হিল ভয়েস, ২ ডিসেম্বর ২০২৩, ঢাকা : আজ ২ ডিসেম্বর, ২০২৩, শনিবার, সকাল ১০:১৫ ঘটিকায় মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর মিলনায়তন, শের-ই-বাংলা নগর, আগারগাঁও, ঢাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৬ বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবানের দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম যৌথ উদ্যোগে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অন্যতম স্বাক্ষরকারী, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশনের কো-চেয়ারপার্সন এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সমন্বয়কারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারন সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সহ-সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের নির্বাহী সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন, ঐক্যন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ্যাডভোকেট এস এম এ সবুর, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ সভাপতি ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য মোস্তফা আলমগীর রতন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. স্নিগ্ধা রেজওয়ানা প্রমূখ। আলোচনা সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ সাধারণ সম্পাদক ডা. গজেন্দ্রনাথ মাহাতো এবং ছাত্র ও যুব প্রতিনিধির বক্তব্য প্রদান করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি নিপন ত্রিপুরা।
আলোচনা সভায় জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা বলেন, আজকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বাস্তবায়নের যে দীর্ঘসূত্রিতা, সেটা নিয়ে নানা জনের নানা মত, পর্যালোচনা থাকলেও আমি মনে করি এ চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনে সরকারের ব্যর্থতাই দায়ী। পার্বত্যাঞ্চলের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ক্রমাগত ঘনীভূত হচ্ছে। সেখানে সেনাশাসনের যে বাস্তবতা, বিগত ২৬ বছর পর্যন্ত পার্বত্যবাসী যে আশা- আখাঙ্খা নিয়ে চুক্তি বাস্তবায়নের আশায় ছিল, সে আশা আর রাখতে পারছে না। আজকে পার্বত্যাঞ্চলবাসী নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য অন্য ভাবনা উদয় করতে বাধ্য হচ্ছে। তরুন সমাজের নিজেদের বাস্তবতা জেনেই চুক্তি বাস্তবায়নে আরো বৃহত্তর আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে।
এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, আমরা চুক্তির মধ্য দিয়ে একটি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ থামাতে সফল হয়েছি ঠিকই, কিন্তু আমরা এই চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে উচ্ছসিত হতে পারছি না। যদিও সরকারপক্ষ বিষয়টি নিয়ে খুবই উচ্ছ্বসিত, বিষয়টি অনেকটা আমরা অন্যজনকে ঠকিয়ে যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করি ঠিক সেরকমই বলে মনে করি। আমি আগে প্রায় পার্বত্য চট্টগ্রামে যেতাম পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশনের হয়ে। তখন সেনাবাহিনী আমাদেরকে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যেত। ক্যাম্পে নিয়ে তাদের ভাষায় তারা আমাদেরকে ‘ব্রিফিং’ করতো। একবার আমাদেরকে সেই ব্রিফিং এ বলা হয়েছিল তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করছে। আমি প্রশ্ন করেছিলাম পাহাড়ে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সেনাবাহিনীর কী ভূমিকা? কারণ- তাদের কাজ নিরাপত্তা রক্ষা। পাহাড়ে অনেক বছর ধরে সেনাবাহিনী আছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেখানে শান্তি প্রতিস্থিত হয়নি। কাজেই তারা কেন মানে মানে সরে আসে না। তাদেরকে মেনে নিতে হবে যে, পাহাড়ে সামরিক বাহিনী দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না। এই শান্তি স্থাপনে সরকারকে নতুন কৌশল নিতে হবে। পাহাড়ে ভূমি কমিশন কার্যকর হয়নি। আমরা একটা একটা করে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছি। এখন আমাকে আজ বলতে হবে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামকে একটা বিশেষ গোষ্ঠীর কাছে উপহার দেয়া হয়ে গেছে। তারাই পাহাড়ের সমস্ত সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বলেন, এই কথাটি এখন তীর্যকপূর্ণ শোনাবে যে, “আমি আনন্দিত যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে”, যেখানে চুক্তি স্বাক্ষরকারী উভয়পক্ষ এখন আলাদাভাবে চুক্তির বর্ষপূর্তি সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে পালিত হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের ক্ষমতায়নের দলিল হিসেবে যে দলিল পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সেই চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি। যেখানে এককেন্দ্রীক বাংলাদেশকে বিকেন্দ্রীকরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মাধ্যমে যে ৩৩ টি ক্ষমতা হস্তাস্তর করার কথা ছিল, তার কতটুক বাস্তবায়িত হয়েছে? গণতন্ত্রকে বিকশিত করার জন্য প্রয়োজন কার্যকর ডিসেন্ট্রালাইজেশন একই সাথে দরকার ডিভোলিউশন। এই পার্বত্য চুক্তির মধ্যেই এই দুটিরই পথ নির্দেশ আছে। এই চুক্তি পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগনের সাথে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চুক্তি, সরকার কোনমতেই এই চুক্তিকে ডিজওউন্ড করতে পারে না।
কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরকারী যে দুটি পক্ষ, সেই দুটি পক্ষের একটি পক্ষ চুক্তি ভঙ্গ করেছে এবং সেই পক্ষটি হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। যদি আমি বাংলাদেশের বৈচিত্র্যকে ধারন করি, যদি আমি বাংলাদেশের সকল মানুষদের অধিকার নিয়ে চিন্তা করি, যদি আদিবাসীদের ভূমি-সংস্কৃতি-ভাষা ও তাঁদের বাচাঁর অধিকার নিয়ে চিন্তা করি তাহলে তাদের আন্দোলনকে আমাদের নিজেদের আন্দোলন হিসেবে মনে করতে হবে। যেই পরিস্থিতিতে পাহাড়ের মানুষ তৎকালীন সময়ে অস্ত্র তুলে নিতে বাধ্য হয়েছিল, আমি সরকারকে অনুরোধ করতে চাই, সেই অবস্থা নতুনভাবে সৃষ্টি করবেন না। এই রাষ্ট্র বিগত ২৬ বছর যাবৎ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি নিয়ে বধিরের ভূমিকা পালন করে আসছে।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, একদিকে শাসকশ্রেণির পাহাড়ি জনপদের চোখধাঁধানো উন্নয়নের বিপনন বিপরীতে পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো পর্যন্ত বিদ্যমান অগনতান্ত্রিক সামরিক শাসন। আমরা সরকারের ২৬ বছর পরের যে বক্তব্য, আমরা সরকারের সাথে এই বক্তব্যের সাথে একমত, এই চুক্তি একটি বিরল চুক্তি। এই অর্থে বিরল যে, চুক্তি করা হল, আন্তর্জাতিক পদকও নেওয়া হল কিন্তু চুক্তি মানলাম না। আমরা চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের মাধ্যমে পুরো দেশে সকল জনতার মাঝে এই বিষয়টি ছড়িয়ে দিতে চাই, জনগনকে সচেতন করতেই হবে, চুক্তির দ্রুত পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে।
রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যখন স্বাক্ষরিত হয়েছিল তখন আমাদের দলের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দিয়েছিলাম এই আশংকা করে যে- এই চুক্তির মধ্য দিয়ে পাহাড়ীদেরকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলা হল কি না। আমরা চাই নাই এই আশংকা সত্যি হোক। কিন্তু এই চুক্তির ২৬ বছর পেরিয়ে আজ পরিস্কার করে দেখা যাচ্ছে যে, আসলেই পাহাড়ীদেরকে প্রতারনার ফাঁদে ফেলা হয়েছে। এটা কেমন চুক্তি হল- যেখানে একপক্ষ উল্লাস করছে আর অন্যদিকে আরেক পক্ষ হাহাকার করছে। তাহলে পাহাড়ীদেরকে কী চুক্তি দিয়ে ফাঁদে ফেলা হলো না? সরকার যখন কোনো ধরণের উন্নয়নের কথা বলে তখন আমাদের খুঁজতে হয় সেখানে কতটুকু লুন্ঠন আছে। সরকার বিভিন্নভাবে, শতাংশ দিয়ে এই চুক্তি বাস্তবায়নের বিবরণ দেয়। কিন্তু শতাংশ দিয়ে সত্যকে আড়াল করা যায় না।
অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির প্রথম বাক্যটিই হচ্ছে- পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলটি আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল হবে। কিন্তু, আমরা দেখতে পাচ্ছি সেখানে এখন উগ্র ইসলামীকরন হচ্ছে, সামরিক শাসনকে জিইয়ে রাখা হয়েছে। আমি বলতে চাই আমরা ইসলামের বিরুদ্ধে না, কিন্তু উগ্র ইসলামাইজেশনের বিরুদ্ধে, আমরা সেরাবাহিনীর বিরুদ্ধে না, কিন্তু সেনাশাসনের বিরুদ্ধে। কোনো দেশে যদি সংখ্যালঘু থাকে, তবে প্রথম কাজ হবে তাদেরকে রিকোগনাইজ করা। রিকোগনাইজ করে তাদেরকে রেসপেক্ট করা। যদি রেসপেক্ট করতে না পারেন তবে তাদেরকে টলারেট করা। কিন্তু এই দেশে তো আদিবাসীদেরকে সহ্যই করতে পারছে না রাষ্ট্র। যে বাঙালিরা ২৪ বছর পাকিস্তানি শাসনের নিপীড়নের মধ্যে ছিল সেই বাঙালিই আজ নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তার জলন্ত প্রমাণ গাজায় যে ইসরায়েলের আধিপত্য। পৃথিবীতে ইহুদিদের মত আর অন্য কোনো জাতি নেই যারা এত বেশি নিপীড়িত হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস পড়ে দেখা যায় ৬০ লক্ষ ইহুদিকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু সেই ইহুদীরাই আজকে গাজায় নিপীড়কের ভূমিকা নিয়েছে। ঠিক তেমনি পার্বত্য চট্টগ্রামেও বাঙালি আজ নিপীড়ন চালাচ্ছে। যার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন হতে পারছে না। চুক্তি হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাথে। তারা যদি মনে করে এই চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয় নাই। মাত্র ২৫ টি ধারা বাস্তবায়ন হয়েছে। সেটাই বৈধ কথা।
এ্যাডভোকেট এস এম এ সবুর বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি দয়ার চুক্তি নয়, দীর্ঘ সময় সশস্ত্র লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই এই চুক্তি অর্জিত হয়েছে, তাহলে সরকার কেন এই চুক্তির পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে গাফিলতি করছে? আমরা দেখতে পেয়েছি আদিবাসীদের ভূমি সমস্যার সমাধানের জন্য যে কমিশন হয়েছিল তাতে অনেক দরখাস্ত ও অভিযোগ জমা পড়লেও সেগুলোর কোনোটিই ফাইসালা করা হচ্ছে না। আজকে ২৬ বছর পেরিয়ে গেলেও সেগুলোর সুরাহা হচ্ছে না। এই চুক্তি ন্যায়সঙ্গত চুক্তি বলেই সরকার সমঝোতায় এসেছিল এবং চুক্তিটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়েছিল। তাই এই চুক্তি বাস্তবায়ন করা সরকারেরই দ্বায়িত্ব।
জাকির হোসেন বলেন, আমরা বিগত বছরও একই জায়গায় এসে এ দিবসটি নিয়ে একত্রিত হয়েছিলাম। আমরা বারংবার একই কথাই বলে যাচ্ছি যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এই চুক্তি বাস্তবায়নে সময়সূচিভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা করতে হবে। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য নিয়মতান্ত্রিক যত আন্দোলন আছে আমরা পার্বত্য একতাবদ্ধ হয়ে তা আদায় করবো। আপনারা সকলে জানেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন’ নামে একটি প্লাটফর্ম গড়ে উঠেছে। এই প্লাটফর্মটি বিভিন্ন বিভাগে ইতিমধ্যে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে সমাবেশও করেছে। আমরা চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে দিবসকেন্দ্রিক উৎযাপনের মধ্যে না থেকে আরো জোরালো আন্দোলন দেখতে চাই।
রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, এই সরকার তো আদিবাসীদের স্বীকৃতিই দিতে চায় না, যার কারনে যাদের জন্য আজকের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি, সেই চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের তাই এই অপারগতা। পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের জীবন খুবই দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে আজ। আদিবাসীদের এগিয়ে যেতে দেয়া হয় না, আমাদের শুধুমাত্র ব্যবহার করা হয় প্রয়োজনের সময়েই। আমাদের আর হারানোর কিছুই নেই, সংগ্রাম ছাড়া।
সদস্য মোস্তফা আলমগীর রতন বলেন, আমি ছাত্রাবস্থায় যখন ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম তখন রাঙামাটিতে দেয়াললিখন দেখেছিলাম- ‘যে জীবন জলপাইয়ের বুটের তলে পিষ্ট, সে জীবন আমি চাই না’ কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৬ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও এখনও পার্র্বত্য চট্টগ্রামের জনজীবন জলপাইয়ের বুটের তলায় পিষ্ট, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনমিতি বদলে দেওয়া হচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের তাদের নিজ স্থানেই সংখ্যালঘু করা হচ্ছে, ভূমির অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, আঞ্চলিক পরিষদকে ক্ষমতায়ন করা হচ্ছে না, তাই অতি শীঘ্রই চুক্তি বাস্তবায়নে আরো জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলবে।
অধ্যাপক ড. স্নিগ্ধা রেজওয়ানা বলেন, আজকে যেই চুক্তি সেই চুক্তি কে যখন শান্তিচুক্তি বলা হয়, সেটা নিয়েও রাজনীতি আছে। এই চুক্তি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের জন্য চুক্তি। গণতন্ত্রের চারটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম স্তম্ভ যে গনমাধ্যম, সেই মূলধারার গনমাধ্যমের কিছু অংশও অনেকটা মিথ্যাচার নিয়ে দাবি করতে চায় এই চুক্তির ৯৬ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। আদিবাসীদের আন্দোলন কেন শুধুমাত্র আদিবাসীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে? আদিবাসীদের আন্দোলন কেন পুরো বাংলাদেশের আন্দোলন হবে না? গনমানুষের আন্দোলন হবে না কেন? জাতীয় আন্দোলন কেন হবে না? আজকে পর্যটন-রিসোর্ট-ট্যুরিজমের জন্য আদিবাসীদের যে উচ্ছেদ করা হয়, সেই উচ্ছেদের সাথে আদিবাসীদের সমাজ-সংস্কৃতিও বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছে তার সাথে পরিবেশও বিপর্যের দিকে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে রাষ্ট্রের যে দ্বি-চারিতা আছে সেটা দেখিয়ে দিতে হবে।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ সাধারণ সম্পাদক ডা. গজেন্দ্রনাথ মাহাতো বলেন, পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যে চুক্তি করা হয়েছিল, ২৬ বর্ষপূর্তিতে যে আনন্দ উদযাপনের কথা, পাহাড়ি-বাঙালি তথা বাংলাদেশের সকল মানুষদের উদযাপন সহভাগিতা করার কথা ছিল, কিন্তু তা আমরা দেখতে পাচ্ছি। সরকার যদিও দাবি করে চুক্তির বৃহৎ অংশ বাস্তবায়িত হয়েছে সেখানে আমরা দেখতে পাই যে এখনো পর্যন্ত চুক্তির মৌলিক ধারাগুলোই বাস্তবায়িত হয়নি।
ছাত্র ও যুব প্রতিনিধির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধান করার জন্যই ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বরে ২৬ টি ধারাবাহিক বৈঠকের ফলাফল হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। আমরা আশা করেছিলাম এই সরকার চুক্তি স্বাক্ষর করার পরে চুক্তি বাস্তবায়নে মনযোগী হবে। কিন্তু, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ২৬ বছর আগের যে স্বাক্ষরিত চুক্তি, সেই চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের সদিচ্ছা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। আমরা দেখেছি সরকারের পক্ষ থেকে চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে মিথ্যাচার। এই চুক্তির পশ্চাতে যেমন একটি রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম আছে, আমরা চাইনা এই চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতেও আরেকটি রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম হোক। তবে চুক্তি যদি বাস্তবায়ন না হয় তবে পাহাড়ের প্রত্যেকটি তরুণ সেই সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা।