হিল ভয়েস, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, রাঙ্গামাটি: বাঘাইছড়িতে সেনাবাহিনী কর্তৃক সীমান্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত জুম্মদের আন্দোলন ও ক্ষতিপূরণের দাবির প্রেক্ষিতে একাধিকবার ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলেও সম্প্রতি সেনাবাহিনীর এক মেজর কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন। সেনাবাহিনীর এমন ঘোষণায় ক্ষতিগ্রস্ত জুম্ম গ্রামবাসীদের মধ্যে ব্যাপক হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। গ্রামবাসীরা সেনাবাহিনীর এমন আচরণকে হয়রানিমূলক এবং তাদের অধিকার নিয়ে টালবাহানা বলে মনে করছে।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ উক্ত সীমান্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজের প্রকল্প কর্মকর্তা বিএ-১০০৬৯ মেজর মোঃ শামীম সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের তিনজন প্রতিনিধি ও স্থানীয় ইউপি সদস্যকে কচুইছড়ি সেনা ক্যাম্পে ডেকে ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার উক্ত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন বলে স্থানীয় সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। এমনকি ওই সেনা কর্মকর্তা গ্রামবাসীদের ক্ষতিপূরণের দাবিকে ভূয়া বলেও উল্লেখ করেন বলে জানা গেছে।
ক্ষতিগ্রস্তদের তিনজন প্রতিনিধি হলেন- প্রিয় বিকাশ চাকমা, ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার, বাঘাইছড়ি ইউনিয়ন; সুগত চাকমা, ১নং ওয়ার্ড মেম্বার, সারোয়াতলী ইউনিয়ন ও নিরূপম চাকমা, সাবেক মেম্বার, ৮নং ওয়ার্ড, বাঘাইছড়ি ইউনিয়ন।
জানা গেছে, বর্তমানে সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্মাণাধীন বাঘাইছড়ির কজোইছড়ি মুখ থেকে মাঝিপাড়া পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৩০ ফুট প্রশস্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজের ফলে ২২২টি জুম্ম পরিবার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এতে গ্রামবাসীদের বাড়িঘর, দোকান সহ বহু মূল্যবান সেগুন, আগর ও বিভিন্ন ফলজ বাগান ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীরা তাদের সম্মতি ব্যতিরেকে এবং তাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে উক্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের প্রতিবাদে অনেকবার বিক্ষোভ প্রদর্শন, মিছিল ও সমাবেশ করেন। পাশাপাশি, তারা সেনাবাহিনী, বিজিবি ও উপজেলা প্রশাসনের নিকট যথাযথ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করার দাবি জানান।
গ্রামবাসীরা জানান, তাদের আন্দোলন ও দাবির প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষতির পরিমাণসহ ক্ষতিগ্রস্তদের একটি তালিকা চাওয়া হয়। গ্রামবাসীরা ক্ষতিগ্রস্তদের একটি তালিকাসহ ক্ষতিপূরণের দাবিতে গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ সেনাবাহিনীর জনৈক ওয়ারেন্ট অফিসারের নিকট আবেদন পেশ করেন। এরপর একাধিকবার গ্রামবাসীরা সেনাবাহিনীর স্থানীয় কর্মকর্তাদের যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে সেনা কর্মকর্তারা বরাদ্দ আসেনি বলে জানায়। এভাবে প্রায় একবছর চলে যায়।
কিন্তু সর্বশেষ সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজের প্রকল্প কর্মকর্তা বিএ-১০০৬৯ মেজর মোঃ শামীম সরকার গ্রামবাসীদের জানিয়ে দেন যে, ক্ষয়ক্ষতির জন্য গ্রামবাসীদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না। মেজর মোঃ শামীম সরকার এও বলেন, তোমাদের (গ্রামবাসীদের) তালিকা ও ক্ষয়ক্ষতির কাগজপত্র ভূয়া, কাজেই কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে ন। মেজর মোঃ শামীমের এমন কথাবার্তায় জনগণের মধ্যে ব্যাপক হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক গ্রামবাসী।
উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই ২০২২ সকাল ১০:০০ টায় ২৭ বিজিবি মারিশ্যা জোনের জোন কম্যান্ডার লেঃ কর্নেল মোঃ শরিফুল আবেদ (এসজিপি) নিজে এসে বাঘাইছড়ির উগলছড়ি এলাকার আর্য্যপুর দোকানের রাস্তা মুখ থেকে মাঝিপাড়া পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সীমান্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ উদ্বোধন করেন।
ইতোমধ্যে উগলছড়ি এলাকার আর্য্যপুর দোকানের রাস্তা মুখ থেকে কজোইছড়ি মুখ পর্যন্ত আনুমানিক ৪ কিলোমিটার দুরত্বের সড়ক নির্মাণের ফলে কমপক্ষে ৫৬ পরিবার জুম্ম গ্রামবাসী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ব্যাপক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তাদের ক্ষতিপূরণের দাবি আংশিকভাবে মেনে নেওয়া হলেও এপর্যন্ত প্রতিশ্রুতি ও ক্ষয়ক্ষতি মোতাবেক তাদেরও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক মুরুব্বি।
অপরদিকে, আরও ২২২ পরিবার গ্রামবাসীর কোনো প্রকার ক্ষতিপূরণ তো দেওয়াই হয়নি, উপরন্তু ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, সীমান্ত সড়ক (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা) নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে এই রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। প্রকল্পের নথি অনুসারে উক্ত সীমান্ত সড়কটি ৩১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য হবে। উক্ত সীমান্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে এই রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।