হিল ভয়েস, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, রাঙ্গামাটি: আজ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ রোজ রবিবার বাঘাইছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) এর শিজক কলেজ শাখার উদ্যোগে শিজক কলেজের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকৃত একাদশ শ্রেণির নবীন শিক্ষার্থীদের নবীন বরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পিসিপি’র শিজক কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক রুপেজ চাকমার সঞ্চালনায় এবং পিসিপি’র শিজক কলেজ শাখার সভাপতি সুকেন চাকমার সভাপতিত্বে নবীন বরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটি সহ-সভাপতি ডা. সুমতি রঞ্জন চাকমা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতির বাঘাইছড়ি থানা শাখার সাবেক সভাপতি প্রভাত কুমার চাকমা, শিজক কলেজের অধ্যক্ষ সুভাষ দত্ত চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির সুমেধ চাকমা, পিসিপি রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক চিবরন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির বাঘাইছড়ি থানা কমিটির সভাপতি লক্ষীমালা চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন, বাঘাইছড়ি থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জেসমিন চাকমা।
নবীন বরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন পিসিপি’র শিজক কলেজ শাখার সহ-সভাপতি বিপুল চাকমা।
অনুষ্ঠানে নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে অভিনন্দন পত্র পাঠ করেন শিজক কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থী হেলেন চাকমা এবং নবীন শিক্ষার্থীদের পুষ্পমাল্য দিয়ে বরণ করেন জ্যোৎস্না চাকমা ও গোপাল চাকমা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. সুমতি রঞ্জন চাকমা বলেন, ‘ছাত্র সমাজ হচ্ছে একটি জাতির শক্তি, সাহস, সর্বোপরি একটি জাতির স্বপ্ন।’
তিনি আরও বলেন, জুম্ম জাতির জাতীয় জাগরণের অগ্রদূত মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ও বর্তমান জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমারাও এক সময় তোমাদের মত ছাত্র ছিলেন। কিন্তু তাঁদের চিন্তাধারা শুধুমাত্র দেশের কোনো একটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়া বা সার্টিফিকেট অর্জন করা অথবা দেশের কোনো একটি উচ্চ প্রতিষ্ঠানে সরকারি চাকরি করে আয়েশের জীবন কাটিয়ে দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো না। তাঁদের চিন্তাধারা ছিলো অনেক উঁচুমানের। তাঁরা তোমাদের মতোই ছাত্রাবস্থায় জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু করেছিলেন। আমি মনে করি তোমাদেরও নিজেদের মেধা ও জ্ঞানকে জুম্ম জাতির বৃহত্তর স্বার্থে কাজে লাগানো উচিত।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুভাষ দত্ত চাকমা বলেন, আজকে যে একজন শিক্ষার্থী, সে ভবিষ্যতে দেশ ও জাতির হাল ধরবে, আমাদের সমাজের নেতৃত্ব দেবে। তাই নিজেকে এখন থেকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যেন আমার দ্বারা দেশ,জাতি ও সমাজ উপকৃত হয়, এগিয়ে চলার রসদ পায়।
তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তিতে অতিরিক্ত আসক্তির কারণে আমাদের প্রজন্মের অবস্থা দিন দিন অবনতি ঘটছে। তারা এখন প্রযুক্তিতে এতই আসক্ত যে পড়ালেখার গুরুত্বপূর্ণ সময়টাই সেখানে ব্যয় করে। অথচ এই সময়টাতে তাদের বেশি বেশি অধ্যয়ন করা দরকার। নিজেকে আগামীদিনের যেকোনো চেলেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করা দরকার। কিন্তু তারা সেটা করছে না। এক্ষেত্রে তিনি অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রভাত কুমার চাকমা বলেন, একটি জাতির সবচেয়ে প্রগতিশীল ও অগ্রগামী একটি অংশ হিসেবে ছাত্রসমাজের ভূমিকা বর্ণনাতীত। নিজেদের একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষায় প্রতিষ্ঠিত করে কীভাবে সমাজ ও জাতির উন্নয়ন করা যায় এবং জাতির ক্রান্তিকালে বা দুর্দিনে নিজেকে উৎসর্গ করা যায় সে চিন্তাভাবনাও এখন থেকে তোমাদের করা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, তোমাদের ভবিষ্যতের চিন্তাভাবনা করে সেই তরুণ অবস্থায় দীর্ঘ একটি স্বর্ণালি সময় আমরা নিঃস্বার্থভাবে বিলিয়ে দিয়ে সরকারের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে উপনীত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছি। আজকে সেই চুক্তিটাও সরকার অবাস্তবায়িত ও সম্পূর্ণ উপেক্ষিত অবস্থায় রেখে দিয়েছে। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তবতা বলছে এটি বাস্তবায়ন হওয়া উচিত। কিন্তু হচ্ছে না। আমাদেরও আর সেই আগের মত জীবন-যৌবন নেই। তোমাদের উচিত হবে মানুষের মত হয়ে আমাদের তথা জাতির সেই ঐতিহাসিক দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়া। চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া।
আরও বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক চিবরন চাকমা বলেন, শুধুমাত্র সার্টিফিকেট অর্জনই ছাত্রজীবনের মূখ্য উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়। একটি শিক্ষার্থীর প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া।
তিনি আরও বলেন, ছাত্র সমাজকে শুধুমাত্র একাডেমিক পড়াশোনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। এই গন্ডি পেড়িয়ে আমাদের আরও অন্যান্য বিষয়ে পড়াশোনা করতে হবে, বড়মাপের চিন্তাভাবনা করতে হবে। এবং পাহাড়ি শিক্ষার্থী হওয়ায় তোমাদের মধ্যে যে একটি জাতির প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে সেই দায়বদ্ধতা থেকে জুম্ম জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই সংগ্রামে, চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে অধিকতরভাবে সামিল হতে হবে।