হিল ভয়েস, ৪ মার্চ ২০২৪, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলাধীন লংগদু উপজেলায় সেনাবাহিনী মদদপুষ্ট সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীদের কর্তৃক স্থানীয় জুম্মদের কাছ থেকে জোরপূর্বকভাবে ব্যাপক চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ মার্চ ২০২৪ সকাল ১১ টার দিকে লংগদু উপজেলা সদরের তিনটিলা এলাকায় অবস্থিত ‘উপজেলা হেডম্যান এসোসিয়েশনের কার্যালয়’-এ উপজেলার প্রত্যেক জুম্ম গ্রামের মুরুব্বিদের ডেকে এনে তাদের সাথে চাঁদা সংগ্রহে নিয়োজিত সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীদের ৬ সশস্ত্র সদস্য এক সভার আয়োজন করে। এসময় সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীরা তাদের বিশেষ বাজেটের নামে উপজেলার সকল জুম্ম পরিবারকে পরিবার প্রতি ১০০০ (এক হাজার) টাকা হারে চাঁদা দিতে হবে বলে নির্দেশ জারি করে। সেই হিসেবে কোন গ্রামকে মোট কত টাকা ধার্য করা হয়েছে এবং গ্রামের কোন মুরুব্বির মাধ্যমে সেই চাঁদা তাদেরকে জমা দিতে হবে সেটাও জানিয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা।
জানা গেছে, সন্ত্রাসীরা করল্যাছড়ি গ্রামকে ২,৭০,০০০ টাকা, বামে আটরকছড়া গ্রামকে ২,৫০,০০০ টাকা, সোনাই গ্রামকে ২,৫০,০০০ টাকা, লংগদু বড়াদমকে ২,২০,০০০ টাকা, মহাজন পাড়াকে ১,১০,০০০ টাকা, মানিকজোড় ছড়াকে ১,১০,০০০ টাকা, তিনটিলা গ্রামকে ১,১০,০০০ টাকা, বাত্যাপাড়াকে ১,১০,০০০ টাকা, রাঙাপানি ছড়া গ্রামকে ২,১০,০০০ টাকা ধার্য করে। উপজেলার অন্যান্য গ্রামকেও এভাবে কমপক্ষে এক লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ টাকা ধার্য করা হয়।
আগামী ২৫ মার্চ ২০২৪ তারিখের মধ্যে প্রতিটি গ্রামের উপর নির্ধারিত উক্ত চাঁদা জমা দিবে হবে বলে সময় বেঁধে দেয় সন্ত্রাসীরা।
জানা গেছে, এসময় সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন লংগদু উপজেলার অর্থ বিভাগের পরিচালক জগদীশ চাকমা, সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের কমান্ডার মিল্টন চাকমা, ডাঙ্গাবাজার ও করল্যাছড়ি এলাকার চাঁদা কালেক্টর জীবন চাকমা ও সন্তু চাকমা এবং সংস্কারপন্থী যুব সমিতির সভাপতি ইন্টন চাকমা ও সম্পাদক সুগত চাকমা।
এদিকে সংস্কারপন্থীদের কর্তৃক উক্ত সভা ও চাঁদা ধার্য করার পর সাধারণ জুম্ম গ্রামবাসীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গ্রামবাসী জানান, গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের জন্য এক হাজার মানে এক লক্ষ টাকা। এক হাজার টাকা জমা করতেও তাদের অনেক হিমশিম খেতে হয়। তাছাড়া প্রায় ঘন ঘন সংস্কারপন্থীদেরকে তাদের চাঁদা দিতে হয়।
জানা গেছে, মাত্র মাস দুয়েক আগে, গত ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসেও প্রতিটি গ্রাম থেকে সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক সন্ত্রাসীদেরকে এক লাখ/ দেড়লাখ/ দুই লাখ করে চাঁদা দিতে হয়েছিল।
গ্রামবাসীরা জানান, এই ফাল্গুন-চৈত্র মাস গ্রামের মানুষের অভাব-অনটনের সময়। এসময়ে কাপ্তাই বাঁধের জলেভাসা জমি চাষের সময়। এসময়ে ধানের চারা রোপণ করে ফসল উৎপাদন করতে না পারলে তাদের সারা বছর অভাব-অনটনের মধ্যে কাটাতে হয়। কিন্তু এসময়ে তাদের এমন চাঁদা যেন গ্রামবাসীদের মাথায় পাথর ভাঙ্গার মতো হয়েছে। এটা গ্রামবাসীদের জন্য এক বিরাট ভোগান্তি তাতে কোন সন্দেহ নেই।