জাতিসংঘে আদিবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার শক্তিশালীকরণের উপর জেএসএস প্রতিনিধি বক্তব্য

হিল ভয়েস, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) প্রতিনিধি, প্রীতি বি চাকমা, “আইটেম ৩: আদিবাসীদের অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রের প্রেক্ষাপটে আদিবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার শক্তিশালীকরণ: আদিবাসী যুবকদের কণ্ঠ জোরদারকরণ”-এর উপর বক্তব্য দিয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বিকালের অধিবেশনে প্রীতি বি চাকমার প্রদত্ত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয় যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তি পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের সম্বলিত স্বশাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের বিধান করা হয়। এলক্ষ্যে পার্বত্য চুক্তিতে এসব পরিষদের উপর সাধারণ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা, পুলিশ, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, বন ও পরিবেশ, শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নসহ সকল প্রকার উন্নয়ন কার্যক্রম ন্যস্ত করার বিধান করা হয়।

কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চুক্তির কিছু বিষয় বাস্তবায়ন করলেও স্বশাসিত সরকার ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট উল্লেখিত রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত অধিকার ও এখতিয়ার এখনো আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট ন্যস্ত করেনি। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক স্বশাসিত সরকার ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি।

আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠিত হলেও এসব পরিষদকে পাশ কাটিয়ে এখনো উল্লেখিত সাধারণ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা, পুলিশ, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, বন ও পরিবেশ, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নসহ রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত ক্ষমতা সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন প্রয়োগ করে চলেছে।

শুধু তাই নয়, পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক এখনো সকল অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করে জুম্মদের ভূমি পুনরুদ্ধার, আভ্যন্তরীণ উদ্বান্তু ও ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থীদের তাদের ভূমি প্রত্যর্পণ পূর্বক যথাযথ পুনর্বাসন, সেটেলার বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজনক পুনর্বাসন ইত্যাদি বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হয়নি।

পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত থাকায় আদিবাসী যুবক-যুবতী, পুরুষ, নারী, সকলেই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে রয়েছে। আদিবাসী জুম্ম যুবকরা তাদের অধিকারের জন্য সোচ্চার হতে চায়, কিন্তু পারে না। পার্বত্য চট্টগ্রাম হচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে পরিপূর্ণ এবং এই সামরিক বাহিনী যুবদের কণ্ঠ বন্ধ করার জন্য দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী তাদেরকে অপরাধী (ক্রিমিনালাইজ) হিসেবে আখ্যায়িত করছে।

এমতাবস্থায় আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ সম্বলিত পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রকৃত স্বশাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রর্তবনের লক্ষ্যে পার্বত্য চুক্তির যথাযথ, পূর্ণাঙ্গ ও দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার উদ্বুদ্ধ করতে পার্মানেন্ট ফোরামে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি বিরাজ করলে, তরুণ-তরুণীসহ আদিবাসীরা সম্প্রদায়ের উন্নতির জন্য বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারবে।

সোমবার (১৫ এপ্রিল) থেকে নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘের সদরদপ্তরে শুরু হয়েছে জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের ২৩তম অধিবেশন। ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এই অধিবেশন। গতকাল (মঙ্গলবার) এজেন্ডা আইটেম ৩-এর উপর আর্যশ্রী চাকমাও বক্তব্য প্রদান করেন।

More From Author

+ There are no comments

Add yours