হিল ভয়েস, ৫ মার্চ ২০২৪, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গত ৩ মার্চ ২০২৪ থাইল্যান্ডের চিয়াংমাইয়ে বাংলাদেশের আদিবাসীদের অধিকারের পক্ষে ওকালতিকারী একটি নেতৃস্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা ‘কাপেং ফাউন্ডেশন’, এশিয়ান ইনডিজেনাস পিপলস প্যাক্ট (এআইপিপি) কর্তৃক ‘সেন্টার্স অফ ডিফেন্ডার্স’ নামক এক মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। এই স্বীকৃতি বাংলাদেশে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারদের (আইপিএইচআরডি) উদ্দেশ্যকে রক্ষার ক্ষেত্রে সংগঠনটির অক্লান্ত পরিশ্রম এবং অটুট নিষ্ঠার কথা তুলে ধরে।
এআইপিপি কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানটি এই অঞ্চল জুড়ে আদিবাসী সম্প্রদায়ের অধিকার এবং মর্যাদা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ব্যক্তি এবং সংস্থাগুলির অসাধারণ অবদানকে উদযাপন করে। কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা পুরস্কারটি গ্রহণ করেন এবং তিনি কাপেং ফাউন্ডেশনের সদ্য প্রয়াত চেয়ারপার্সন শ্রী রবীন্দ্রনাথ সরেনকে এই পুরস্কারটি উৎসর্গ করেন।
ইউএন এক্সপার্ট মেকানিজম অন দ্য রাইটস অফ ইনডিজিনাস পিপলস (এমরিপ) এর চেয়ার ড. শেরিল লাইটফুট পল্লব চাকমার হাতে পুরস্কারটি তুলে দেন। এ অনুষ্ঠানে ইউএন পার্মানেন্ট ফোরাম অন ইনডিজিনাস ইস্যু’র (ইউএনপিএফআইআই) চেয়ারম্যান মি. দারিও মেজিয়া মন্টালভো, থাইল্যান্ডের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য মিঃ মানুপ ও মিঃ নুত্তাফুং এবং এআইপিপি-এর এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের আমন্ত্রিত সদস্য ও এশিয়ার ১৪টি দেশের আদিবাসী জনপ্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
মুলত এশিয়ার মানবাধিকার লঙ্ঘনের মূল কারণগুলিকে সনাক্ত করে সেসব সমস্যার সমাধানের জন্য আদিবাসীদের সংগঠনগুলির একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে আদিবাসীদের মানবাধিকার সুরক্ষা কর্মীদের সাহস জোগাতে এবং প্রতিশ্রুতিকে সম্মান দিতে ‘সেন্টার অফ ডিফেন্ডারর্স’ এই ধারণাটির উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এই উদ্যোগের লক্ষ্য হল আদিবাসীদের অপরাধীকরণের বিরুদ্ধে লড়াই করা, পরিবেশগত অবক্ষয় মোকাবেলা করা এবং জাতীয়, আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে তুলে ধরা। এআইআইপিপি কর্তৃক আয়োজিত ২০১০ সালে আদিবাসী পিপলস হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারস নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার সময় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই নেটওয়ার্ক এশিয়া জুড়ে আদিবাসী মানবাধিকারের জন্য সংহতি, সমন্বয় এবং সমর্থনের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসাবে কাজ করে।
২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কাপেং ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের আদিবাসীদের অধিকারের জন্য অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে চলেছে। খুমি শব্দ কাপেং এর অর্থ ‘অধিকার’ শব্দ থেকে এ সংগঠনটির নামকরণ করা হয়। এ মানবাধিকার সংগঠনটি তার উদ্যোগের মাধ্যমে আদিবাসী জনগণের মানবাধিকার সুরক্ষাকারীদের (আইপিএইচআরডি) প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা প্রদান করে, ডকুমেন্টেশন, আইনি সহায়তা এবং অ্যাডভোকেসির সুবিধা প্রদান করে।
উল্লেখ্য যে, কাপেং ফাউন্ডেশন পার্বত্য চট্টগ্রাম (সিএইচটি) এবং সমতলে অভিঘাত সৃষ্টিকারী সামরিকীকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের ফলে উদ্ভুত ভূমি বেদখলের মতো জটিল সমস্যাগুলিকে তুলে করে। এ পুরস্কারটি কেবল অতীতের অর্জনগুলিকে উদযাপন করে না উপরন্তু আদিবাসী অধিকারের যৌক্তিকতাকেও অধিকতর ত্বরান্বিত করে এবং সেই সাথে সামাজিক ন্যায়বিচারকে উৎসাহিত করে।
পুরস্কার গ্রহণের পর কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা বলেন, ‘কাপেং ফাউন্ডেশন আদিবাসীদের অধিকারের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। আদিবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার, ভূমি অধিকার এবং সামগ্রিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাবে। আপনাদের অব্যাহত সমর্থনের সাথে, আমরা একটি ভবিষ্যত তৈরি করার লক্ষ্য রাখি যেখানে আদিবাসী সম্প্রদায়গুলি এমন একটি বিশ্বে উন্নীত হবে যা তাদের অন্তর্নিহিত অধিকারকে সম্মান করে এবং মূল্য দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘গভীর শ্রদ্ধার সাথে, আমরা আজকের পুরস্কারটি উৎসর্গ করছি আমাদের প্রয়াত চেয়ারপার্সন, রবীন্দ্রনাথ সরেনকে, যিনি ১৩ জানুয়ারি ২০২৪-এ আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। একই সাথে, আমি সেই ব্যক্তি ও সংস্থাগুলিকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে চাই যারা এযাবতকাল ধরে কাপেং ফাউন্ডেশনকে গড়ে তুলতে এবং প্রতিষ্ঠা করতে অবদান রেখেছেন।’