হিল ভয়েস, ২০ অক্টোবর ২০২৩, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলায় সেনাবাহিনী কর্তৃক হেডম্যান ও কার্বারীদের নির্দেশ দিয়ে জুম্মদের কাছ থেকে জোরপূর্বক পারিবারিক ও ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে রাজস্থলী সেনাবাহিনী স্থানীয় মুরুব্বীদের ক্যাম্পে ডেকে হয়রানিমূলক ভাবে তাদের স্ব স্ব গ্রামের নাম, সম্প্রদায়ের নাম এবং তাদের পরিবারের সংখ্যা লিখে রাজস্থলী সাব জোনে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ রয়েছে যে, ইতিপূর্বেও রাজস্থলী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কার্বারীদের ডেকে তাদের এলাকার আদিবাসী জুম্ম সম্প্রদায়ের পাড়ার নাম, সম্প্রদায়ের নাম এবং পরিবার সংখ্যা সম্বলিত তথ্য উক্ত সাবজোনে জমা দিতে বাধ্য হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
রাজস্থলী এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ ও ১৮ অক্টোবর রাজস্থলী আর্মি সাব জোন কর্তৃপক্ষ রাজস্থলী উপজেলার ৩৩৫ নং ধনুছড়ি মৌজা ও ৩৩৩ নং ঘিলাছড়ি মৌজার হেডম্যান কার্বারীদের সাবজোনে ডাকা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। উক্ত সেনা কর্তৃপক্ষ হেডম্যান ও কার্বারীদের নিজ নিজ এলাকার গ্রামের নাম, সম্প্রদায়ের নাম এবং পরিবারের সংখ্যা লিখে সাব-জোনে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করে যে, ইতিমধ্যে ধনুছড়ি মৌজার ৬টি এলাকার কার্বারী এবং ঘিলাছড়ি মৌজার ১৬টি পাড়ার কার্বারীদের পাড়ার নাম, সম্প্রদায়ের নাম ও পরিবার সংখ্যা লিখে সাব-জোনে জমা দিতে বাধ্য হয়েছে ।
যে সমস্ত পাড়া সেনাবাহিনীর চাপের মুখে তাদের এলাকার তথ্য বিবরণী জমা দিতে বাধ্য হয়েছে সেসব পাড়ার নাম হলো। ৩৩৫ নং ধনুছড়ী মৌজার অন্তর্গত পাড়াসমূহ- ১। শিলছড়ি খিয়াং পাড়া, ২। ধনুছড়ি পাড়া, ৩। আড়াছড়ি পাড়া, ৪। কুক্যাছড়ি পাড়া, ৫। মনিঅং পাড়া এবং ৬। পূর্বানছড়ি পাড়া।
৩৩৩ নং ঘিলাছড়ি মৌজার অন্তর্গত পাড়াসমূহ- ১। বগাছড়ি পাড়া, ২। আমতলী পাড়া, ৩। শিলছড়ি তংচঙ্গ্যা পাড়া , ৪। নোয়া পাড়া, ৫। মুরাছড়ি পাড়া, ৬। সাবছড়ি পাড়া, ৭। মাগাই পাড়া, ৮। মাগাই পুর্নবাসন পাড়া, ৯। ঘিলামুখ পাড়া, ১০। ঝুঝুড়ি পাড়া, ১১। মহাজন পাড়া, ১২। হেডম্যান পাড়া, ১৩। বাজার পাড়া, ১৪। ডাকাতর পাড়া, ১৫। উলুছড়ি পাড়া এবং ১৬। খাগড়াছড়ি পাড়া।
সেনাবাহিনীর বলেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। সে কারণে যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এবং জনসাধারণের নিরাপত্তা বিধানের জন্য তারা এসব পদেক্ষেপ নিয়েছে। তারা আরো বলেছে যে, এলাকায় কোন সন্ত্রাসী ঢুকলে সেনাবাহিনীকে খবর দেওয়ার জন্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন এলাকাবাসী ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছে যে, এলাকার গ্রামের নাম, সম্প্রদায়ের নাম বা পরিবার সংখ্যা চাওয়া সেনাবাহিনীর কাজ নয়। সেনাবাহিনী হয়রানির উদ্দেশ্যে এসব করছে। তারা আশংকা প্রকাশ করছে যে, সেনাবাহিনীর এ কাজের পেছনে হয়ত কোন খারাপ মতলব থাকতে পারে।
উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বেও সেনাবাহিনী রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলার বিভিন্ন উপজেলার আদিবাসি গ্রাম থেকে এরূপ হয়রানিমূকভাবে জোরপূর্বক তথ্য আদায় করেছে।