হিল ভয়েস, ১০ নভেম্বর ২০২৩, রাঙ্গামাটি: সাম্প্রতিক সময়ে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন বিলাইছড়ি ও জুরাছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক হয়রানিমূলক সেনা টহলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এজন্য দুই উপজেলার সাধারণ গ্রামবাসীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৫ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে বিলাইছড়ি উপজেলার দিঘলছড়ি সেনাজোন (৩২ বীর) হতে ক্যাপ্টেন আরিফ এর নেতৃত্বে ২০ জনের একটি সেনাদল ও একই উপজেলার তক্তানালা সেনা ক্যাম্প হতে ওয়ারেন্ট অফিসার সাইফুল এর নেতৃত্বে একটি সেনাদল ৩নং ফারুয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের আলীখ্যং নতুন পাড়ায় একত্রিত হয়। উক্ত পাড়ায় চন্দ্র চাকমার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী থাকে, কালেক্টর গ্রুপ থাকে এবং পাড়ার লোকেরা সবাই সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত এমন অজুহাতে সেনা সদস্যরা পাড়ার লোকদের নানা ধরনের হুমকি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে। পরে ৪/৫ ঘন্টা অবস্থানের পর বিকেলে সেখান থেকে চলে যায়।
গত ৭ নভেম্বর ২০২৩ সকাল ৮ টায় ৩২ বীর ফারুয়া ক্যাম্প হতে ক্যাপ্টেন শিহাবের নেতৃত্বে ২৫ জনের একটি সেনাদল আর তক্তানালা সেনা ক্যাম্প হতে জনৈক ওয়ারেন্ট অফিসার সাইফুলের নেতৃত্বে ১৫ জনের একটি সেনাদল সর্বমোট ৩৫ জনের সেনাদল বিলাইছড়ি উপজেলার ২নং ফারুয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের রয়াপাড়া ছড়াতে একত্রিত হয়। উক্ত সেনাদলটি পাড়ার লোকদের সন্ত্রাসীর সাথে যোগাযোগ রয়েছে এবং সবাই সন্ত্রাসী বলে অভিযোগ করে এবং নানা ধরণের হয়রানিমূলক প্রশ্ন করে।
পরে ১। বাবলু চাকমা(৪২) পিতা-ধন্যা চাকমা, গ্রাম রয়াপাড়া ছড়া ২। অমর ধন তঞ্চঙ্গ্যা(৪৭) পিতা-মুক্তা চান তঞ্চঙ্গ্যা, ঠিকানা-ঐ। ৩। খুশী লাল তঞ্চঙ্গ্যা(৪৫) পিতা-রতন তঞ্চঙ্গ্যা,ঠিকানা-ঐ। ৪। সিদ্দিক্যা তঞ্চঙ্গ্যা(৪৫) পিতা-বার্মা তঞ্চঙ্গ্যা, ঠিকানা-ঐ। ৫।উজ্জল তঞ্চঙ্গ্যা(৩২), পিতা-সুন্দজ্যা তঞ্চঙ্গ্যা, ঠিকানা-ঐ। ৬। বিজয় তঞ্চঙ্গ্যা(৩০) পিতা-জন চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা, ঠিকানা-ঐ। ৭। লক্ষী ধন তঞ্চঙ্গ্যা(৪৩) পিতা-হরিশ চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা, ঠিকানা-ঐ। ৮। আঙ্গা ধন তঞ্চঙ্গ্যা(৪৪) পিতা-হাঙ্গারা তঞ্চঙ্গ্যা, ঠিকানা-ঐ এই ৮ জন এলাকার দোকানদারকে তোমাদের দোকানে সবসময় সস্ত্রাসী আনাগোনা করে কিন্তু তোমরা আমাদেরকে খবর দাওনা বলে নানা ধরনের হয়রানিমূলক কথা বলে। পরবর্তীতে আমাদের কাছে খবর না দিলে সকলকে বেঁধে নিয়ে যাব এমনকি তোমাদের মারলে আমাদের কিছু হবে না বলে হুমকি প্রদান করে সেনা সদস্যরা।
৯ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে বিলাইছড়ি তক্তানালা আর্মি ক্যাম্প হতে ওয়ারেন্ট অফিসার সাইফুল এর নেতৃত্বে ১৫ জনের একদল সেনাসদস্য ফারুয়া ইউনিয়নের শুকনা ছড়ায় টহল অভিযানে যায়। সেখানে গিয়ে ১। জীবন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা (৩৮), পিতা-গুলঙ্যা তঞ্চঙ্গ্যা, ২। ঘারা ধন তঞ্চঙ্গ্যা (৪৫)পিতা-ঐ উভয়ের বাড়ি ঘেরাও করে। এই সময় ঘারা ধন তঞ্চঙ্গ্যাকে বন্দুক তাক করে গুলি করবে বলে হুমকি দেয় এবং এখানে সন্ত্রাসী কোথায় বলে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। এমন সময় বাড়ির অদূরে একটি মোটর সাইকেল দেখতে পেলে মোটর সাইকেলটি কার বলে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং বাইকটি সন্ত্রাসীর বলে জোরপূর্বক স্বীকার করাতে চেষ্টা করে।
এমতাবস্থায় ৩২ বীর ফারুয়া ক্যাম্প হতে ক্যাপ্টেন শিহাবের নেতৃত্বে ১৫ জন সেনাসদস্য শুকনা ছড়ায় পৌঁছে । তখন দুই গ্রুপে মিলে মোটর সাইকেলটি জঙ্গলে নিয়ে ঝোঁপ ও লতা পাতা দিয়ে ছবি তুলে নেয় এবং পুনরায় রাস্তায় নিয়ে এসেও ছবি তুলে। এরপর গ্রামবাসীদের উদ্দেশ্যে সেনাসদস্যরা বলে যে, মোটর সাইকেলটি সন্ত্রাসীর বলতে হবে এবং না বললে তাদের সকলকে পরবর্তীতে বেঁধে নিয়ে যাবে বলে হুমকি দেয় এবং মোটর সাইকেলটি সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিয়ে যায়।
জানা যায়, মোটর সাইকেলটি বরুন তঞ্চঙ্গ্যা (৩২), পিতা-মৃত ললিত চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা, গ্রাম-তকটা নালা এর বলে জানা যায়। তিনি একজন সাধারণ গ্রামবাসী।
গত ৯ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে সকাল ১০টার সময় জুরাছড়ি উপজেলার ফকিরা ছড়া ক্যাম্প হতে জনৈক ওয়ারেন্ট অফিসারের নেতৃত্বে ২০ জনের একটি সেনাদল তাগলক ছড়া মোনে অপারেশনে যায়। সেখানে সন্ত্রাসী কোথায় বলে এলাকাবাসীদের নানা ধরনের হয়রানিমূলক জিজ্ঞাসাবাদ করে ও হুমকি দেয়। পরে প্রায় ৩ঘন্টা অবস্থান করে ক্যাম্পে ফিরে যায় বলে জানা যায়।