধিকার নিয়ে বাঁচতে চায়।
সংসদ সদস্য ও বেসামরিক পরিবহন পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ব্রিটিশদের ভাগ করো শাসন করো নীতি এখানে চালু হয়েছে। এবং সর্বশেষ পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে আজকে প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য চুক্তি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। গত দুদিন আগে ১৪ দলের সভায় পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তরে প্রশ্নটি উত্থাপণ করেছেন।
তিনি আরো বলেন, প্রথম থেকে পার্বত্য চুক্তিকে নস্যাৎ করার জন্য অন্তর্ঘাতমূলক কাজ চলেছে। এখানে অভিবাসী বাঙালিদের উস্কে দেয়া হলো চুক্তির বিরুদ্ধে। পার্বত্য চুক্তিতে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে যে, এ অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য আলাদা শাসনব্যবস্থা থাকবে এবং সেই আলাদা শাসনব্যবস্থার শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হলো আঞ্চলিক পরিষদ। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই আঞ্চলিক পরিষদের বিধিমালা তৈরি হয়নি। উল্টো আমরা দেখেছি যারা প্রশাসনের অংশ তারা এমন বই বের করেছে যে বইটি পার্বত্যাঞ্চলের আদিবাসীদের অবস্থান নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছেন সরকারি কর্মকর্তাগণ। পার্বত্য চুক্তিকে বানচাল করার জন্য অন্তর্ঘাতমূলক কাজ হচ্ছে কিনা সেগুলো খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। না হলে পরে ১৯০০ সালের হিল ট্রাক্টস ম্যানুয়ালের ব্যাপারে অজানা লোকের আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে রিভিউ পিটিশন দিয়ে আপিল বিভাগ তার শুনানি কথা কিভাবে আসে তিনি এ প্রশ্ন তুলেন।
এছাড়াও উক্ত আলোচনা সভায় উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুপ্রদীপ চাকমা, শরণার্থী পুনর্বাসন বিষয়ক টাস্কর্ফোসের চেয়ারম্যান সুদত্ত বিকাশ চাকমা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যাশৈহ্লা মারমা, চাকমা সার্কেলের প্রধান রাজা দেবাশীষ রায়, বোমাং সার্কেলের প্রধান সাচিং প্রু চৌধুরী, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য কংজেরী চৌধুরী, পার্বত্য নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দওেয়ান, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য নুরুল আলম, বম নেতা জুমলিয়াম আমলাই বম, শিক্ষাবিদ নিরুপা দেওয়ান ও শিশির চাকমা প্রমুখ।