হিল ভয়েস, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, বাঘাইছড়ি : আজ ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, বাঘাইছড়ি থানা শাখার ২১তম এবং শিজক কলেজ শাখার ১৯তম কাউন্সিল-২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়। বাঘাইছড়ি থানাধীন উগলছড়ি মূখ (বটতলা) কমিউনিটি সেন্টারে আজ সকাল ১০:০০ ঘটিকায় উক্ত কাউন্সিলটি শুরু হয়।
“সকল প্রকার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে ছাত্র সমাজ অধিকতর সামিল হউন” এই স্লোগানকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অনুষ্ঠানের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সহ-সভাপতি শ্রী সুমতি রঞ্জন চাকমা। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিসিপি, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নরেশ চাকমা, জনসংহতি সমিতি, বাঘাইছড়ি থানা শাখার সদস্য শান্তিবিজয় চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি, বাঘাইছড়ি থানা কমিটির সভাপতি লক্ষীমালা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি, বাঘাইছড়ি থানা কমিটির সদস্য সুমেধ চাকমা, পিসিপি, রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক টিকেল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, বাঘাইছড়ি থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক জেসমিন চাকমা প্রমুখ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, বাঘাইছড়ি থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক চিবরন চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন থানা শাখার সভাপতি পিয়েল চাকমা এবং সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন শাখা কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চাকমা। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুম্ম জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে বীর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
প্রধান অতিথি সুমতি রঞ্জন চাকমা বলেন, “আমরা যদি ইতিহাস উপলব্ধি করি পার্বত্য চট্টগ্রামে আমরা যুগ যুগ ধরে নিপীড়িত ও শোষিত। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর পঞ্চাশ বছর অতিক্রম হয়ে গেছে অথচ এখনো পর্যন্ত জুম্ম জনগণের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকারগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। শাসনতান্ত্রিক অধিকার ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের সামগ্রিক অধিকার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তাই আজকের দিনে প্রত্যেক যুব ও তরুণ সমাজের আমাদের অধিকার বাস্তবায়নের আন্দোলনে কয়েকগুণ শক্তিতে এগিয়ে আসতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “মহান নেতা এম এন লারমা ছাত্র অবস্থা থেকে জুম্ম জনগণের অধিকারের কথা ভেবেছিলেন এজন্য তাঁকে কারাবাসও করতে হয় পাকিস্তান সরকারের সময়ে। আপনাদের সকলের কাছে আমার আশা থাকবে নতুন কমিটির মাধ্যমে আপনারা জাতির অস্তিত্ব রক্ষার এই আন্দোলনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। জাতির অস্তিত্ব সংকটের কথা উপলব্ধি করে আমাদের সেই দায়ভার কাঁধে নিতে হবে।”
বিশেষ অতিথি নরেশ চাকমা বলেন, “এম এন লারমা তরুণ বয়সে অধিকার নিয়ে সচেতন করেছিলেন সাধারণ জনগণকে। সেসময় তিনি জুম্মদের মরণ ফাঁদ কাপ্তাই বাধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। জুম্মদের উপর নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমাদেরও একইভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। পিসিপি সংগঠনে এসে আমরা এম এন লারমা’র আদর্শ চেতনাকে ধারণ করে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। নিপীড়নের বিরুদ্ধে সার্বক্ষণিক প্রতিবাদী হতে হবে।”
শান্তিবিজয় চাকমা বলেন, “আজকে উপস্থিত আপনাদের মধ্যে অধিকাংশই ছাত্র সমাজের প্রতিনিধি। জুম্ম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে আপনাদের ভূমিকা প্রথম সারিতে। সরকার আজও চুক্তি বাস্তবায়ন করছে না উপরন্তু নামা ষড়যন্ত্র ও জুম্ম বিরোধী নীতি গ্রহণের আমাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। জনসংহতি সমিতির আন্দোলনকে ধ্বংস ও দমিয়ে রাখার জন্য শাসকগোষ্ঠী নানামুখী ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। আমাদের ছাত্র সমাজকে এইসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে অন্যথায় ছাত্র যুব সমাজ সংগঠিত হতে না পারলে অধিকার ফিরে পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।”
লক্ষীমালা চাকমা বলেন, “সাহস, ধৈর্য্য ও মনোবল কোনদিন হারাবেন না। যুবক-ছাত্ররা পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য মূল শক্তি যা অন্য কারোর থাকেনা। আপনারা আমরা সকলেই মিলে যতদিন আমরা এই মাটিতে থাকবো ততদিন আমরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাবো। আমরা সময়কে অপচয় করব না। অনেক সময় গড়িয়ে গেছে আর ব্যয় করার অবকাশ নেই।”
টিকেল চাকমা বলেন, “পিসিপি একটি পাঠশালা ও আদর্শের নাম। এই সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক সচেতনতার শিক্ষা দেয়। বর্তমান বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা দাসত্ব হয়ে বেঁচে থাকার শিক্ষা দেয়। পিসিপি সেই শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তনের কথা বলে আসছে এবং বিজ্ঞানভিত্তিক ও বাস্তবমুখী একইধারার শিক্ষার দাবি জানায়। আজকের দিনে জুম্ম জনগণের সামগ্রিক বাস্তবতা অত্যন্ত নাজুক। শাসকগোষ্ঠী জুম্মদের ভূমি কেড়ে নিয়ে সেখানে জুম্ম বিধ্বংসী অবকাঠামো গড়ে তুলছে।
তিনি আরও বলেন, “ঘুণেধরা সামন্তীয় ব্যবস্থা ও আত্মমূখী চিন্তা জুম্ম সমাজকে পিছিয়ে রেখেছে। পিসিপি এই ব্যবস্থা আমূল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সাম্য ও ন্যায়ের সমাজ ব্যবস্থা চায়। এম এন লারমার নীতিআদর্শ এই ছাত্রসমাজ বুকে ধারণ করার মধ্য দিয়ে জাতির অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলনে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।”
পরিশেষে পিয়েল চাকমাকে সভাপতি, চিবরন চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও সুদর্শন চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট পিসিপি, বাঘাইছড়ি থানা শাখা কমিটি এবং সুকেন চাকমাকে সভাপতি, রুপেজ চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও অভিক চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট পিসিপি, শিজক কলেজ শাখার কমিটি গঠন করা হয়।
নবগঠিত বাঘাইছড়ি থানা শাখা কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান পিসিপি’র কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অন্বেষ চাকমা এবং শিজক কলেজ শাখা কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান পিসিপি, রাঙ্গামাটি জেলা শাখার অর্থ সম্পাদক মিলন চাকমা।