হিল ভয়েস, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, চট্টগ্রাম: গতকাল ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ শনিবার চট্টগ্রামের হালদা সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, চট্টগ্রাম অঞ্চল ও কাপেং ফাউন্ডেশনের যৌথ আয়োজনে “আদিবাসীদের ভূমি অধিকার ও সামগ্রিক পরিস্থিতির মূল্যায়ন ও করণীয়” শীর্ষক আঞ্চলিক পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত আঞ্চলিক পরামর্শ সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহ-সভাপতি ফুল কুমার ত্রিপুরার এবং সঞ্চালনা করেন এস জে চাকমা।
এছাড়াও সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টি চট্টগ্রাম এর সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান, বাংলাদেশ-ভারত ইতিহাস ও ঐতিহ্য পরিষদের সভাপতি তাপস হোড়, ঐক্য ন্যাপ চট্টগ্রাম এর যুগ্ম সম্পাদক পাহাড়ী ভট্টাচার্য, কাপেং ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক হিরন মিত্র চাকমা, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধুরী, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী সুমি খান, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম কক্সবাজার জেলার মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মা থিন থিন রাখাইন, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা প্রমূখ।
সভাটিতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম কক্সবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক মংথেন হ্লা রাখাইন এবং প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহ-সভাপতি ফুল কুমার ত্রিপুরা।
শরীফ চৌহান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুসারে আদিবাসীদের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়নি। যার কারণে পাহাড়ের মূল সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামে জঙ্গি ও মৌলবাদীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। আদিবাসীদের পাশাপাশি আদিবাসী অধিকারের বিষয়ে সোচ্চার ব্যক্তিবর্গকে এক প্লাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আদিবাসীর দিন দিন নিজ ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হয়ে ভূমিহীন হয়ে পড়ছে। লামায় রাবার কোম্পানীগুলো ম্রো আদিবাসীদের জমি দখল করে ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে চলেছে। সীতাকুন্ডে ত্রিপুরা আদিবাসীরা কষ্টের দিন অতিবাহিত করছে। আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
তাপস হোড় বলেন, শাসকগোষ্ঠী আদিবাসীদের উপর নিপীড়ন নির্যাতন করে বিতাড়িত করতে চাই। আদিবাসী নারীরা প্রতিনিয়ত নিপীড়নের শিকার হয়। সরকার উন্নয়নের নামে পাহাড়ের প্রাণ প্রকৃতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ স্বীকার করে লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।”
পাহাড়ী ভট্টাচার্য বলেন, আদিবাসীরা আজ নিজ দেশে পরবাসী হয়ে গেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিকল্পিতভাবে বাঙালিদের বসতি স্থাপন করে আদিবাসীদের সংখ্যালঘুতে পরিণত করা হয়েছে। এসব কর্মকান্ডে একটি বিশেষ মহল মদদ দিয়ে চলেছে। আদিবাসীর প্রতিনিয়ত নিপীড়নের শিকার হয়ে দেশান্তরী হতে বাধ্য হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে কালক্ষেপন করে সমস্যাকে জিইয়ে রাখা হয়েছে।
হিরন মিত্র চাকমা বলেন, দেশব্যাপী আদিবাসীদের উপর নিপীড়ন নির্যাতন বেড়ে চলেছে। বন বিভাগ রিজার্ভ ফরেস্টের নামে ভূমি বেদখল করে আদিবাসীদের ভূমি কেড়ে নিয়েছে। সম্প্রতি ভূমি মন্ত্রনালয়ের ‘দলিল যার ভূমি তার’ নীতির আইন আদিবাসীদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে ফেলবে। আদিবাসীদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে হবে।
এছাড়াও বক্তারা বলেন, আদিবাসী সর্ব ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। আদিবাসীরা ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানে চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। আদিবাসীদের দু:খ-বেদনা, সংগ্রামের কথা বিশ্ব পরিমন্ডলে পৌঁছে দিতে হবে।