হিল ভয়েস, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪: আজ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে বিকাল ৩:৩০ ঘটিকায় সম্প্রতি খাগড়াছড়ির মহালছড়ি ইউনিয়নের চৌংড়াছড়িতে দুই সেটেলার বাঙালি কর্তৃক এক আদিবাসী জুম্ম নারীকে ধর্ষণচেষ্টার প্রতিবাদে ও ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে রাঙ্গামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) এর রাঙ্গামাটি শহর শাখার উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মানববন্ধনে পিসিপি’র রাঙ্গামাটি শহর শাখার সাধারণ সম্পাদক সুরেশ চাকমার সঞ্চালনায় এবং সভাপতি ম্যাগলিন চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পিসিপি, হিল উইমেন্স ফেডারেশন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির নেতৃবৃন্দ।
স্বাগত বক্তব্যে পিসিপি রাঙ্গামাটি শহর শাখার তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুপ্রিয় চাকমা বলেন, আমাদের দেশে নারী সহিংসতার বিরুদ্ধে বিশেষ আইন থাকলেও আইনের যথাযথ কার্যকর আমরা দেখতে পাই না। ধর্ষণ পরবর্তী ধর্ষককে যদি মৃত্যুদন্ড দেয়া হতো তাহলে চৌংড়াছড়িতে যে ঘটনা সংঘটিত হয়েছে সেরকম ঘটনা পুনরায় ঘটতো না। জুম্ম নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে প্রশাসনের আরো কঠোর হতে হবে।
সংহতি বক্তব্যে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক চারুলতা তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু আইন রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম নারীদের উপর ধর্ষণ ও তার পরবর্তী হত্যা চেষ্টা ঘটনায় আসামিদের যথাযথ বিচার প্রদান করা হয় না। এদেশের আইনানুযায়ী অনতিবিলম্বে ধর্ষণের চেষ্টাকারীদের, ধর্ষকদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।
পিসিপি’র জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক টিকেল চাকমা বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি বর্তমানে পাহাড়ে এক বিশেষ ধরনের শাসনব্যবস্থা চলমান রয়েছে। ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটাতে সেটেলার বাঙালিরা সাহস কীভাবে পায় এটি প্রশ্ন থেকে যায়। প্রশাসন এধরনের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না করে উল্টো জুম্মদের হুমকি প্রদান করে রায় দিয়ে দেয়। জুম্ম নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে এধরনের ঘটনার প্রতিবাদে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে এবং সেই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারের এরূপ কর্মকান্ড প্রতিহত করতে হবে।
পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক থোয়াইক্যজাই চাক বলেন, ধর্ষণের মতো ঘটনার আসামীদের গ্রেপ্তারের পর পর্যাপ্ত শাস্তি না হওয়ার কারণে প্রতিনিয়ত এরকম ঘটনা ঘটে। ধর্ষকদের বেঁচে থাকার অধিকার থাকতে পারে না, ধর্ষক ধর্ষকই। তাদের আইনের আওতায় না আনলে খাগড়াছড়ির চৌংড়াছড়িতে যে ঘটনা ঘটেছে সেরকম ন্যাক্কারজনক ঘটনা আমরা আবারো দেখতে পাবো। এদেশের সকল জাতিসত্তার প্রতি আহ্বান থাকবে ধর্ষকদের প্রতি যেন কোন ধরনের সহানুভূতি দেখানো না হয়।
তিন পার্বত্য জেলার সকল জুম্ম মা-বোন ও তরুণ ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, আমাদেরকে সোচ্চার হতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে যেখানে ঘটনা ঘটুক না কেন তার প্রতিবাদে সকলকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। যেকোনো ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে।
সংহতি বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা বলেন, আমরা যদি পার্বত্য জেলাগুলোতে তাকিয়ে দেখি, ধর্ষণের মতো ঘটনা আকস্মিক কোন ঘটনা নয়। এটা খুবই দুঃখের সাথে বলতে হয় যে, সেসব ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হয় না। কোনো সভা-সম্মেলনে যখন আদিবাসীদের কথা চলে আসে তখন একটি শ্রেণি জেগে উঠে তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যেতে শুরু করে।
তিনি জুম্ম নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বিধান অনুযায়ী যে বিশেষ শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করার কথা তা অতিদ্রুত কার্যকর করার জোর দাবি জানান।
সভাপতির বক্তব্যে পিসিপি রাঙ্গামাটি শহর শাখার সভাপতি ম্যাগলিন চাকমা বলেন, আমাদের খুবই দুঃখের সাথে বলতে হয়, স্বাধীন বাংলাদেশ ৫৩ বছরে পদার্পন করেও আমরা বর্তমানে ধর্ষণের মতো ঘটনা দেখতে পাচ্ছি। স্বাধীনতার আগে পাকিস্তানিদের দ্বারা এদেশের নারীদের যে ধর্ষণের ঘটনা দেখতে পেয়েছি ঠিক তেমনি আমরা আজকেও দেখতে পাচ্ছি। আজ আমাদের নারীদের নিরাপত্তা নেই। কুয়ো থেকে পানি আনতে গিয়েও তাদের ধর্ষণের চেষ্টার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে।
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের মান-সম্মান, আত্মরক্ষা ও জুম্ম নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নে সরকারের নিকট দাবি জানান।