হিল ভয়েস, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪: আজ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ খ্রি. খাগড়াছড়ির চৌংড়াছড়িতে দুইজন সেটেলার বাঙালি কর্তৃক আদিবাসী নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) রসায়ন বিভাগের এক শিক্ষক কর্তৃক এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের চেষ্টার প্রতিবাদে এবং ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের চবি সংসদের উদ্যোগে এক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক অন্বেষ চাকমা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের চবি সংসদের শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক সুদীপ্ত চাকমা, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের চবি শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক মংচে চাকমা, পিসিপির চবি ২নং গেইট শাখার সভাপতি সুমন চাকমা, ছাত্র ইউনিয়নের চবি সংসদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সোহেল রানা, ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরামের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সদস্য বিমল ত্রিপুরা।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইফাজ উদ্দিন আহমেদ ইমুর সঞ্চালনায় সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি চবি শাখার সদস্য অপূর্ব চাকমা, এবং সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পিসিপির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্তর চাকমা।
অন্বেষ চাকমা বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্মদের মুক্তির সনদ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ায় জননিরাপত্তা ক্রমশ বিঘ্নিত হচ্ছে। যার ফলে নারী নির্যাতন,ধর্ষণের শিকারের মতো ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত৷ যে বিশ্ববিদ্যালয় মুক্ত জ্ঞান চর্চার জায়গা হওয়ার কথা সেইখানেও শিক্ষকদের কর্তৃক শিক্ষার্থীদের ধর্ষণের চেষ্টার মতো নেক্কারজনক ঘটনা ঘটছে তার তীব্র নিন্দা জানাই এবং ধর্ষণের চেষ্টাকারীদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তির দাবী জানাই।”
সুদীপ্ত চাকমা বলেন, “স্বাধীনতার পরেও যদি দেশের জনগণের উপর নাগরিক নিরাপত্তা না থাকে তবে এই স্বাধীনতার মূল্য কোথায়। আশির দশকে পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক সেটেলার অনুপ্রবেশ করে সাম্প্রদায়িক বীজ বপন করা হয়েছে। যার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত আদিবাসী নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। চবিতে একজন শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টার প্রতিবাদে দ্রুত নারী নিরাপত্তা সেল কার্যকর করে বিচারের ব্যবস্থার দাবী জানাই।”
মংচে চাকমা বলেন, “শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু রেখেছে। নারীদের নিরাপত্তা নেই, নারী অধিকার নিয়ে নারীদের আরও প্রতিবাদী ভূমিকা রাখতে হবে। খাগড়াছড়িতে দুইজন সেটেলার কর্তৃক ধর্ষণের চেষ্টাকারীদের সুষ্ঠু বিচারের দাবী জানাই।
সুমন চাকমা বলেন, “সম্প্রতি খাগড়াছড়ির চৌংড়াছড়িতে এক আদিবাসী নারী ধর্ষণের চেষ্টা এসকল ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন নিত্যদিনের। শাসকগোষ্ঠী বিচারহীনতা পরিস্থিতি জিইয়ে রেখে সেখানে সেটেলারদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবী জানাই।
বিমল ত্রিপুরা বলেন, “স্বাধীনতার পরেও দেশে নাগরিক নিরাপত্তা নেই। আদিবাসী নারীদের উপর এহেন ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। নারী সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের উপর নিপীড়ন ও অধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে।”
সোহেল রানা বলেন,”পাহাড় এবং সমতলে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। পাহাড়ের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে স্বাক্ষরিত চুক্তি বাস্তবায়ন হলে এধরনের ঘটনা সংঘটিত হতো না। ধর্ষণের চেষ্টাকারীদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তির দাবী জানাই।”
স্বাগত বক্তব্যে অপূর্ব চাকমা বলেন, “পাহাড়ে শুধু সেটেলার নয় নিরাপত্তাবাহিনী কর্তৃকও জুম্ম নারী ধর্ষণের শিকার হওয়ার বহু ঘটনা রয়েছে। অপরাধীদের বিচারহীনতা ও শাসনব্যবস্থার দূর্বলতার কারণে এসকল ঘটনা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। চুক্তির ২৬ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ায় পাহাড়ে অশান্তি সাধারণ জনগণের নিরাপত্তাহীনতা বেড়েই চলেছে।”
সভাপতির বক্তব্যে অন্তর চাকমা বলেন, “স্বাধীন স্বার্বভৌম দেশে এধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনার ধিক্কার জানাই। ২৬ বছরেও পার্বত্য চুক্তির অবাস্তবায়নের ফলে পাহাড়ের রাজনৈতিক সমস্যা দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে। অবিলম্বে পার্বত্য চুক্তির যথাযথ ও দ্রুত বাস্তবায়নের দাবী জানাই।
সভাপতির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশটি শেষ হয় এবং এরপর বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি শহীদ মিনার থেকে শুরু হয় প্রশাসনিক ভবন প্রদক্ষিন করে শদীদ মিনারে এসে শেষ হয়।