হিল ভয়েস, ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলাধীন জুরাছড়ি উপজেলা সদর এলাকায় স্থানীয় সেনাবাহিনীর মদদে একদল বহিরাগত মুসলিম সেটেলার বাঙালি কর্তৃক এক জুম্মর ভূমি বেদখলের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী ব্যক্তির নাম হিমায়ন চাকমা, পীং-মৃত কল্প চাকমা, ঠিকানা- উপজেলা সদর এলাকা। তার জায়গার পরিমান .২০ একর, যা জুরাছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে অবস্থিত। জায়গাটি হিমায়ন চাকমার পৈতৃক সম্পত্তি বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি হিমায়ন চাকমা তার উক্ত স্থানে একটি সাধারণ বাড়ি নির্মাণ করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানায়, আজ (১৩ জানুয়ারি ২০২৪) সকাল আনুমানিক ৮ টার দিকে ৫ জন বহিরাগত মুসলিম সেটেলার বাঙালি হিমায়ন চাকমার উক্ত জায়গাটি বেদখলের উদ্দেশ্যে জায়গাটির চারিদিকে খুঁটি পুঁতে দেয়। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর জায়গার মালিক সহ জুম্ম এলাকাবাসী সেখানে উপস্থিত হয়। উভয়পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডা ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
এক পর্যায়ে জুম্মরা পোঁতা খুঁটিগুলো উপড়ে ফেলে দিলে বেদখলের চেষ্টাকারী সেটেলাররা স্থানীয় যক্ষাবাজার সেনা ক্যাম্পে গিয়ে বিষয়টি জানায়। বেদখলের চেষ্টাকারী সেটেলাররা হল- (১) মোঃ সিরাজ (৩২), পিতা-অজ্ঞাত, পেশায় দিনমজুর ও খুচরা তৈল ব্যবসায়ী; (২) মোঃ সোহেল (৩০), পিতা-অজ্ঞাত, পেশায় করাট কল মিস্ত্রি; (৩) মিঠুন (২৭), চায়ের দোকানদার; (৪) মোঃ ফয়সাল (২৯), পিতা-অজ্ঞাত, পেশায় কাপড় দোকানদার ও (৫) নাম জানা যায়নি।
এর কিছুক্ষণ পরই নিকটবর্তী যক্ষাবাজার সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার ক্যাপ্টেন মোশাররফ এর নেতৃত্বে ১৫/২০ জনের সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। আরও কয়েক মিনিট পর বনযোগীছড়া সেনা জোনের জোন কমান্ডার লে: কর্নেল জুলকিফলী আরমান বিখ্যাত পিএসসি সেখানে এসে উপস্থিত হন বলে জানা যায়।
এক পর্যায়ে ক্যাপ্টেন মোশাররফ এর নেতৃত্বে যক্ষাবাজার সেনা ক্যাম্পের সেনা সদস্যরা ভূমি বেদখলে প্রতিবাদকারী নারী-পুরুষদের মধ্যে থেকে ৫ জন জুম্মকে ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়। এসময় অন্যান্য প্রতিবাদকারী জুম্মরাও তাদের পিছু পিছু যায়। ক্যাম্পের ফটকে পৌঁছলে সেনা সদস্যরা সবাইকে সেখানে থামতে বলে এবং ধরে আনা ৫ জনকে নিয়ে আলাদাভাবে কথা বলে। দীর্ঘক্ষণ সেভাবে থাকার পর দুপুরের দিকে এলাকাবাসীরা দুপুরের খাবার খেতে বাড়ি ফিরে আসে।
অপরদিকে ধরে নিয়ে আসা ৫ জুম্মকে সেনা সদস্যরা এক পর্যায়ে ক্যাম্পের ভেতরে নিয়ে ব্যাপক নির্যাতন চালায় বলে জানা যায়। পরে নির্যাতনের শিকার ৫ জনকে জুরাছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বলে জানা যায়।
সেনা নির্যাতনের শিকার উক্ত ৫ জন সরকারি দল আওয়ামীলীগ ও যুবলীগেরই কর্মী বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে একজন জনপ্রতিনিধিও রয়েছেন।
তারা হলেন- (১) পল্লব দেওয়ান (৪৮), পিতা-অমৃত লাল দেওয়ান, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক, জুরাছড়ি থানা আওয়ামী লীগ ও ১নং জুরাছড়ি ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার; (২) সজীব চাকমা (৩২), পিতা-বিপ্লব চাকমা, গ্রাম-বরইতুলি, ৩নং ওয়ার্ড, ২নং বনযোগীছড়া ইউনিয়ন এবং তিনি সাধারণ সম্পাদক, জুরাছড়ি থানা যুবলীগ; (৩) অনুপম চাকমা (৫৫), পিতা-অজ্ঞাত, গ্রাম-ধামাই পাড়া, তিনি ২নং বনযোগী ছড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি; (৪) মিন্টু চাকমা (৩২), পিতা-অজ্ঞাত, গ্রাম-কুসুমছড়ি, ৯নং ওয়ার্ড, ১নং জুরাছড়ি ইউনিয়ন, তিনি ১নং জুরাছড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও (৫) রন্টু চাকমা (৩৮), পিতা-অজ্ঞাত, গ্রাম-বরইতুলি, তিনি জুরাছড়ি থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, সেনাবাহিনী তাদের মধ্যে থেকে পল্লব দেওয়ান ও অনুপম চাকমাকে ছেড়ে দিলেও, অন্য তিনজনকে ছেড়ে দেয়নি বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য যে, গত ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ হিল ভয়েসে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায় যে, ২১ ডিসেম্বর ২০২৩ জুরাছড়ির বনযোগীছড়া জোনের অধীন লুলাংছড়ি সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃ রবিউল জোর করে স্থানীয় ২ জন হেডম্যান ও ৯ জন কার্বারীকে ক্যাম্পে ডেকে এক সভা করেন। সভায় ক্যাম্প কমান্ডার রুপান কার্বারীকে ২০ জন সেটেলার বাঙালিকে জায়গা দিতে হবে বলে নির্দেশ দেন। তবে কার্বারীরা কমান্ডারের নির্দেশ অবৈধ বলে তা মানতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এছাড়াও উক্ত সভায় ক্যাম্প কমান্ডার প্রত্যেক মাসে উল্লিখিত কার্বারীদের থেকে একজন করে ক্যাম্পে এসে ক্যাম্পের কাজ করে দিতে হবে বলে নির্দেশ দেন।