হিল ভয়েস, ১ ডিসেম্বর ২০২৩, বান্দরবান: শান্তি কমিটির সাথে বৈঠক করার পর বম পার্টি খ্যাত কেএনএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বান্দরবান জেলার রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় তান্ডব শুরু করেছে। গ্রামবাসীদের কাছ থেকে অস্ত্র দেখিয়ে চাঁদা আদায়, জোরপূর্বক শুকর ও চাল ছিনতাই করা, গ্রামবাসীদের মারধর করা ইত্যাদি মানবতা বিরোধী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে কেএনএফ সশস্ত্র সদস্যরা।
গত ২৫ নভেম্বর ২০২৩ একই ইউনিয়নের পাইনং ম্রো পাড়াবাসীরা কেএনএফ সন্ত্রাসীদেরকে ১০ হাজার টাকা দিতে বাধ্য হয়েছে। উক্ত টাকাগুলো বগালেকে এসে দিতে হয়েছে গ্রামবাসীদেরকে।
ঐদিন একই ইউনিয়নের লেংপুই ম্রো পাড়াবসীরাও কেএনএফকে ৬ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাড়াবসী নির্ধারিত সময়ে টাকা দিতে না পারায় এখন তা দ্বিগুণ করে পরিবার প্রতি ১,০০০ টাকা করে মোট ১২,০০০ টাকা ধার্য করে দিয়েছে। পাড়ায় মোট ১২টি পরিবারের বসবাস করে।
গত ২৩ নভেম্বর ২০২৩, রাত ৯.৩০ টার দিকে কেএনএফের একটি সশস্ত্র দল রুমা উপজেলার শৈরাতং পাড়া থেকে উচসিং মারমা (২৫), পীং নিংনেঅং মারমা ও ক্যসামং মারমা (৪৫), পীং পুঅং মার্মা নামে দুইজনকে অপহরণ করেছে।
সেসময় উক্ত দুইজন লোক প্রংফুমক পাড়া থেকে ফিরছিল। অমানষিকভাবে মারধর করার পর একই দিন রাত ১০টার দিকে তাদেরকে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা ছেড়ে দেয় বলে জানা যায়।
এছাড়াও তারা জেএসএস করে কিনা, জেএসএসের সাথে তাদের যোগাযোগ আছে কিনা এবং তাদের পাড়ায় বন্দুক আছে কিনা ইত্যাদি হয়রানিমূলক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে। এমনকি কোন জেএসএস কর্মীর নাম্বার আছে কিনা তাদের মোবাইল ফোন চেক করে সন্ত্রাসীরা।
একই সময়ে পাড়ায় নিজ বাড়ির পানির লাইন ঠিক করার সময় কেএনএফ সন্ত্রাসীরা মেদু মারমা (৫২) নামে একজন গ্রামবাসীকে কোন কারণ ছাড়াই ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়।
গত ২২ নভেম্বর ২০২৩, রাত ১১.৩০ টায় কেএনএফের একটি সশস্ত্র দল রনিন পাড়া থেকে নেমে এসে রোয়াংছড়ি উপজেলার আলিক্ষ্যং ইউনিয়নের তঞ্চঙ্গ্যা অধ্যুষিত দয়া কুমার কার্বারী পাড়ায় প্রবেশ করে। এই সময় পাড়ার সবচেয়ে বড় শূকরটি গুলি করে বিনামূল্যে নিয়ে যায় কেএনএফ সন্ত্রাসীরা, যার বাজার মূল্য প্রায় ২০-২৩ হাজার টাকা এবং পাড়ার সবকটি গাদা বন্দুকও তারা জোরপূর্বক নিয়ে যায়।
গত ২১ নভেম্বর ২০২৩, কেএনএফের ১০-১২ জনের একটি সশস্ত্র দল রুমা উপজেলার ৩নং রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়নের খুমী অধ্যুষিত রামতং পাড়ায় হানা দেয়। পাড়ায় গিয়ে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা একটি বড় শূকর দাবি করে। কিন্তু পাড়াবাসীরা বড় শূকর দিতে রাজি না হওয়ায় কেএনএফ সদস্যরা জোরপূর্বক ১টি বড় শূকর গুলি করে নিয়ে যায়। এছাড়া পাড়ার কার্বারী পিলু খুমীকে দু’টি চড় মারে এবং অপদস্থ করে।
গত ১৬ নভেম্বর ২০২৩, রোয়াংছড়ি উপজেলার শঙ্খমণি পাড়া (তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া) থেকে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা ১৫ হাজার টাকা এবং ৫ মণ চাল জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। প্রসঙ্গত, পূর্বে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা ঐ পাড়াবাসীকে ৩০ হাজার টাকা এবং ৩০ মণ চাল দিতে বলেছিল। পাড়াবাসীর অনেক অনুনয়-বিনয়ের পর ১৫ হাজার টাকা ও ৫ মণ চাউল নিতে রাজী হয় কেএনএফ।
এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে কেএনএফ-রা রুমা উপজেলার কেওক্রডং এলাকার পাড়াগুলো থেকে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে আসছে। যেমন- ১১ কিলো পাড়া থেকে ২০ হাজার টাকা; মেনদন ম্রো কার্বারী পাড়া থেকে ২০ হাজার টাকা; উমংগ্রী পাড়া থেকে ১০ হাজার টাকা এবং লেলুং খুমীদের পাড়া থেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে।
উল্লেখ্য, শান্তি কমিটির সাথে মিটিংয়ের পর থেকে কেএনএফ সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া হয়েছে। গত ০৫ নভেম্বরের সভায় ঐক্যমত্যের অন্যতম বিষয় ছিল সংলাপ চলাকালীন কেএনএফ এবং সেনাবাহিনী পরস্পরের উপর কোন আক্রমণ করবে না। সেই সুযোগ নিয়ে কেএনএফ এখন মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো ও খুমীদের উপর নানা ধরনের হয়রানিমূলক কার্যক্রম চলমান রেখেছে। বিপরীতে সেনাবাহিনীর কাছে সমস্ত তথ্য জানানোর পরেও তারা নীরব ভূমিকা পালন করে চলেছে।