বিলাইছড়ি-জুরাছড়ির প্রত্যন্ত গ্রামে সেনাবাহিনী কর্তৃক জুমচাষে বাধা, গ্রামবাসীদের গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ, হুমকি

হিল ভয়েস, ১০ মার্চ ২০২৪, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলাধীন বিলাইছড়ি উপজেলা ও জুরাছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত গ্রাম গাছবাগান পাড়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক আদিবাসী জুম্মদের জুমচাষে বাধা এবং গ্রামবাসীদের গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া বিলাইছড়ির ফারুয়ায় সেনা সদস্যরা এক জুম্ম গ্রামবাসীকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে বলেও জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ মার্চ ২০২৪ বিকাল আনুমানিক ৩ টায় হেলিকপ্টার যোগে সেনাবাহিনীর জনৈক এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বিলাইছড়ি ও জুরাছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী গাছবাগান এলাকায় অবস্থিত গাছবাগান সেনা ক্যাম্পে সফরে যান। তবে সেদিনই বিকেলে আবার ওই সেনা কর্মকর্তা সেখান থেকে চলে যান।

উক্ত উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা আসার নাম করে গাছবাগান সেনা ক্যাম্পের সেনা সদস্যরা ৭ মার্চ থেকে ৯ মার্চ, তিনদিন যাবৎ গাছবাগান পাড়া গ্রামের সকল রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় এবং তাদের বড় সাহেবের সফর, যানবাহন চলবে না বলে তারা গ্রামবাসীদের জানায়। গাছবাগান সেনা ক্যাম্প বিলাইছড়ি সেনা জোনের অধীন একটি ক্যাম্প।

উক্ত সেনা কর্মকর্তা সফরের পরের দিন (৯ মার্চ) সকাল ৮ টার দিকে গাছবাগান সেনা ক্যাম্পের সুবেদার রঞ্জন চাকমার নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি দল গাড়িযোগে গাছবাগান পাড়া গ্রামে উপস্থিত হয়। এসময় সেনা সদস্যরা গ্রামের কার্বারিকে খোঁজ করেন। এসময় গ্রামের কার্বারি বাড়িতে না থাকায় সেনা সদস্যরা গ্রামের জনসাধারণকে একটি জায়গায় জড়ো করেন এবং উপস্থিত গ্রামবাসীদের গাছবাগান পাড়া ও এর পার্শবর্তী থুমপাড়া গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হবে বলে নির্দেশ দেন। এটা সফরকারী উক্ত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার নির্দেশ বলে জানান ক্যাম্পের সুবেদার রঞ্জন চাকমা।

এসময় সেনা সদস্যরা অতিদ্রুত গ্রাম ছেড়ে না গেলে গ্রামবাসী সবার অসুবিধা হবে বলে গ্রামবাসীদের হুমকি প্রদান করেন। এছাড়া সেনা সদস্যরা গাছবাগান পাড়া ও এর আশেপাশের এলাকায় কোনো জুম কাটা যাবে না, জুমে আগুন দেওয়া যাবে না বলেও তাদের নির্দেশের কথা গ্রামবাসীদের জানিয়ে দেন।

জানা গেছে, প্রত্যন্ত এইসব জুম্ম গ্রামবাসীদের অধিকাংশেরই অন্যতম প্রধান জীবিকার অবলম্বন হচ্ছে জুমচাষ। তাই ইতিমধ্যে তাদের অনেকেই জুমচাষের জন্য নির্ধারিত জায়গায় জঙ্গল পরিষ্কার করেছেন। এখন আগুন দিয়ে সেগুলি পোড়ানোর পালা। কিন্তু হঠাৎ সেনাবাহিনীর জুমচাষে বাধা দানের কারণে গ্রামবাসীদের মধ্যে এখন বিরাট উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।

অপরদিকে আরো জানা গেছে, গত ৮ মার্চ ২০২৪ দুপুর আনুমানিক ১ টার দিকে বিলাইছড়ির ফারুয়া ইউনিয়নে ফারুয়া সেনা সাবজোন থেকে ক্যাপ্টেন সিহাব এর নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একটি সেনাদল রয়াপাড়া ছড়া ত্রিপুরা পাড়ায় উপস্থিত হয় এবং সেখানে অবস্থিত ফাসিয়া ত্রিপুরা (৩২), পীং-রাজন ত্রিপুরা এর মুদির দোকানটি বন্ধ করার নির্দেশ দেন। সেসময় দোকানে ফাসিয়া ত্রিপুরা উপস্থিত ছিলেন না। দোকানে কমল চাকমা নামে এক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন সিহাব এসময় ফাসিয়া ত্রিপুরাকে ধরিয়ে দিতে না পারলে তাকে যেখানে পাওয়া যায় সেখানে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি প্রদান করেন।

More From Author