হিল ভয়েস, ১৮ মার্চ ২০২৪, বান্দরবান: বান্দরবান জেলাধীন আলীদকম উপজেলার ১নং আলীকদম সদর ইউনিয়নে এক মুসলিম সেটেলার বাঙালি যুবকের হামলায় ছয় আদিবাসী ম্রো নারী ও শিশু নির্মমভাবে মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে গুরুতর জখম তিন নারীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
হামলাকারী সেটেলার যুবকের নাম- মোঃ শাহ উদ্দিন (২৫), পীং-মোঃ ফজল কবির, গ্রাম-নজুমিয়া সর্দার দক্ষিণ-পূর্ব পালং পাড়া, ৩নং ওয়ার্ড, ১নং সদর আলীকদম ইউনিয়ন।
ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে আলীকদম থানায় মামলা করতে গেলে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং সেটেলারদের মুরুব্বিদের সাথে আলোচনা করে সমাধান করার প্রস্তাব দেন।
মারধরের শিকার ৬ জুম্ম নারী ও শিশু হলেন- (১) ছংপা ম্রো (৩৬), স্বামী-ছাকনাই ম্রো; (২) লেংরুং ম্রো (২২), স্বামী-মেনপ্রে ম্রো; (৩) হিলিউ ম্রো (১৩), পীং-ছাকনাই ম্রো; (৪) বুরাও ম্রো (১৩), পীং-সুইলাপ্রু ম্রো; (৫) তুংটক ম্রো (৫০), স্বামী-রুইরেং ম্রো ও (৬) নংপাও ম্রো (১৯), স্বামী-খামচুম ম্রো। ভুক্তভোগীরা সবাই ১নং সদর আলীকদম ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের আমতলি সাতক্লাম ম্রো পাড়ার অধিবাসী।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, সকাল আনুমানিক ১০ টার দিকে উক্ত ছয় ম্রো নারী ও শিশু নিজেদের গ্রামের পার্শ্ববর্তী তৈনখাল এলাকার ঝিড়িতে ও জঙ্গলে শাক-সবজি, মাছ-চিংড়ি, শামুক ইত্যাদি তরকারি খুঁজতে যান। তরকারি খুঁজতে খুঁজতে এক পর্যায়ে তারা গুইসাপ ঝিড়ি মুখ এর নীচে এক স্থানে পৌঁছেন। এমন সময় হঠাৎ কোনো প্রকার উস্কানি বা কথাবর্তা ছাড়াই মোঃ শাহ উদ্দিন নামের সেটলার বাঙালি যুবকটি লাঠিসোটা নিয়ে জুম্ম নারী ও শিশুদের উপর হামলা শুরু করে।
ভুক্তভোগীরা জানান, ‘আমার জমির মাটি ভেঙে পড়বে, এখানে আসতে পারবে না, এখানে কেন আসছ’ বলেই আর কোনো কিছু না বলে মোঃ শাহ উদ্দিন আচমকা লাঠি দিয়ে তাদেরকে মারধর শুরু করে। মারতে মারতে কয়েকটা লাঠি ভেঙে যায়।
লাঠির আঘাতে বিশেষ করে ছংপা ম্রো (৩৬), লেংরুং ম্রো (২২) ও তুংটক ম্রো গুরুতরভাবে জখম হন। তাদের হাতে, পায়ে, কাঁধে মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন সৃষ্টি হয়। পরে তাদেরকে আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, ঘটনার পরপরই গ্রামের কার্বারি সুইসামং ম্রো’র নেতৃত্বে ভূক্তভোগীরা আলীকদম থানায় অভিযোগ করতে গেলে ঐসময় সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা (নাম জানা যায়নি) মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পুলিশ কর্মকর্তা কার্বারি ও ভুক্তভোগীদের বলেন যে, মামলা করলে টাকা খরচ হবে। আপনারা বরং অভিযুক্ত ব্যক্তির মুরুব্বিদের সাথে সামাজিকভাবে আলোচনা করে সমঝোতার চেষ্টা করেন।
+ There are no comments
Add yours