হিল ভয়েস, ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, রাঙ্গামাটি: আজ ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ বিকাল ২:৩০ টায় রাঙ্গামাটিতে অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন কার্যকর করার দাবি এবং জুরাছড়িতে সেটেলার বাঙালি কর্তৃক এক জুম্মর ভূমি বেদখলের চেষ্টা ও সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রতিবাদকারীদের মারধরের প্রতিবাদে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডাব্লিউএফ) এর উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সমাবেশে পিসিপির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক টিকেল চাকমার সঞ্চালনায় ও জিকো চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পিসিপি, হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডাব্লিউএফ) ও যুব সমিতির নেতৃবৃন্দ।
স্বাগত বক্তব্যে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ফেডারেশন, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সভাপতি ম্রানুচিং মারমা বলেন, ২০২৪ সালে নির্বাচন শেষ হতে না হতেই শাসকগোষ্ঠী তার কার্যক্রম শুরু করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে আজ ভূমি বেদখলের কার্যক্রম চলছে। আমাদের যেখানে অধিকার নেই সেখানে যেই দল করুক, আওয়ামীলীগ করুক, বিএনপি করুক, কারোর রেহাই নেই। শাসকগোষ্ঠীর চোখে শুধুই জুম্ম, জুম্ম হিসেবেই চিহ্নিত থাকবে। নিজেদের নিরাপত্তা নিজেদেরকে তৈরী করতে হবে, কেউ এসে আমাদের নিরাপত্তা দিবে না।
সংহতি বক্তব্যে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য উলিচিং মারমা বলেন, আমরা যেদিকে তাকাই সেদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখল, নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা, গুমের কথা। আমাদের ন্যূনতম ভূমি অধিকার পর্যন্ত নেই। আমরা যারা প্রতিবাদ করি তাদেরকে কখন কিভাবে ধরা যায়, তাদের কিভাবে নিঃশেষ করা যায়, শাসকগোষ্ঠী সবসময় সেই পরিকল্পনা করে থাকে। আজ যদি পার্বত্য চট্টগ্রামের চুক্তি বাস্তবায়ন হতো, তাহলে আমাদের উপর ভূমি দখল, হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ এর মতো কার্যক্রম করতে পারতো না। আমাদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকতে হলে নিজেদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার লড়াইয়ে সামিল হতে হবে।
পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক থোয়াইক্যজাই চাক বলেন, সেনাবাহিনী সেটেলারদের পক্ষ নিয়ে জুম্মর জায়গা দেওয়ার জন্য বলে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাজ দেশকে রক্ষা করা, দেশের সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করা, পাহাড়িদের, বাংলাদেশের নাগরিকদের লাঞ্ছনা, বঞ্চনা করার কাজ নয়। চুক্তিতে স্পষ্ট রয়েছে, জেলা পরিষদের অনুমতি ব্যতীত কোনো জায়গা-জমি ইজারাসহ বন্দোবস্তি দেয়া যাবে না। যুগ পরিবর্তন হয়েছে, মানুষ পরিবর্তন হয়েছে, জুম্মদেরকে অবহেলায় রাখা যাবে না। যদি এই সমস্যাগুলো নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া না হয় ৮০/৮১-এর মতো শান্তিবাহিনী যেভাবে গর্জে উঠেছে, আরো সেভাবে গর্জে উঠতে বাধ্য হবে। আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই করে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি জুরাছড়িতে সংঘটিত সমস্যা সমাধানের জন্য প্রশাসনের যথাযথ পদক্ষেপসহ ভূমি বেদখলের অপচেষ্টাকারী সেটেলার বাঙালিদের আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ, অপারেশন উত্তোরণ নামক সেনাশাসন প্রত্যাহার, পার্বত্য সমস্যা সমাধানের জন্য স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের বিধিমালা কার্যকর করে অতিদ্রুত ভূমি কমিশন কার্যকর করার দাবি জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা বলেন, আমাদের বেঁচে থাকার অস্তিত্ব নিঃশেষ করার জন্য ষড়যন্ত্র প্রতিনিয়ত শাসকগোষ্ঠী চালাচ্ছে। ১৯৭২ সালে সংবিধানে আমাদের অস্তিত্বকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। জিয়াউর রহমানের শাসন আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামে ৪ লক্ষাধিক সেটেলার পার্বত্য চট্টগ্রামে অনুপ্রবেশ করানো হয়েছে। সেনাবাহিনীর দায়িত্ব হলো বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করা, কোনো ভূমি বেদখলকারীর পক্ষে কাজ করা সেনাবাহিনীর দায়িত্ব নয়।
তিনি বলেন, আমাদের এই বাস্তব সমস্যাকে উপলব্ধি করতে হবে। প্রতিবাদ করতে গিয়ে কেন সেনাবাহিনী সেখানে মারধর করবে। তিনি সেনাশাসনের লাগাম ধরতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক অপারেশন উত্তরণ নামক সেনাশাসন প্রত্যাহার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক বিষয়সহ চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবি জানান।
সভাপতির বক্তব্যে পিসিপির রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি জিকো চাকমা বলেন, দেশকে রক্ষা করার জন্য যে বাহিনী সৃষ্টি করা হয়েছে সেই বাহিনী আমাদের পাহাড়িদের ভূমি বেদখলের পক্ষে কাজ করছে, সেই বাহিনী আমাদের পাহাড়ি নারীদের ধর্ষণ করার জন্য পাহারাদারের কাজ করছে। ভূমি কমিশনের কার্যক্রম অবহেলা করা হচ্ছে, যার কারণে প্রতিনিয়ত ভূমি বেদখলের মতো কাজ চলছে। সেই ঘটনা যদি বারবার পুনরাবৃত্তি হয় আজকে আমরা ছাত্র সমাজ বসে থাকবো না।