হিল ভয়েস,৩১ মে ২০২৪, চট্টগ্রাম: পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী নারীদের চীনে পাচারে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে চট্টগ্রাম শহরে বসবাস করা সচেতন জুম্ম সমাজ।
গতকাল শুক্রবার (৩১ মে) বেলা ১১টায় নগরীর প্রেসক্লাবের সামনে “সচেতন জুম্ম সমাজ” ব্যানারে এই কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়। এ সময় চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর লোকজন মানববন্ধনে অংশ নেন।
মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের অধ্যাপক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ জিনবোধি মহাথেরো বলেন, ‘পাহাড়ে শিক্ষাহীনতার সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির মানুষ সেখানকার আদিবাসী নারীদের লোভের ফাঁদে ফেলছে। বিয়ের কথা বলে চীনে নিয়ে গিয়ে তাঁদের পণ্য হিসেবে ব্যবহার করছে। সহজ-সরল পাহাড়ের মানুষ টাকা ও ভালো জীবনের লোভে পড়ে বিদেশ যাচ্ছে, এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হলে সরকার ও প্রশাসনের কার্যকরী ভূমিকা জরুরি।
তিনি আরো বলেন, শহরাঞ্চলে ইপিজেডগুলোতে পাহাড়ি নারীরা শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। তাদের শ্রমে কারখানার মালিকরা লাভবান হচ্ছে। বিভিন্ন অনৈতিক প্রলোভন ও বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে তাদের বিদেশে পাচার করা হচ্ছে।
ত্রিপুরা শ্রমিক ফেডারেশনের অর্থ সম্পাদক উপামোহন ত্রিপুরা বলেন, একশ্রেণির দালালেরা ক্রমাগত প্রলোভন দেখিয়ে দুর্গম পাহাড়ের মানুষদের বিভ্রান্ত করছে। অনলাইন এবং অফলাইনে এই কার্যক্রম চালাচ্ছে তারা। অর্থ ও বিদেশে ভালো জীবনের লোভ দেখিয়ে, আদিবাসী নারীদের বিয়ের নামে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে এসব নারীরা নানা বিপদে পড়ছে।
বিশ্বমৈত্রী বৌদ্ধবিহার, আগ্রাবাদের সাধারণ সম্পাদক সুশোভন চাকমা বলেন, পাহাড়ের নারীদের পণ্য বানিয়ে বিদেশে পাঠানোর বন্দোবস্ত করছে দালাল চক্র। অভাবের তাড়নায় অনেক মা-বাবা এই লোভে পা দিচ্ছে। এটি বন্ধে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা রাখতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে ‘চট্টগ্রামে বসবাসরত সচেতন জুম্ম সমাজ’ এর সমন্বয়ক কিকো দেওয়ান বলেন, এ পর্যন্ত পাঁচশর বেশি জুম্ম নারীকে চীনসহ বিভিন্ন দেশে পাচারের তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। অল্প বয়সী পাহাড়ি নারীদের চাকরি ও পড়াশোনার প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে ঢাকা নিয়ে আসা হয়।
এরপর পাচারচক্র বিদেশে যাওয়ার সুযোগ ও অনৈতিক প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ের নাটক মঞ্চস্থ করে। তারপর পাসপোর্ট-ভিসা প্রক্রিয়া শেষ করে বাইরে পাচার করা হয়। পরে সেখানে গিয়ে বিভিন্ন অনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হয়। পরে বাঁচার তাগিদে দেশে ফেরত আসতে চাইলে তাদের কাগজপত্র জব্দ, নির্যাতন এবং মারধর করা হয়।
কিকো দেওয়ান আরো বলেন, এই পাচারচক্রের হোতাদের সঙ্গে কয়েকজন পাহাড়িও জড়িত, যারা ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে রয়েছেন।
আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি, নারী পাচার বন্ধ এবং পাচারকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
অরুণ জয় চাকমার সঞ্চালনায় এ মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের চট্টগ্রাম নগর সভাপতি পিংকি চাকমা ও পাহাড়তলী স্বধর্ম রক্ষা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক উজ্জলময় চাকমা বক্তব্য দেন।