হিল ভয়েস, ২ ডিসেম্বর ২০২৩, বরকল : আজ ২ ডিসেম্বর ২০২৩ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৬তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), বরকল থানা শাখার উদ্যোগে উপজেলা মাঠ প্রাঙ্গনে গণসমাবেশ আয়োজন করা হয়। এছাড়াও, বড় হরিণা ও ভূষণ ছড়া ইউনিয়নে এলাবাসীর উদ্যোগে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত গণসমাবেশে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সবিনয় চাকমার সঞ্চালনায় ও সভাপতি মিন্টু চাকমার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বরকল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সদস্য, বিধান চাকমা। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুচরিতা চাকমা, ভাইস চেয়ারম্যান শ্যাম রতন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির বরকল থানা কমিটির সাবেক সভাপতি জ্ঞান জ্যোতি চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রনেল চাকমা ও কার্বারি এসোসিয়েশনের সভাপতি নন্দ বিকাশ চাকমা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপির বরকলের সহ-সভাপতি ইলেন চাকমা।
প্রধান অতিথি বিধান চাকমা বলেন, পার্বত্য চুক্তি আজ ২৬ বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। বৃটিশ আমলের সময় থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভিন্ন শাসন ব্যবস্থা ছিল। এখানে আমরা নিজস্ব আইন, সামাজিক রীতি-নীতি নিয়ে বসবাস করে আসছি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পর থেকে আমরা দেখতে পাই পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের অধিকারের কথা সংবিধানে লেখা হয়নি। অন্যদিকে জুম্ম অধ্যুষিত অঞ্চলকে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করার গভীর ষড়যন্ত্র করে চলেছে সরকার। এভাবে আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামকে প্রতিনিয়ত ঔপনিবেশিক কায়দায় শাসন করে চলেছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার ভাগ কর শাসন কর নীতির ভিত্তিতে জুম্মদের মধ্যে যারা সুবিধাবাধী, ক্ষমতা লোভী তাদেরকে ব্যবহার করে চুক্তি বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছে। এইসব চুক্তি বিরোধী কার্যক্রমকে রুখে দিতে হবে। তিনি সামনের যেকোনো আন্দোলনে জনগণকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানান।
সুচরিতা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামে ইতিহাস। দীর্ঘ ২৬ বছরেও পার্বত্য চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়িত হয়নি। চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের অবস্থা জটিল থেকে জটিল আকার ধারণ করছে। আজ চুক্তির পরও নারী সহিংসতা, ধর্ষণ ইত্যাদি প্রতিনিয়ত সংঘটিত হচ্ছে।
শ্যাম রতন চাকমা বলেন, চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। যে সরকারের সাথে জনসংহতি সমিতি চুক্তি করেছিল সেই আওয়ামীলীগ সরকার আজ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও চুক্তি বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি, বরং প্রতিনিয়ত চুক্তি লঙ্ঘন করছে। আজকের পর্যটনের নামে, সেনা ক্যাম্পের নামে প্রতিনিয়ত পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। অপারেশন উত্তোরনের নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা শাসন জিইয়ে রেখেছে সরকার।
জ্ঞান জ্যোতি চাকমা বলেন,পার্বত্য চুক্তি দীর্ঘ ২৬ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। তবুও সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করেনি। ভবিষ্যতে হয়তো পার্বত্য চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করবে সে আশাও নেই। তাই চুক্তি বাস্তবায়ন করতে যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান তিনি।
রনেল চাকমা বলেন, পার্বত্য চুক্তি দীর্ঘ ২৬ বছর হয়েছে, আজকের এই দিনে শান্তি, স্বস্তিতে উৎসবমুখর পরিবেশে হওয়ার কথা ছিল। সেইদিনে গণসমাবেশে দাঁড়িয়ে দুঃখের কথা, হতাশার কথা বলতে হচ্ছে। সরকার ঐতিহাসিক চুক্তিকে ধংস করার জন্য বিশেষ মহলকে দিয়ে প্রতিনিয়ত চুক্তি বিরোধী কার্যক্রম জারি রেখেছে। দীর্ঘ ২৫ বছর রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে গড়া ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তির ফসল হিসেবে যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ, উন্নয়নবোর্ড গঠিত হয়েছে সেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে আজ জুম্ম দালালরা লুট করে খাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে সরকার চিড়িয়াখানার মতো আবদ্ধ করে নির্যাতন,নিপীড়ন গুম খুনের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে। তাই সেই বাস্তবতা থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য জুম্ম জনগণকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে অধিকতর আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
নন্দ বিকাশ চাকমা বলেন, পার্বত্য চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। পার্বত্য চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে আরো কঠিন আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তার জন্যে যুব সমাজকে আরো অধিক আন্দোলনমুখি হতে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
অন্যদিকে, বরকলের ভূষণছড়া ইউনিয়নের সিএম পাড়া এলাকায়ও বিভিন্ন গ্রামবাসীদের যৌথ উদ্যোগে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে, শান্তি রাজ চাকমার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দয়ানন্দ চাকমা, সহ-সভাপতি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ভূষণছড়া ইউনিয়ন কমিটি।
এছাড়াও, বরকলের ভূষণছড়া ইউনিয়নের তৈবুঙ এলাকায় জনসংহতি সমিতির বড় হরিণা ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি জ্ঞানশ্রী চাকমার সভাপতিত্বে এক গনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বড় হরিণা ইউনিয়ন পরিষদের সভাপতি নিলাময় চাকমা এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ১৬৩ নং কলা বুনিয়া মৌজার হেডম্যান জিরখুম লিয়ান পাংখোয়া। এসময় স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা নিরাপত্তার নামে সমাবেশে ব্যাপক সশস্ত্র অবস্থায় অবস্থান করে।