হিল ভয়েস, ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গতকাল কানাডা প্রবাসী পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন সিএইচটি ইন্ডিজেনাস পিপলস কাউন্সিল অব কানাডা সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি জেলার জুরাছড়িতে সেটেলার বাঙালি কর্তৃক জুম্মদের ভূমি বেদখলের চেষ্টা এবং সেটেলারদের পক্ষাবলম্বনকারী সেনাবাহিনী কর্তৃক জুম্মদের নির্যাতনের বিষয়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা পরিচালনা বিভাগে এক চিঠি দিয়েছে।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা পরিচালনা বিভাগের আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল মি: জ্যাঁ পিয়েরে ল্যাক্রইক্স এর নিকট লিখিত এবং সংগঠনটির সভাপতি প্রীতি চাকমা স্বাক্ষরিত এই চিঠিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লংঘনকারী সেনা সদস্যদের জাতিসংঘের শান্তিমিশনে অন্তর্ভুক্ত না করার আবেদন জানানো হয়েছে।
জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভোলকার তুর্ক এর বরাবরেও চিঠির অনুলিপি প্রেরণ করা হয়েছে।
চিঠিতে অভিযুক্ত মানবাধিকার লংঘনকারী সেনা কর্মকর্তারা হলেন- ১. ক্যাপ্টেন মোশাররফ, ক্যাম্প কমান্ডার, যক্ষাবাজার সেনা ক্যাম্প, ২ বীর, জুরাছড়ি ও ২. লেঃ কর্নেল জুলফিকলি আরমান বিখ্যাত, জোন কমান্ডার, বনযোগীছড়া সেনা জোন, ২ বীর, জুরাছড়ি।
সেনাবাহিনীকে সহযোগিতাকারী মুসলিম বাঙালি সেটেলাররা হলেন- ১. মোঃ সিরাজ (৩২), দিনমজুর ও খোলা তেল বিক্রেতা; ২. মোঃ সোহেল (৩০), কাঠমিস্ত্রী; ৩. মিঠুন (২৭), চায়ের দোকানদার; ৪. মোঃ ফয়সাল (২৯), কাপড়ের দোকানদার ও ৫. অজ্ঞাতনামা।
চিঠিতে ঘটনার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, জুরাছড়ি উপজেলা সদরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে একজন আদিবাসীর প্রায় ০.২০ একর ভূমি রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বসতিদানকৃত কয়েকজন সেটেলার উক্ত জায়গাটি বেদখলের চেষ্টা করে। তাদের এই আদিবাসীদের ভূমি বেদখলের চেষ্টা পার্বত্য চট্টগ্রামে এক নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। হিমায়ন চাকমার মালিকানাধীন ০.২০ একর পরিমাণ ঐ জায়গাটি সেটেলাররা তাদের নিজেদের জায়গা বলে দাবি করে জায়গাটির চারিদিকে খুঁটি পুঁতলে, তা জানার পরপরই হিমায়ন চাকমা একদল আদিবাসী গ্রামবাসী নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এতে দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে আদিবাসীরা পোঁতা খুঁটিগুলো উপড়ে ফেলে। এর পরপরই সেটেলাররা পার্শ্ববর্তী সেনা ক্যাম্পে গিয়ে সহযোগিতা চায়। যক্ষাবাজার সেনা ক্যাম্প হতে ক্যাপ্টেন মোশাররফের নেতৃত্বে একদল সেনা সদস্য ঘটনাস্থলে যায়। কয়েক মিনিট পর বনযোগীছড়া সেনা জোনের জোন কমান্ডার লেঃ কর্নেল জুলফিকলি আরমান বিখ্যাত, পিএসসি-ও সেখানে উপস্থিত হন। উভয়পক্ষের সাথে কথা বলার পর সেনাবাহিনী ৫ আদিবাসী ব্যক্তিকে আটক করেন এবং ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও ভয়ানকভাবে মারধর করেন এবং চিকিৎসার জন্য ওই ৫ আদিবাসীকে হাসপাতালে ভর্তি করান।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, আটককৃত আদিবাসীদের পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। বেদনার বিষয় যে, মুসলিম সেটেলাররা যদিও অবৈধভাবে ভূমি বেদখলের চেষ্টা করছিল, তবু তারা তাদের অন্যায় কাজ থেকে রেহাই পেয়ে গেল। এতে আরও বলা হয়, ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী সকল অস্থায়ী ক্যাম্প অবশ্যই প্রত্যাহার করতে হবে, কিন্তু তারা এখনো ভূমি বেদখলের মত মানবাধিকার লংঘন ঘটিয়ে সেটেলারদের মদদ দিয়ে যাচ্ছে।
চিঠিতে আবেদন করে বলা হয়, সামরিক বাহিনী সবসময়ই তাদের দমন-পীড়ন দিয়ে আদিবাসীদের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং এখানে সংঘাত নিরসনের পরিবর্তে তারা মানবাধিকার লংঘন জোরদার করে। সুতরাং আপনার কাছে আমাদের আবেদন, উপরোক্ত দুই সামরিক কর্মকর্তাসহ সামরিক বাহিনীকে যেন শান্তিরক্ষী মিশনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া না হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তির জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে।