হিল ভয়েস, ১২ এপ্রিল ২০২৪, আন্তর্জাতিক প্রতিবেদক: ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় বৌদ্ধ-হিন্দু অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারতের অংশ হওয়া উচিত ছিল বলে অভিমত তুলে ধরেন আরএসএস নেতা ড. সুনিল দেওধর।
আজ ১২ এপ্রিল ২০২৪, দুপুর ২:০০ টায়, ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে লাজপথ নগর অডিটোরিয়ামে দিল্লি চাকমা স্টুডেন্ট ইউনিয়ন কর্তৃক আয়োজিত চাকমা আদিবাসীদের সর্ববৃহৎ ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব বিজু মেলার আলোচনা সভায় এই অভিমত ধরেন ড. সুনিল দেওধর।
দিল্লি চাকমা স্টুডেন্ট ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট মিলোনির চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত বিজু মেলার উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিস ক্যাম্পেয়েন গ্রুপের প্রেসিডেন্ট করুনা লঙ্কার ভিক্ষু। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আরএসএস নেতা ড. সুনীল দেওধর। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. জয় কুমার চাকমা, সাইনস্টিস, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিকেল রিসার্স। এছাড়াও ত্রিপুরা, অরুনাচল, মিজোরাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন সংগঠনের ৫০০ শতাধিক ব্যক্তি উক্ত বিজু মেলায় অংশগ্রহণ করে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আরএসএস নেতা ড. সুনীল দেওধর বলেন, ভারতবর্ষ একটি বৈচিত্র্যময়, ভাষা-সংস্কৃতির দেশ। এই দেশে বিভিন্ন জাতির মানুষ বসবাস করে। সুতরাং, সারা বছর বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন উৎসবে আমাদের ভারতবর্ষে মেতে থাকে। ভারতবর্ষে উৎসবের কোনো ভেদাভেদ নেই। আমরা সবাই মিলে সকল জাতির উৎসব উদযাপন করে থাকি। চাকমাদের প্রধান উৎসব বিজু মেলাতে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি নিজেকে গর্ববোধ মনে করছি।
তিনি আরো বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় বৌদ্ধ, হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চল পার্বত্য চট্টগ্রাম পাকিস্তানের অংশ হয়ে যায়। তারপর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমা জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি অন্যান্য জাতির উপরও নির্যাতন, নিপীড়ন চলমান রয়েছে। সেখান তাদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে বলে তার বক্তব্য তুলে ধরেন।
তিনি আরো যোগ করেন, ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই। এই দেশে সকল জনগোষ্ঠীদের মিলে আমাদের সুন্দর ভারতবর্ষ। চাকমারা আজকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উচ্চ পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করছে বলে তিনি প্রশংসা করেন। ভারত এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা সহ সকল জনগোষ্ঠীর সাথে সংযোগ রেখে নিজেদের অধিকার নিয়ে সচেষ্ট থাকতে হবে বলে তার বক্তব্য জোর দেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে করুনা লঙ্কার ভিক্ষু বলেন, চাকমাদের প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। এই উৎসব কেবল ভারতে নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমা জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি আরও বিভিন্ন জনগোষ্ঠী ভিন্ন নামে পালন করে থাকে।
তিনি বলেন, বিজু উৎসবের মধ্যে দিয়ে আমাদের সংস্কৃতি, রীতিনীতি টিকিয়ে আছে। সুদূর পার্বত্য চট্টগ্রামে থেকে ভারতবর্ষ আমাদের সংস্কৃতি ধারণ করতে হবে। এছাড়াও দু দেশের চাকমাসহ অন্যান্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের সাথে আমাদের ঐক্য ধরে রাখতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেখানকার শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক বিজু উৎসব বিলুপ্ত করার জন্যও নানা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে তার বক্তব্য রাখেন।
বিশেষ অতিথি ড. জয় কুমার চাকমা বলেন, চাকমাদের বিজু উৎসবটা সবচেয়ে বড় সামাজিক অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের মধ্যে ঐক্য আরও সুদৃঢ় করতে হবে। ড. চাকমা আরো বলেন, আমরা যেখানে থাকি না কেন নিজেদের সংস্কৃতি ধারণ করতে হবে, চাকমাদের রীতিনীতি চর্চা করতে হবে। তিনি বলেন, দিল্লিতে অবস্থানরত সকল চাকমাদের ঐক্য আরও সুদৃঢ় করে সামনে এগোতে হবে।
পরিশেষে, দিল্লি চাকমা স্টুডেন্ট ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট মিলোনির চাকমার সভাপতির বক্তব্য এবং পুরস্কার বিতরণীর মধ্যে দিয়ে বিজু মেলাটি সমাপ্তি হয়।
প্রতিবিছরের ন্যায় এ বছরও দিল্লি চাকমা স্টুডেন্ট ইউনিয়ন বিঝু মেলা আয়োজন করে এবং নানা ঐতিহ্যবাহী খেলা-ধুলা আয়োজন করে। বিজু মেলাটি বিকেল ২:০০ টার দিকে অনুষ্ঠিত হয় এবং সন্ধ্যা নাগাদ শেষ হয়।