হিল ভয়েস, ১২ জানুয়ারি ২০২৪, বিশেষ প্রতিবেদক: গতকাল (১১ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বান্দরবান পার্বত্য জেলার রুমা-রোয়াংছড়ি সড়কের পাশে বালু পাহাড় নামক স্থানে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর বাংকার ধ্বংস করে দিয়েছে বলে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে যে সংবাদ প্রচার করেছে তা সম্পূর্ণ সাজানো নাটক বলে জানিয়েছে স্থানীয় একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র।
সূত্রগুলোর মতে, সেনাবাহিনী আগে থেকে কেএনএফের সন্ত্রাসীদের সাথে কথা বলেই ওই পরিত্যক্ত বাংকারে হামলা চালিয়েছে এবং কেএনএফের সন্ত্রাসীদের ঐ বাংকার থেকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে।
সূত্রগুলো জানায়, সেনাবাহিনী ও ডিজিএফআইয়ের মধ্যস্থতায় শান্তি কমিটির সাথে কেএনএফের সর্বশেষ বৈঠকের পরপরই এলাকায় কেএনএফের সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়।
বিশেষ করে সাম্প্রতিককালে সেনাবাহিনীর নাকের ডগায় কেএনএফ সন্ত্রাসীদের কর্তৃক চাঁদাবাজি, ছিনতাই, গ্রামবাসীদের মারধর সহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় এলাকার বম, লুসাই ও পাংখোয়সহ অন্যান্য জুম্ম জনগোষ্ঠী অতীষ্ট হয়ে ওঠে এবং তাদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
সূত্রগুলোর মতে, সেনাবাহিনী কেএনএফকে আড়াল করতে এবং নিজেদের কৃতিত্ব দেখাতে কেএনএফের পরিত্যক্ত বাংকারে ওই তথাকথিত হামলা চালিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বম সম্প্রদায়ের এক অধিকার কর্মী জানান, গত প্রায় ৩ মাস ধরে কেএনএফ সন্ত্রাসীদের ১৪-১৫ জনের একটি সশস্ত্র দল রুমা উপজেলার ১নং পাইন্দু ইউনিয়নের জুরফরং বম পাড়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থান করে আসছিল। তাদের অবস্থানের কারণে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকরা তাদের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন। তাছাড়া এলাকাবাসীদের নিয়মিতভাবে কেএনএফের দলটিকে চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছে।
জুরফরং পাড়া ও পার্শ্ববর্তী বেথেল বম পাড়ার জনগণ এই সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মী অবস্থায় রয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, এই গ্রামের জনগণ না পারছে বলতে, না পারছে সইতে।
তিনি বলেন, বর্তমানে কেএনএফের সশস্ত্র সদস্যদের হেডকোয়ার্টার্স রয়েছে ১নং পাইন্দু ইউনিয়নের মুননোয়াম পাড়া গ্রামে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী মুনলাই পাড়ার উপরে আমবাগানে ৯ জনের একটি দল রয়েছে।
তিনি জানান, জুরফরং বম পাড়ার কেএনএফের সশস্ত্র দলটি থেকে একটি অংশ প্রায়ই বালু পাহাড়ে তাদের কথিত অস্থায়ী বাংকারে গিয়ে অবস্থান করে এবং সেখান থেকে চাঁদা উত্তোলনসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কাজ পরিচালনা করে। গতকাল সেনবাহিনীর একটি দল বালু পাহাড়ের ঐ বাংকারে গিয়ে কথিত হামলা চালায়।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে কেএনএফের একটি সশস্ত্র দল বালু পাহাড়ে অবস্থান নিয়ে রুমা-রোয়াংছড়ি সড়ক সহ আশেপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি ও ছিনতাই শুরু করে। নিরাপত্তা বাহিনীর গোচরেই তারা একের পর এক সন্ত্রাসী কাজ চালায়।
সূত্রগুলো জানায়, গত ৯ জানুয়ারি ২০২৪ স্বয়ং সেনাবাহিনীর একটি দল বালু পাহাড়ে গিয়ে কেএনএফের সাথে কথা বলে কেএনএফ সশস্ত্র সদস্যদের জুরফরং বম পাড়ায় নিরাপদে সরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। পরদিন (১০ জানুয়ারি) সেনাবাহিনীর একটি দল সকাল ৯টা থেকে ১০টার দিকে রোনিন পাড়া ও পাইনখ্যং পাড়ার মধ্যবর্তী টেবিল পাহাড় থেকে থেমে থেমে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। এতে আশেপাশের এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।
এর পরদিনই সেনাবাহিনী বালু পাহাড়ে কেএনএফের বাংকার ধ্বংস করে দিয়েছে বলে প্রচার শুরু করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বম জনগোষ্ঠীর এক মুরুব্বি বলেন, সেনাবাহিনীর এসব কর্মকান্ড হাস্যকর এবং নাটক ছাড়া কিছু নয়।