হিল ভয়েস, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কানাডার সিএইচটি ইন্ডিজিনাস পিপলস কাউন্সিলের প্রতিনিধি অগাস্টিনা চাকমা সোমবার (২২ এপ্রিল) জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক পার্মানেন্ট ফোরাম-এর ২৩তম অধিবেশনে “আইটেম ৫(ডি): আদিবাসীদের অধিকার বিষয়ক স্পেশাল র্যাপোর্টিয়র ও আদিবাসীদের অধিকার সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কর্মব্যবস্থার সাথে মানবাধিকার সংলাপ; সাধারণ সুপারিশ নং ৩৯ বাস্তবায়নের অগ্রগতির বার্ষিক পর্যালোচনা”এর উপর বক্তৃতা দিয়েছেন।
অগাস্টিনা চাকমা তার বিবৃতিতে বলেছেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশুদের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে আমি গভীরভাবে দুঃখবোধ করি, যারা বাংলাদেশে অব্যাহতভাবে অবিচার ও সহিংসতার শিকার হচ্ছে। সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, আমাদের সমাজের এই অসহায় সদস্যদের জন্য পরিস্থিতি এখনও ভয়াবহ।
অবৈধভাবে বসতি স্থাপনকারী সেটেলার কর্তৃক আদিবাসী নারীরা প্রতিনিয়ত সহিংসতার শিকার হয়। শুধুমাত্র ২০২৩ সালের প্রতিবেদনে প্রকাশিত অনেকগুলি ঘটনা আমরা দেখতে পাই। দুর্ভাগ্যবশত, আদিবাসী হওয়ার কারণে সহিংসতার শিকার আদিবাসী নারীরা প্রায়শই ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে।
২০২৪ সালের এপ্রিলে, গর্ভবতী নারী সহ মোট ৫৪ জন নির্দোষ বম আদিবাসী ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে সামরিক বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার করা হয়। একইভাবে, ২০২৪ সালের মার্চ মাসে, ছয়জন আদিবাসী ম্রো নারী একজন সেটেলার কর্তৃক নির্মমভাবে লাঞ্ছিত হন, কর্তৃপক্ষ মামলাটি যথাযথভাবে বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছিল। ২৯শে জুন ২০২৩-এ, একজন ৩৫ বছর বয়সী জুম্ম নারী ঈদের সময় দুইজন বাঙালি সেটেলার কর্তৃক ধর্ষনের শিকার হন এবং ঐ একই দিন অন্য আরেকজন নারী ধর্ষনের শিকার হন।
এহেন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আদিবাসী নারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার মত অবস্থান না থাকার কারণে তারা আজ নিজ ভূমিতে নির্বাক ও প্রান্তিকতায় পর্যবসিত।
এই সমস্ত ঘটনাগুলো বাংলাদেশে আমাদের আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশুদের অধিকার রক্ষার জরুরি প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে। তাই, আমি বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নিম্নলিখিত সুপারিশগুলির নজর দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি:
১। সাধারণ সুপারিশ নং ৩৯ বহাল রাখা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশুদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
২। আদিবাসী নারীদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের উপর নজরদারি এবং রিপোর্টিংয়ে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া।
৩। দায়বদ্ধতা পরিপূরনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করা।
৪। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সাথে অর্থপূর্ণ নীতিগত সংলাপ এবং পরামর্শের সহায়তা প্রদান করা।
৫। নিয়মিত পরিদর্শনের জন্য, যেমন জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোটিয়র কর্তৃক প্রতি দুই বছর অন্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি মূল্যায়ন এবং আদিবাসী নারীদের অধিকারের জন্য তদ্বির করা।
৬। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে মোতায়েন করার আগে তাদের মানবাধিকার রেকর্ড কঠোরভাবে যাচাইয়ের দাবি করা।
অগাস্টিনা চাকমা প্রশ্ন তোলেন, যেখানে আমাদের সেনাবাহিনী কর্তৃক তাদের নিজের দেশের আদিবাসী নারীদের উপর যে অবিচার করা হয় তার প্রতি নিশ্চুপ থাকি, সেখানে আশা ও স্থিতিশীলতার প্রতীক হিসেবে আমরা কীভাবে সততার সাথে, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হিসাবে বিদেশে আরও বাংলাদেশী সৈন্য পাঠাতে পারি?
সাধারণ সুপারিশ নং ৩৯ আদিবাসী নারীদের জন্য আশার বাতিঘর হিসাবে কাজ করে, তবুও তাদের অধিকার নিয়মিতভাবে লঙ্ঘিত হয়, এবং তাদের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করা হয়।
আপনারা কল্পনা করুন আদিবাসী মায়েরা তাদের বাড়িঘর পোড়া, তাদের কন্যাদের উপর আক্রমণ, এবং সংঘর্ষের কারণে তাদের নিজের সম্প্রদায়গুলিকে বিচ্ছিন্ন হতে দেখে কিরুপ ভয় এবং হতাশা অনুভব করে।
সমাপনীতে অগাস্টিনা চাকমা বলেন, আমাদের অবশ্যই এর জবাব, জবাবদিহিতা এবং পদক্ষেপের দাবি জানাতে হবে। আমাদের নারীদের দেশে-বিদেশে শান্তিতে বসবাস করার অধিকার রয়েছে।
+ There are no comments
Add yours