হিল ভয়েস, ৪ মে ২০২৪, চট্টগ্রাম: আজ ৪ঠা মে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বিশ্বশান্তি প্যাগোডায় লংগদুর বর্বরোচিত গণহত্যার শিকার শহীদদের স্মরণে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ২নং গেইট শাখার উদ্যোগে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত স্মরণসভায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নং গেইট শাখার সাধারণ সম্পাদক আলফ্রেড চাকমার সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ২নং গেইট কমিটির সভাপতি সুমন চাকমা। উক্ত স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক ম্যাকলিন চাকমা, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নরেশ চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্তর চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক অন্বেষ চাকমা এবং সাংগঠনিক সম্পাদক সুভাষ চাকমা।
স্মরণসভার শুরুতে লংগদু গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এরপর স্মরণ সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেইট কমিটির সদস্য বিপুল চাকমা। তিনি তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, লংগদু গণহত্যার ৩৫ বছরেও আমরা বিচার পাইনি। পাহাড়ে অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সেটেলার বাঙালি পুনর্বাসনের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক হামলার স্বীকার হয় জুম্মরা। যা আজও চলমান রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আজকে জুম্ম জনগণের অধিকার নেই। সেই অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে জুম্ম ছাত্র ও যুব সমাজকে আন্দোলনে অধিকতর সম্পৃক্ত হতে হবে।
চবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুভাষ চাকমা বলেন, লংগদু গণহত্যাসহ পাহাড়ে সংঘটিত গণহত্যাসমূহের ইতিহাস আমরা ভুলতে পারি না। রাষ্ট্র আজও নিত্য নতুন পন্থায় তার জুম্ম বিধ্বংসী আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ে সংঘটিত যাবতীয় আগ্রাসন কর্মকান্ডের দিকে দেখেন, কোথাও সুষ্ঠু বিচার আমরা পাইনি। পার্বত্য চট্টগ্রামে এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে উত্তরণ একমাত্র রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের মাধ্যমে হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তি নিয়ে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে যেতে হবে।
চবি শাখার সাধারণ সম্পাদক অন্বেষ চাকমা বলেন, ১৯৮৯ সালের ৪ঠা মে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদে সেটেলার কর্তৃক লংগদুর কয়েকটি গ্রামে চালানো বর্বরোচিত গণহত্যা আজও আমাদের মনে পীড়া দেয়। রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর যে সাম্প্রদায়িক মনোভাব তা আমরা পাহাড়ে সংঘটিত গণহত্যাসমূহের মাধ্যমে উপলব্ধি করতে পারি। ছাত্র ও যুবারা একটা জাতির কর্ণধার। তারা ভুল পথে এগোলে জাতি ভুল পথে পরিচালিত হবে, তারা যদি সঠিক পথে এগিয়ে আসে জাতি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। লংগদু গণহত্যার প্রতিবাদে সেই সময়ে ছাত্র ও যুব সমাজ সংগঠিত হয়ে প্রতিবাদ করেছিলো। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় ছাত্র ও যুব সমাজের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা আমাদের নিরাশ করে দেয়। বর্তমান ছাত্র সমাজ বাস্তবতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের যে কঠিন বাস্তবতা তা আজ তরুণ সামজের দুর্বার প্রতিবাদ প্রতিরোধ দাবি করে। কিন্তু ছাত্র সমাজ সে তুলনায় নিশ্চুপ নির্বিকার। নিজের ভূমি, ভাষা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে হলে আমাদের রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে এবং রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করে যেতে হবে।
পিসিপি কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক নরেশ চাকমা বলেন, পাহাড়ের সংঘটিত গণহত্যাসমূহ ও শোষণ নিপীড়নের ঘটনাসমূহের দিকে তাকালে আমরা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ মদদ দেখতে পাই। যা আমাদের নিয়ে রাষ্ট্রের মনোভাব আমরা উপলব্ধি করতে পারি।
তিনি আরও বলেন, ছাত্র সমাজের আত্মকেন্দ্রিকতা আমাদের অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে দিচ্ছে। আমরা সামগ্রিকভাবে সকলের চিন্তাটা করতে ভুলে যাচ্ছি। পাশাপাশি রাষ্ট্রযন্ত্রও পরিকল্পিতভাবে পাহাড়ের জুম্ম জাতীয়তাবাদে ঐক্যবদ্ধ ভিন্ন ভাষাভাষী জাতিগোষ্ঠীসমূহের মধ্যে ভাঙন ও বিভেদ সৃষ্টি করে দিয়ে যাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে আমাদের অবশ্যই রুখে দাঁড়াতে হবে।
পরিশেষে সুমন চাকমার সভাপতির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে স্মরণসভা সমাপ্ত হয়। স্মরণসভা শেষে লংগদু গণহত্যার শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়।