হিল ভয়েস, ৪ ডিসেম্বর ২০২৩, বাঘাইছড়ি : গত ২ ডিসেম্বর ২০২৩ রোজ শনিবার, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৬ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাঘাইছড়ি এলাকাবাসীর উদ্যোগে বাঘাইছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত গণসমাবেশে বিল্টু চাকমার সঞ্চালনায় ও অলিভ চাকমার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এম এন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা। এছাড়াও, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুমন মারমা। আরো উপস্থিত ছিলেন কাচালং কলেজের অধ্যক্ষ দেব প্রসাদ দেওয়ান, বাঘাইছড়ি মহিলা সমিতি’র সভাপতি লক্ষীমালা চাকমা ও বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাগরিকা চাকমা সহ এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও ছাত্র ও যুব প্রতিনিধি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিজয় কেতন চাকমা বলেন, চুক্তির ২৬ বছর পেরিয়ে গেলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্মদের অধিকার এখনো নিশ্চিত হয়নি। যার ফলে সেনাশাসন এখনো জারি আছে এই পাহাড়ে। তিনি ছাত্র ও যুব-সমাজ তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের সকলকে চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সুমন মারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে একটি কারাগার করে রাখা হয়েছে। নিরাপত্তাহীনতায় মানুষ বসবাস করছে। তিনি আরো বলেন, চুক্তি কারোর একক স্বার্থে নয় বা একক জনসংহতি সমিতির নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতি, দল, লিঙ্গ, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য এই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তাই এই চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি এই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আরো অধিকতর আন্দোলন জোরদার করার জন্য ছাত্র ও যুব-সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
কাচালং কলেজের অধ্যক্ষ দেব প্রসাদ দেওয়ান বলেন, পার্বত্যবাসী বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সাথে চুক্তিতে গিয়েছিল। তাই এখানে কোন সরকার আসবে, কোন সরকার যাবে সেটা দেখার বিষয় নয় আমাদের। চুক্তি যেহেতু রাষ্ট্রের সাথে হয়েছে তাই যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক তাকেই চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত জুম্ম জাতি লড়াই জারি রাখবে।
বাঘাইছড়ি মহিলা সমিতি’র সভাপতি লক্ষীমালা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন জুম্মদের অধিকার ফিরিয়ে পাবার একমাত্র রাস্তা। তিনি আরো বলেন, ধর্ম সকলের থাকা আবশ্যক কিন্তু এই ধর্ম পালনের পাশাপাশি সকলকে জাতির কল্যাণে এই কঠিন বাস্তবতায় এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাগরিকা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি জুম্মদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত একটি চুক্তি। কিন্তু চুক্তির ২৬ বছর অতিক্রান্ত হলেও সরকার বারংবার জুম্মদের প্রতারণা করেই যাচ্ছে। যার ফলে পাহাড়ে এখনো অশান্তি বিরাজ করছে। তিনি সর্বশেষ সরকারকে আবারো চুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান।
এছাড়া, গণসমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন নিখিল জীবন চাকমা, আহ্বায়ক উপজাতীয় অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু ও পুনর্বাসন কমিটি, জিকো চাকমা, ছাত্র ও যুব প্রতিনিধি পিসিপি রাঙ্গামাটি জেলা শাখা, অমূল্য রতন চাকমা, বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও সদস্য, সারোয়াতলী ইউনিয়ন, জ্যোতিষ মান চাকমা, প্রত্যাগত সদস্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, বিশ্বপ্রিয় কার্বারী, আপন চাকমা, চেয়ারম্যান, ৩৩ নং মারিশ্যা ইউনিয়ন পরিষদ, কাচালং বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভদ্রসেন চাকমা প্রমুখ।