হিল ভয়েস, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, রাঙ্গামাটি: আজ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সকাল ১০ ঘটিকায় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের উদ্যোগে রাঙ্গমাটির জেলা শিল্পকলা একাডেমির অডিটোরিয়ামে বিপ্লবী মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কবিতা পাঠ অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শান্তি দেবী তঞ্চঙ্গ্যার সঞ্চালনায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক শিশির চাকমা এবং বিশেষ আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক উ উইন মং জলি। এছাড়াও সাবেক সাংসদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার , প্রয়াত লারমার বড় বোন জ্যোতিপ্রভা লারমাসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বিভিন্ন কমিটির নেতৃবৃন্দ, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ম্রানুচিং মারমা।
কবিতা পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। কবিতা পাঠ পর্বে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও তঞ্চঙ্গ্যা ভাষার কবিতা ছাড়াও বাংলা ভাষার দ্রোহমূলক কবিতা পাঠ করা হয়। কবিতা পাঠ করেন অতিথি কবি বিজ্ঞান্তর চাকমা, শুদ্ধোধন তঞ্চঙ্গ্যা, অর্জুন চৌধুরী, আলোময় চাকমা, সানুচিং মারমা, সুকেশ খীসা, যশোধা ত্রিপুরা, উজাই মারমা, সুজন চাকমা, সুশীলা চাকমা, বর্ষামনি চাকমা, সাবিত্রি ত্রিপুরা, পিরুমনি চাকমা, কেয়া চাকমা, রিতু চাকমা, সুবর্ণা তঞ্চঙ্গ্যা, জীবক চাকমা, প্রত্যাশা চাকমা, নিতি ভূবন চাকমা ও রেনু চাকমা ।
কবিতা পাঠ শেষে আলোচনা সভায় বিশেষ আলোচক পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক জুলিমং মারমা বলেন, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা নির্যাতিত মানুষের ক্ষত দেখতে পেয়েছিলেন। তাই তিনি নিপীড়িত জুম্ম জনগণকে রাজনৈতিক সচেতন করার প্রয়াস চালিয়েছেন। আন্দোলনে সামিল করেছিলেন। মাত্র ৩০ বছর বয়সে তিনি সংসদ সদস্য হয়েছেন। মহান নেতা দেখেছিলেন এই নির্যাতিত মানুষের কণ্ঠস্বর, কাপ্তাই বাঁধের কারণে জুম্ম জনগণের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিলো সেটি জুম্ম জনগণকে উপলব্ধি করিয়েছিলেন। আমাদের এই মহান নেতা এই কর্ষিত জমির আবাদি কথা বলেছিলেন।
তিনি আরো বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা লিখতে গিয়ে কারারুদ্ধ হয়ে ছিলেন। তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীরা তারপরেও তাকে থামিয়ে রাখতে পারেনি। তেমনি এমএন লারমাকেও আটকাতে পারেনি তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী। এই কারণে এমএন লারমা মহান। তিনি এম এন লারমার প্রদর্শিত আদর্শ ধারণ ও লালন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
প্রধান আলোচক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শিশির চাকমা বলেন, এমএন লারমার জীবন ও সংগ্রাম স্বল্প সময় নিয়ে বিশ্লেষণ করা অসম্ভব। তিনি রাজনীতিক নন, আমার চোখে তিনি একজন বিপ্লবী। বিপ্লবীরাই পারেন জনমানুষের সাথে একাত্ম হতে। সব রাজনীতিক জনমানুষের সাথে একাত্মা হতে পারে না। তার কথাগুলো কাব্যিক হয়। তিনি সংসদে যে কথাগুলো বলেছেন সেগুলো কবিতার মধ্যে ফুটে রয়েছে। একজন বিপ্লবীর ভাষণ কম্পিত। একজন কবির হাতে কখনো অস্ত্র থাকে না, তবুও একজন কবির কথার শব্দগুলো গুলির কিংবা লোহার ইস্পাতের থেকে শক্তিশালী হয়। যে জাতি তার ভাষা সংস্কৃতিকে অবহেলা করবে সে জাতি নিজেকে অবহেলা করছে। এটিকে এম এন লারমা প্রথম গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
তিনি আরো বলেন, আমাদের দালানকোঠা বিশাল সম্পদের পাহাড় হলেও যদি আমার নিজের ভাষার, নিজের সংস্কৃতির মর্যাদা না থাকে তাহলে সেই সম্পদের পাহাড় থাকা অনর্থক। যতক্ষণ পর্যন্ত ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য থাকবে ততদিন পর্যন্ত জাতি ঠিকে থাকবে। আজকে যদি বঙ্গবন্ধু সংবিধানে আমাদের জাতিসমূহের অধিকার নিশ্চিত করতেন তাহলে আজ পাহাড় এতো রক্তাক্ত, এতে এতো হাহাকার সৃষ্টি হতো না। সবাইকে এম এন লারমার নীতি ও আদর্শ অনুসরণ এবং তার আদর্শ থেকে বিচ্যুতি না হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি এম এন লারমার আদর্শ কবিতার মধ্যে হোক, লেখার মধ্যে হোক, বক্তব্যর মধ্যে হোক প্রসারিত করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের সভাপতি হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য উলিচিং মারমা বলেন, এম এন লারমা জন্ম না নিলে হয়তো আজকে আমাদের এই সাহস হতো না। দৃঢ়তা, আত্মবিশ্বাস জন্মাত না।