হিল ভয়েস, ৫ নভেম্বর ২০২৩, রাঙ্গামাটি: আজ ৫ নভেম্বর ২০২৩ ইং সকাল ১০ ঘটিকায় রাঙ্গামাটি জেলা শিল্পকলা একাডেমির অডিটোরিয়ামে পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির উদ্যোগে মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় সাংগঠনিক সম্পাদক মনি চাকমার সঞ্চালনায় এবং কেন্দ্রীয় সদস্য নতুন মালা চাকমার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আজীবন সংগ্রামী নারী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য মাধবীলতা চাকমা। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার। অন্যান্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল (খ) শাখার সভাপতি শ্রী প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, এমএন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা, পিসিপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক থোয়াইক্যজাই চাক, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য সোনারিতা চাকমা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুবিনা চাকমা।
প্রধান অতিথি আজীবন সংগ্রামী শ্রীমতি মাধবীলতা চাকমা, তিনি শুরুতেই মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার পরিবারের স্মৃতিচারণ করে বলেন, তাদের পরিবারের সবাই ধর্মপ্রাণ ছিলেন। তাদের পরিবারে সবাই সংগ্রামী ছিলেন। এম.এন.লারমার বাবা একজন শিক্ষক এবং সমাজসেবী প্রগতিশীল পরোপকারী চিন্তার অধিকারী ছিলেন। যাঁর হাত ধরে সমাজ পরিবর্তন হয়েছে।
স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন,আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর এম.এন.লারমার সাথে পরিচয় গড়ে ওঠে। লারমা ছিলেন একজন সৎ, সাহসী, সহনশীল, ধৈর্যশীল, প্রকৃতি প্রেমী এবং ক্ষমাগুণের অধিকারী। তিনি বলেন, এমএন লারমার মত সকলের মধ্যে শিক্ষা, ক্ষমা ও পরিবর্তনের গুণাবলী থাকতে হবে। নারী পুরুষ সমানাধিকার প্রতিষ্ঠাকল্পে ত্যাগের মহিমায় সামনের দিকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার আর্দশকে ধারণ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার বলেন, নভেম্বর মাস জুম্ম জনগণের একটি হৃদয় বিদারক দিন। এই দিনে বিবেদপন্থীরা মহান নেতাকে হত্যা করেছিলো। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, চোখের সামনে নিজের ভিটে মাটি কেড়ে নেয়া হচ্ছে। সরকার যা ইচ্ছা তা করে যাচ্ছে, তার পরেও জুম্ম জনগণ আন্দোলনে আসতে অনীহা প্রকাশ করে থাকেন। তৎকালীন সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দল বুঝতে চায়নি।
তিনি আরও বলেন, এম এন লারমার মধ্যে দূরদর্শী চিন্তা ছিলো বিধায় ঘুমন্ত জুম্ম জনগণকে জাগিয়ে আন্দোলনমুখী করেছিলেন। এম এন লারমা ছিলেন আজীবন ত্যাগী, সংগ্রামী, সৎ, নিষ্ঠাবান, আদর্শবান বিপ্লবী নেতা। কুচক্রীরা সেদিন লারমাকে দেশীয় এবং বিদেশী চক্রান্ত করে হত্যা করেছিলো ঠিকই কিন্তু লারমার আদর্শকে হত্যা করতে পারে নাই।
তিনি সমবেত কর্মীদের প্রতি আহ্বান রেখে বলেন, জুম্ম জনগণের মধ্যে ভুল চিন্তাধারা থাকলে আন্দোলন এগিয়ে নেয়া যায় না। পার্টিকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য জনগণকে একত্রিত করতে হবে। কর্মীদের মধ্যে ক্ষমতার লোভ লালসা পরিহার করে সকলকে ত্যাগের মহিমায় এগিয়ে আসতে হবে। নিজের উপর আত্নবিশ্বাস রেখে লড়াই করতে হবে। পার্টির মধ্যে বিশ্বস্ত, জ্ঞানী-গুনীদের উপস্থিতি প্রয়োজন বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।