হিল ভয়েস, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গত সোমবার (২২ এপ্রিল) বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের প্রতিনিধি টনি চিরান, জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের ২৩তম অধিবেশনে এজেন্ডা “আইটেম ৫(ঘ): আদিবাসীদের অধিকার বিষয়ক স্পেশাল র্যাপোর্টিউর এবং আদিবাসীদের অধিকার বিষয়ক এক্সপার্ট মেকানিজম এর সাথে মানবাধিকার সংলাপ; সাধারণ সুপারিশ নং ৩৯ এর বাস্তবায়ন সংক্রান্ত অগ্রগতির বার্ষিক পর্যালোচনা” এর উপর বক্তব্য রাখেন।
তার বিবৃতিতে টনি চিরান বলেন, বাংলাদেশের আদিবাসীরা নিয়মিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতল অঞ্চলের জেলায় উন্নয়ন অধিগ্রহণ, পর্যটন শিল্প, রাবার শিল্প এবং অতি সম্প্রতি সীমান্ত সড়ক প্রকল্পের নামে প্রায়ই আদিবাসীদের তাদের পূর্বপুরুষের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
আদিবাসীদের সম্মতি ছাড়াই প্রায়ই ঐতিহ্যবাহী জমি কেড়ে নেওয়া হয়। বাংলাদেশে আদিবাসীদের ভূমি দখলের দৃশ্য খুবই হতাশাজনক। সম্প্রতি আদিবাসীরা বাংলাদেশের সমতল ভূমি টাঙ্গাইলের মধুপুরে তাদের পৈতৃক ভূমি থেকে উচ্ছেদের জন্য রাষ্ট্রীয় সংস্থার হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন।
আদিবাসীদের স্বাধীন ও পূর্বাবহিত সম্মতি না নিয়েই সরকারের একটি গেজেটের মাধ্যমে আদিবাসীদের ৯,১৪৫ একর মূল ভূমি এবং ভূখন্ডকে সংরক্ষিত বন এবং তথাকথিত ইকো-ট্যুরিজম প্রকল্প হিসাবে ঘোষণা করা হচ্ছে। টেকসই জীবন, টেকসই বন ও জীবিকা প্রকল্প এবং সুফল প্রকল্পের জন্য সমতল অঞ্চলে ও পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটন কমপ্লেক্স এবং রেস্ট হাউস নির্মাণের জন্য রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো কর্তৃক অবৈধভাবে আদিবাসীদের জমি বেদখল করা হয়।
এছাড়াও, চা কোম্পানী এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলি বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল ও দিনাজপুরে আদিবাসীদের ভূমি জোরপূর্বক বেদখল করছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সক্রিয় কণ্ঠস্বরের কারণে মানবাধিকার সুরক্ষাকারীদের অপরাধীকরণ, মিথ্যা মামলা, নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং আটকের হুমকি দেওয়া হয়। সুতরাং, পরিস্থিতি অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এক্ষেত্রে ভূমি সংক্রান্ত বিরোধের কারণে বাংলাদেশে সংঘটিত যেকোনো ঘটনার জন্য আদিবাসী নারী ও কিশোরী মেয়েরা লক্ষ্যবস্তু হওয়া, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, হত্যার শিকার হয়।
তিনি এই চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদ জানান এবং বিচার দাবি করেন। সুতরাং, এই প্রেক্ষাপটে, তিনি জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামকে নিম্নলিখিত সুপারিশমালা তুলে ধরার আহ্বান জানান:
টনি চিরান বাংলাদেশ সরকারকে নারীদের বিরুদ্ধে সমস্ত মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং তথাকথিত উন্নয়ন প্রকল্প, যেমন, ইকো-ট্যুরিজম, ইকো-পার্ক, সংরক্ষিত বন, আদিবাসীদের ভূমি ও ভূখন্ডে আদিবাসীদের সম্মতি ছাড়া সামরিক ক্যাম্প বন্ধ করার আহ্বান জানান; এবং সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা গ্রহণের আহ্বান জানান।
এছাড়াও তিনি জাতিসংঘের সংস্থাগুলিকে প্রকৃত ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে এবং সদস্য রাষ্ট্রকে সুপারিশ প্রদানের জন্য দেশ সফর করার আহ্বান জানান।
সবশেষে, টনি চিরান এই সমস্ত অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য একটি কর্মকাঠামো এবং কর্মব্যবস্থার জন্য সুপারিশ করেন।
+ There are no comments
Add yours