হিল ভয়েস, ৯ মার্চ ২০২৪, ঢাকা: গতকাল ৮ই মার্চ ২০২৪ রোজ শুক্রবার বিকাল ৩ঘটিকার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ হলের নরেশচন্দ্র সেমিনার কক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, মিরপুর থানা শাখার ৪র্থ কাউন্সিল সম্পন্ন হয়।
কাউন্সিল ও সম্মেলনে পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার তথ্য প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হ্লামংচিং মারমার সঞ্চালনায় জগদীশ চাকমার সভাপতিত্বে কাউন্সিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির স্টাফ সদস্য মেরিন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক থোয়াইক্যজাই চাক, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক অংশৈসিং মারমা, পিসিপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা এবং আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চ্যুং ইয়ং ম্রো।
অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, পিসিপি পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম ছাত্র সমাজের একমাত্র প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন যেটি এখনো অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদি কন্ঠসর হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন,আজ আমরা দেখতে পারছি সীমান্ত সড়কের ভয়াবহতা। আমরা দেখেছি রাস্তার আশেপাশের বাড়িগুলো উপড়ে ফেলা হচ্ছে।
অংশৈসিং মারমা বলেন, আমাদের পিসিপির বিস্তারিত ইতিহাস জানতে হবে। এই সংগঠনটির লক্ষ্য সম্পর্কে আমাদের সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। এই সংগঠন এমন সময়ে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল যখন পাহাড়ের অবস্থা চরম পর্যায়ে ছিল। সেসময়ে কিছু অধিকারকামী বুঝতে পেরেছিলেন যে এই সমস্যার সমাধান ব্যক্তিগতভাবে সম্ভব না। তাই তারা পিসিপি গঠন করেন। এমন সময় আসবে আমরা নিজেদের ভাষায় কথা বলতে পারবো না। নিজেদের পোশাক পরিধান পারবো না। সেরকম পরিস্থিতি যাতে দেখতে না হয় সে জন্য আমাদের এই শিক্ষিত সমাজকেই সবার আগে সামনে এগিয়ে আসতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম পূর্বপুরুষদের যে ত্যাগ, লড়াই সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের আরো শতগুনে শক্তিশালী হয়ে লড়াই করতে হবে। আর এই জন্যে আমাদের কর্মীদের অধ্যয়ন বাড়াতে হবে। জানতে হবে জেএসএসের ইতিহাস, এম এন লারমার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস।
বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চ্যুং ইয়ং ম্রো বলেন, আমাদের প্রায় সময় শুনতে হয় পাহাড়ীরা সন্ত্রাসী । কিন্তু আমরাই জানি কারা সন্ত্রাসী এবং কারা অধিকারকামী। আমাদের মনে রাখতে হবে এরকম সমস্যার সম্মুখীন শুধু আমাদেরকে হতে হয় না। সমতল আদিবাসীরাও এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আমাদের একসাথে মিলেমিশে এক হয়ে অধিকার আদায় করতে হবে।
পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক থোয়াইক্যজাই চাক বলেন, আমাদের প্রত্যেক কর্মীকে অত্যন্ত দক্ষ হতে হবে। কৌশলে আমাদের যেকোনো সমস্যা সমাধান করতে হবে। পাহাড়ে অনেক সন্ত্রাসী দলের চেহারা দেখা যাচ্ছে। যারা অধিকারের কথা বলে চাঁদাবাজি ,গুম অপহরণ সহ নানান সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত হচ্ছে। সংগঠনগুলোর কর্মকান্ডের দিকে তাকালে দেখতে পাই তারা নাকি পাহাড়ী মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে চাই। কিন্তু তারা শুরু থেকেই সরকার এবং রাষ্ট্রের কাছ থেকে অধিকার আদায় না করে জেএসএসএর নেতাকর্মীদের হত্যা করে চলেছে। এতে স্পষ্ট হয় যে তারা সরকার বা রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের অংশ ছাড়া আর কিছুই না। এতে আমাদের বিভ্রান্ত হতে নেই। এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ বিশ্বাস করে যে একমাত্র জেএসএসই পাহাড়িদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে পারে।তাই আমাদের সেই জনগণের বিশ্বাসকে শক্তিতে রুপান্তরিত করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
জেএসএস কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই বলেন, আমাদের কথা ছিলো ছেলে মেয়ে এক হয়ে পাহাড়ের অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করা। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজকের ছাত্র সমাজ সেখান থেকে অনেক দূরে। আমাদের নিজেদের এই সমস্যাগুলোকে আগে সমাধান করতে হবে। নাহলে আমাদের এই লড়াইয়ে জয় পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। এই আন্দোলন শুধু শোষকের বিরুদ্ধে না, এই লড়াই অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে।
জেএসএস কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আরেক স্টাফ সদস্য মেরিন চাকমা নবগঠিত কমিটির উদ্দেশ্যে তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, পিসিপির এই জাতীয় মুক্তির লড়াই সংগ্রাম কেমনে এগিয়ে নেওয়া যায় সেটা নিয়ে আমাদের আরো ভাবতে হবে। আরেকটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে আজ আমাদের চারিদিকে শত্রুর অভাব নেই। তারা সবসময় আমাদের লড়াইকে ব্যাহত করতে চাই। সেখান থেকেও আমাদের জিততে হবে।
সভা শেষে সুমেন চাকমাকে সভাপতি, নিলয় চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক এবং ভরত চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট মিরপুর কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান পিসিপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক নরেশ চাকমা।