হিল ভয়েস, ৬ মে ২০২৪, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলার জুরাছড়িতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক আটককৃত পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) স্থানীয় তিন নেতাকে অবশেষে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় জড়িত করে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলায় উক্ত ৩ জুম্ম ছাত্রনেতা সহ আরও ১৩ জন জুম্ম গ্রামবাসী মোট ১৬ জন এবং অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জনকে জড়িত করা হয়েছে।
আটককৃত তিন ছাত্রনেতা হলেন- পিসিপি’র জুরাছড়ি থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক রূপম চাকমা, সাংগঠনিক সম্পাদক সুরেন চাকমা এবং তথ্য ও প্রচার সম্পাদক রনি চাকমা। রূপম চাকমার বাড়ি জুরাছড়ির মৈদুং ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের জামেরছড়ি গ্রামে, সুরেন চাকমার বাড়ি একই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পানছড়ি গ্রামে এবং রনি চাকমার বাড়ি বনযোগীছড়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বড়ইতলি গ্রামে।
উল্লেখ্য, গত ৪ মে ২০২৪ জুরাছড়ি সদর এলাকা থেকে জুরাছড়ির অন্তর্গত বনযোগীছড়া সেনা জোনের নিয়ন্ত্রণাধীন যক্ষা বাজার সেনা ক্যাম্পের সেনা সদস্য কর্তৃক পিসিপি’র তিন নেতা রূপম চাকমা, সুরেন চাকমা ও রনি চাকমাকে কোনো অভিযোগ ও ওয়ারেন্ট ছাড়া আটক করা হয়। সেসময় তারা চলমান ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সুরেশ কুমার চাকমার পক্ষে প্রচারণা কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। শুধু তাই নয়, গত ২৬ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে উক্ত ছাত্রদেরকে যক্ষা বাজার ক্যাম্পের চেকপোষ্টে তিন ঘন্টা ধরে আটকে রেখে অহেতুক জিজ্ঞাসাবাদ ও হয়রানি করা হয়।
আটকাবস্থাতেই গতকাল (৫ মে) সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আটককৃত ওই ছাত্রনেতাদের সাথে ১০ হাজার টাকা, চাঁদা আদায়ের রশিদ, ১০টি ইয়াবা ট্যাবলেট ও কয়েকটি মোবাইল ফোন ইত্যাদি পাওয়া গেছে এবং উক্ত তিন ছাত্র সহ অন্যান্যরা বল প্রয়োগ করে ও মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায়ে জড়িত মর্মে মিথ্যা অভিযোগ ও কাহিনী সাজিয়ে জুরাছড়ি থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী হয়েছেন যক্ষা বাজার সেনা ক্যাম্পের গোয়েন্দা প্রতিনিধি সার্জেন্ট নং-৪৫০৪১৪৩ মোঃ রবিউল ইসলাম।
জুরাছড়ি থানায় উক্ত মামলা নং- ০২, তাং-০৫/০৫/২০২৪, ধারা ৩৮৬/৩৮৭/৩৪ পেনাল কোড হিসেবে গস্খহণ করা হয়।
জানা গেছে, উক্ত তিন ছাত্রনেতা ছাড়াও সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আরও ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে তাদেরকে পলাতক আসামী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
সেই ১৩ জন ব্যক্তি হলেন- (১) সুবর্ণ চাকমা, পিতা-অজ্ঞাত, সাং-চকপটিঘাট, ০২ নং বনযোগীছড়া ইউনিয়ন; (২) মিলন চাকমা, পিতা-অজ্ঞাত, সাং-বনযোগীছড়া; (৩) তুজু চাকমা, পিতা-অজ্ঞাত, সাং-শীলছড়ি, মৈদং ইউনিয়ন; (৪) অন্তর চাকমা, পিতা-অজ্ঞাত, সাং-ফকিরাছড়ি, মৈদং ইউনিয়ন; (৫) কুসুম চাকমা, পিতা-অজ্ঞাত, সাং-ধুমধুম্যা; (৬) কনেল চাকমা, পিতা-অজ্ঞাত, সাং-দুমদুম্যা; (৭) মিঠুন চাকমা, পিতা-অজ্ঞাত, সাং-লুলাংছড়ি, জুরাছড়ি ইউনিয়ন; (৮) হৃদয় চাকমা, পিতা-অজ্ঞাত, সাং-উপকছড়ি; (৯) বাত্তে চাকমা, পিতা-অজ্ঞাত, সাং-বনযোগীছড়া; (১০) কনক চাকমা, পিতা-অজ্ঞাত, সাং-ফকিরাছড়ি, মৈদং; (১১) আনন্দ চাকমা, পিতা-অজ্ঞাত, সাং-সামিরাঘাট, জুরাছড়ি ইউনিয়ন; (১২) বিপক চাকমা, পিতা-অজ্ঞাত, সাং-দুমদুম্যা; (১৩) সঞ্জীব চাকমা, পিতা-অজ্ঞাত, সাং-বগাখালী, দুমদুম্যা ইউনিয়ন।
উল্লেখ্য, গতকাল ৫ মে, বিকাল ৩ টার দিকে আটককৃত তিন ছাত্রনেতার দ্রুত ও নিঃশর্ত মুক্তি এবং ‘অপারেশন উত্তরণ’ এর নামে সেনাশাসন প্রত্যাহারের দাবিতে রাঙ্গামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) রাঙ্গামাটি জেলা শাখার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে সংগঠনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনারের (এডিসি) মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে একটি স্মারকলিপিও পেশ করা হয়।
এছাড়া আজ (৬ মে) পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে উক্ত তিন ছাত্রনেতাকে অন্যায়ভাবে আটকের প্রতিবাদে ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে একটি প্রেস বিবৃতি প্রদান করা হয়েছে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গ্রেপ্তারকৃত তিন ছাত্রনেতাকে আজ রাঙ্গামাটি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।