হিল ভয়েস, ১১ মার্চ ২০২৪, বিশেষ প্রতিবেদক: খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষীছড়ি উপজেলার ২১৭নং জারুলছড়ি মৌজায় সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের নামে হেডম্যানের স্বাক্ষর সহ প্রত্যয়নপত্র জাল করে বহিরাগত একটি কোম্পানি কর্তৃক ১৭০০ একর ভূমি বেদখলের চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ করেছেন স্বয়ং ২১৭নং জারুলছড়ি মৌজার হেডম্যান মংসাইগ্য চৌধুরী। তিনি নিজে গত ৩ মার্চ ২০২৪ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর বরাবরে এব্যাপারে অভিযোগ দাখিল করে উক্ত ভূমি বেদখলের প্রক্রিয়া বাতিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। এছাড়া তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মং সাকের্লের চীফ, লক্ষীছড়ি সেনা জোনের জোন কম্যান্ডার, লক্ষীছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, লক্ষীছড়ি উপজেলার ২নং দুইল্যাতুলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, খাগড়াছড়ি হেডম্যান এসোসিয়েশনের সভাপতি, খাগড়াছড়ি কার্বারি এসোসিয়েশনের সভাপতি এবং সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড সদস্যের বরাবরেও আবেদনপত্রের অনুলিপি দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, CDTO-CRCCII-CCECC-ERECBL CONSORTIUM নামক একটি বহিরাগত কোম্পানি ২১৭নং জারুলছড়ি মৌজায় ১৭০০ একর পরিমাণ মৌজা ভূমিতে ২০০ মেঘাওয়াট (এসি) গ্রীড টাইড সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প স্থাপনের লক্ষে সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগে একটি প্রস্তাব দাখিল করে। প্রকল্পটির জন্য উক্ত জায়গা বরাদ্দ দিতে লক্ষীছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, লক্ষীছড়ির সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এর পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশও প্রেরণ করা হয়েছে।
এমনকি প্রকল্পের উদ্যোক্তাদের কর্তৃক প্রকল্পের জন্য উক্ত জায়গা ব্যবহার করলে মৌজা প্রধানের (হেডম্যান) কোনো আপত্তি/অভিযোগ নেই বলেও হেডম্যানের ভূয়া স্বাক্ষর দিয়ে একটি জাল প্রত্যয়নপত্র তৈরী করা হয়। ঐ প্রত্যয়নপত্রটি বিভিন্ন দপ্তরে প্রতারণামূলকভাবে ব্যবহার করা হয়। উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে মৌজা ভূমি ক্রয়-বিক্রয় বা বরাদ্দ পেতে হলে প্রথাগত আইন এবং পার্বত্য চুক্তি ও পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী হেডম্যানের সুপারিশ ও জেলা পরিষদের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে জালিয়াতি করে হেডম্যানের প্রত্যয়নপত্র তৈরী করা হলেও জেলা পরিষদের অনুমোদন নেয়ার কথা জানা যায়নি।
২১৭নং জারুলছড়ি মৌজার হেডম্যান মংসাইগ্য চৌধুরী তাঁর আবেদনপত্রে উল্লেখ করেন, CDTO-CRCCII-CCECC-ERECBL CONSORTIUM কর্তৃক লক্ষীছড়ি উপজেলায় ২১৭নং জারুলছড়ি মৌজায় ২০০ মেঘাওয়াট (এসি) গ্রীড টাইড সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের জন্য ১৭০০ একর ভূমি বরাদ্দ পাওয়ার নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। উক্ত প্রস্তাবনার সাথে আমার ২১৭নং জারুলছড়ি মৌজার প্যাড সীল যুক্ত আমার জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে ১২০০/১৩০০ একর ভূমি উল্লেখ পূর্বক একটি প্রত্যয়নপত্র নথির সাথে সংযুক্ত করে দেন। উক্ত প্রত্যয়নপত্রে স্মারক নম্বর লেখা হয়- ২১৭/১১/জারুলছড়ি, তারিখ: ১০-০৯-২০২৩খ্রি:। অথচ উক্ত বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। উক্ত প্রত্যয়নপত্রে ব্যবহৃত প্যাড, সীল ও স্বাক্ষর আমার নয়, এমনকি উক্ত প্রত্যয়নপত্রে যা কিছু লেখা আছে তা আমার লেখা নহে। উক্ত প্রত্যয়নপত্রটি সম্পূণরূপে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্টি করা হয়েছে।’
তিনি উক্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের অগ্রবর্তী করা ফাইল বাতিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানান।