হিল ভয়েস, ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, বিশেষ প্রতিবেদক: বাংলাদেশের আদিবাসীদের অধিকার আন্দোলনের অন্যতম সংগ্রামী নেতা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন আজ ভোররাত আনুমানিক ১:২৫ টায় দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলায় বারোকোনা গ্রামে নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেছেন।
তিনি বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ক বেসরকারি সংগঠন কাপেং ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক পুত্র ও এক কন্যা এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান। দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি নানা অসুস্থতায় ভুগছিলেন।
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বাস্তবায়নসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতলের আদিবাসীদের যেকোনো অধিকার আদায়ের আন্দোলনে আমৃত্যু সোচ্চার ছিলেন।
তাঁর মৃত্যুতে বিভিন্ন সংগঠন শোকবার্তা প্রদান করে এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী ব্যক্তি সামাজিক মাধ্যমে শোক প্রকাশ ও স্মরণ করতে দেখা গেছে। তাঁরা রবীন্দ্রনাথ সরেন এর মৃত্যুতে তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেন।
আদিবাসী ফোরামের শোকবার্তা:
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের পক্ষ থেকে এর সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং স্বাক্ষরিত এক শোকবার্তায় বলা হয়, ‘তিনি আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। আদিবাসী সমাজ ও সংগঠনসমূহকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি নিষ্ঠার সাথে আমৃত্য দায়িত্ব পালন করে গেছেন। আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে তাঁর মৃত্যুতে আদিবাসী অধিকার আন্দোলন, ভূমি অধিকার, মানবাধিকার ও আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনে এক অপূরণীয় ক্ষতি হল।’
কাপেং ফাউন্ডেশনের শোকবার্তা:
ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা স্বাক্ষরিত এক শোকবার্তায় বলা হয়, আদিবাসী নেতা ও বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর রবীন্দ্রনাথ সরেন আর নেই।
এতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশে আদিবাসী অধিকার আন্দোলনের নেতা, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ-সভাপতি ও কাপেং ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন রবীন্দ্রনাথ সরেন অদ্য ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ রোজ শনিবার ভোর রাত আনুমানিক ১.২৫ টায় অসুস্থতাজনিত কারণে দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলা বারোকোনা গ্রামের নিজ গৃহে দেহান্তরিত হয়েছেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক পুত্র ও এক কন্যা এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
আজীবন সংগ্রামী এ নেতা বাংলাদেশের আদিবাসীদের প্রতিটি সংকটে সোচ্চার ছিলেন। তিনি পাহাড় ও সমতলের প্রতিটি মানবাধিকার লংঘনের বিরুদ্ধে দৃঢ়কণ্ঠ ছিলেন। অসুস্থ শরীর নিয়েও তিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে গিয়েছেন। ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ ও পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে তিনি আমৃত্যু আন্দোলন সংগ্রামে নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়া সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি রক্ষা ও ভূমি কমিশন গঠনের দাবিতে আন্দোলনে জোরালো ভূমিকা পালন করেন। তিনি যেমনি পুরো দেশের আদিবাসী অধিকার আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় ছিলেন তেমনি উত্তরবঙ্গের আদিবাসীদের জন্য ছিলেন অকৃত্রিম বন্ধু-অবিভাবক ও নিরাপদ আশ্রয়স্থল।
রবীন্দ্রনাথ সরেন বিংশ শতাব্দীর আশির দশকে বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টির সঙ্গে যুক্ত হয়ে সরাসরি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। উত্তরবঙ্গের আদিবাসীদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে গত শতাব্দীর নব্বই দশকে ‘জাতীয় আদিবাসী পরিষদ’ গঠনে তিনি বলিষ্ঠ ও অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেন। শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত, নির্যাতিত ও মেহনতি মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও সমাজ পরিবর্তনে তীব্র বাসনা তাঁকে জাতীয় পর্যায়ে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। তিনি তাঁর কর্মগুণে মেহনতি মানুষের হৃদয়ে বিশেষ করে আদিবাসী সমাজে অমর হয়ে থাকবেন।
আদিবাসী নেতা ও বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর রবীন্দ্রনাথ সরেন-এর মৃত্যুতে কাপেং ফাউন্ডেশন গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জানাচ্ছে।’
পিসিপি ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের শোকবার্তা:
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) এর তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অন্তর চাকমা প্রেরিত এক শোকবার্তায় বলা হয়, পাহাড় ও সমতল আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অগ্রসৈনিক শ্রী রবীন্দ্রনাথ সরেন আজ রাত আনুমানিক ১:২৫ ঘটিকায় নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। প্রয়াত রবীন্দ্রনাথ সরেন আমৃত্যু আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর সংগ্রামী জীবন আদিবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অনুপ্রেরণা যোগাবে।
তাঁর মৃত্যুতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন গভীর শোক ও বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছে।