হিল ভয়েস, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বান্দরবান: সেনাসৃষ্ট কেএনএফ সন্ত্রাসীদের কর্তৃক বান্দরবান জেলাধীন রুমা উপজেলায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জুম্ম গ্রামবাসীদের উপর নিপীড়ন, নির্যাতন, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও রেজুক পাড়া নিবাসী উহ্লাচিং মারমাকে গুলি করার প্রতিবাদে আজ (১৪ ফেব্রুয়ারি) রুমা উপজেলা সদরে সর্বস্তরের জনগণের এক বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সকালে প্রথমে রুমা বাজারস্থ ২নং রুমা সদর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে রুমা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত শত শত জুম্ম নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি রুমা উপজেলা সদরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে রুমা হাসপাতাল ব্রিজে এসে সমাপ্ত হয় এবং সেখানে একটি মানববন্ধন ও গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়।
প্রতিবাদকারী বিক্ষুব্ধ জনগণ মিছিল করার সময় যোসাং লুসাই, পীং-দাংয়া লুসাই নামে এক ব্যক্তিকে মারধর করে মাথায় আহত করে। তার বাড়ি রুমা সদরের জাইঅন পাড়া এলাকায় বলে জানা গেছে।
‘সম্মিলিত সচেতন নাগরিক সমাজ, রুমা’ এর ব্যানারে মারমা, ম্রো, তঞ্চঙ্গ্যা, বম সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন বয়সের নারী ও পুরুষ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। এসময় অংশগ্রহণকারীরা পোস্টার ও প্ল্যাকার্ডে ‘বম পার্টির সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বন্ধ করতে হবে’, ‘উহ্লাচিং মারমার উপর গুলি কেন প্রশাসনের জবাব চাই’, ‘কেএনএফের অত্যাচার বন্ধ কর, করতে হবে’, ‘কেএনএফ সন্ত্রাসী, হুশিয়ার, সাবধান’, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে কেএনএফকে তাড়িয়ে দিন’, ‘Drive out KNF terrorists from CHT’ ইত্যাদি দাবি ও বক্তব্য প্রদর্শন করেন।
সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন রুমা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উহ্লাচিং মারমা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নুম্রাউ মারমা, ২নং রুমা সদর ইউপি চেয়ারম্যান শৈমং মারমা শৈবং, পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা, মারমা ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সভাপতি উথোয়াইচিং মারমা, সচেতন নাগরিক যুব সমাজের প্রতিনিধি অংচোওয়ং মারমা প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
রুমা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উহ্লাচিং মারমা বলেন, আমরা চাই সকল জাতিকে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে। কারোর উপর জোর-জুলুম করে নয়। তিনি রুমা উপজেলাতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হলে কেএনএফ এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর পাশাপাশি সর্বক্ষেত্রে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
রুমা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শৈমং মারমা শৈবং বলেন, কেএনএফ সন্ত্রাসীদের কর্তৃক পাহাড়ে বসবাসরত নিরীহ মানুষদের গুলি করা, হুমকি প্রদান, হয়রানি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড দিন দিন বেড়েই চলেছে। যার কারণে পাহাড়ের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারছে না। তাদের অত্যাচারে নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে ভয়ে পালিয়ে যেতে হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। রুমায় এখন কারোর জীবনের নিরাপত্তা নেই।
উল্লেখ্য, গতকাল ১৩ ফেব্রুয়ারি, ভোর ৬টার দিকে সেনাসৃষ্ট বম পার্টি খ্যাত কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সন্ত্রাসীদের ২৪ জনের একটি দল রুমা সদর ইউনিয়নের রেজুক মারমা পাড়া গ্রামে প্রবেশ করে উহ্লাচিং মারমা (৪০), পিতা-মংনাক মারমা নামে এক নিরীহ গ্রামবাসীকে গুলি করে। এতে উহ্লাচিং মারমার পেটে ও কোমরে গুলি লেগে তিনি গুরুতর আহত হন। এসময় সন্ত্রাসীরা খ্যাউ মারমা নামে আরও এক মারমা গ্রামবাসীর কাছ থেকে জোরপূর্বক ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।
আহত উহ্লাচিং মারমাকে প্রথমে রুমা উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে চট্টগ্রাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায় যে, সমাবেশ চলাকালীন একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা কেএনএফের স্বঘোষিত কর্ণেল সাংপা বম এর ফার্মেসী দোকান (সাং ফার্মেসী) ভাঙচুরের প্রচেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশের বাধা পেয়ে জনতা পিছু হটে। পরে সমাবেশ শেষে দুপুর ১২.৩০ টার সময় রুমার বম হোস্টেলের পার্শ্ববর্তী বমদের মোট ৪টি বাড়ি ও ২টি দোকানে হামলা ও ভাঙচুর করে উত্তেজিত জনতা। এসময় জৌসাং লুসাই (৬৫) নামে এক ব্যক্তি মাথায় আঘাত পেয়ে গুরুতর আহত হন। হামলা ও ভাঙচুরকৃত ৪টি বাড়ি হচ্ছে- রুমা উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান থাংখামলিয়ান বম, রেমসিয়াম লুসাই, জুলিয়ান লুসাই এবং লাল লিয়ানথাং লুসাই (৭০)-এর বাড়ি। দোকান ২টি হচ্ছে-জোমি রেস্টুরেন্ট (লুসাই) এবং পাড়ি কফিসপ (লুসাই)।
তৎপরবর্তী, দুপুর ১.৫৫ টায় সমাবেশ শেষে মিনিঝিড়ি পাড়া থেকে আগত জনতারা নিজ পাড়াতে ফেরার সময় ইডেন পাড়াতে কেএনএফ এর বাধার সম্মুখীন হয়। এসময় কেএনএফ সদস্যরা জনতাদেরকে বন্দুক তাক করে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পরে মিনিঝিড়ি পাড়াবাসীরা সেখান থেকে ফিরে আবার রুমা সদরে চলে যায়।
অপরদিকে সমাবেশ শেষে ফেরার পথে রুমা খালে কেএনএফ সদস্যরা ক্যাসিংমং মারমা(৪৭) নামে ক্যায়ানবোওয়া পাড়ার বাসিন্দা এক ব্যক্তিকে চর-থাপ্পড় মারে।