বিলাইছড়িতে সেনা টহল অভিযানে জুম্মদের হয়রানি, এলাকায় আতঙ্ক

হিল ভয়েস, ২৮ অক্টোবর ২০২৩, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলাধীন বিলাইছড়ি উপজেলার বিলাইছড়ি সদর ইউনিয়ন ও কেংড়াছড়ি ইউনিয়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দুটি দল টহল অভিযান পরিচালনা করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। টহল অভিযানে কয়েকজন নারী-পুরুষ জুম্ম গ্রামবাসী হয়রানির শিকার হয়েছে এবং এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উক্ত দুটি টহল দল একত্রিত হয়ে এখনো একটি প্রাথমিক স্কুলে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ (২৮ অক্টোবর ২০২৩) সকাল আনুমানিক ৮টার দিকে বিলাইছড়ি উপজেলা সদরের ৩২বীর দীঘলছড়ি সেনা জোনের অধীন ধুপশীল সেনা ক্যাম্প হতে জনৈক সুবেদারের নেতৃত্বে ২০ জনের একটি সেনাদল টহল অভিযানে বের হয়। সেনা সদস্যরা প্রত্যেকে লোহার টুপি পরিহিত ছিল। পরে তারা ১নং বিলাইছড়ি সদর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের দীঘলছড়ি মোন পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে তারা কিছুক্ষণ আশেপাশের জুম্ম বাড়িতে টহল অভিযান চালায়। এসময় সেনা সদস্যরা ২/৩ জন জুম্ম নারীর সাথে দুর্ব্যবহার করে এবং সন্ত্রাসী দেখেছে কিনা, সেখানে সন্ত্রাসী আসে কিনা ইত্যাদি নানা প্রশ্ন করে হয়রানি করে।

উক্ত গ্রামে ঘন্টাখানেক অবস্থান করার পর ওই সেনাদলটি বিলাইছড়ি মোন হয়ে ২নং কেংড়াছড়ি ইউনিয়নের পরীখলা মোনের দিকে রওনা দেয়। এসময় সেনা সদস্যরা বিলাইছড়ি মোন হতে তিন জন জুম্ম শ্রমিককে তাদের সাথে থাকা জিনিসপত্র বয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য করে। পরে পরীখলা মোনে পৌঁছে ওই শ্রমিকদের জনপ্রতি মাত্র ৬০ টাকা পারিশ্রমিক দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। স্থানীয়দের মতে, এধরনের কাজে একজন শ্রমিকের পারিশ্রমিক অন্তত ৫০০ টাকা।

অপরদিকে, উক্ত টহল দল অভিযানে বের হওয়ার পরপরই ৩২বীর দীঘলছড়ি সেনা জোন হতে ক্যাপ্টেন আরিফ এর নেতৃত্বে ২০ জনের অপর একটি সেনাদল একেবারে যুদ্ধংদেহী ভঙ্গীতে বিলাইছড়ি ঢেবার মাথা হয়ে হাজাছড়া পাড়া এলাকায় যায় বলে জানা যায়। ওই এলাকায় কিছুক্ষণ টহল অভিযান চালানোর পর এই সেনাদলটি পরীখলা মোন পাড়ায় যায়। সেখানে বাসনাদেবী চাকমা নামে এক নারীকে তার দোকান থেকে বের হতে বলে এবং সাথে সাথে সেনা সদস্যরা ওই নারীকে বন্দুক তাক করে একটি দেশীয় বন্দুক হাতে গুজে দিয়ে মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু ওই নারী তা করতে অস্বীকার করে।

এরপর সেনা সদস্যরা ওই নারীকে ‘এখানে জেএসএস’এর লোক এসেছিল, আমাদেরকে খবর দাওনাই কেন?’ ইত্যাদি নানা জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বলে জানা যায়।

পরে উভয় সেনাদল একত্রিত হয়ে বেলা ১:৩০ টার দিকে পরীখলা মোন থেকে বাঙালকাবা প্রাথমিক স্কুলের দিকে চলে যায় এবং এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।

দিনের বেলায় সেনাবাহিনীর হয়রানি এবং এখনো বাঙালকাবা প্রাথমিক স্কুলে অবস্থানের ফলে এলাকার জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।

More From Author