হিল ভয়েস, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, চট্টগ্রাম: আজ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ বিকাল ৩:৩০ ঘটিকায় দেশের সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫% শিক্ষা কোটা চালু করা ও পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ, অবকাঠামো নির্মাণসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবিতে চট্টগ্রামে আন্দরকিল্লা মোড়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার উদ্যোগে ছাত্র সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
ছাত্র সমাবেশে পিসিপি চট্টগ্রাম মহানগর শাখার অম্লান চাকমার সঞ্চালনায় উক্ত শাখার সহ-সভাপতি বিনিময় চাকমা সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক নরেশ চাকমা, পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সহ সভাপতি ডিসান তঞ্চঙ্গ্যা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সুদীপ্ত চাকমা, পিসিপি চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক হ্লামিও মারমা, পিসিপি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অন্বেষ চাকমা, পিসিপি চট্টগ্রাম পলিটেকনিক শাখার সাধারণ সম্পাদক উখিংসাই মারমা প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি চট্টগ্রাম মহানগর শাখার শিক্ষা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক সুকর্ণা চাকমা।
সুর্কণা চাকমা বলেন, ১৯৬২ সালে এই দিনে পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী শাসন-শোষণ ও শিক্ষা সংকোচননীতির বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজ রুখে দাঁড়িয়েছিল। তৎকালীন পাকিস্তানে শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যের বিরুদ্ধে ও চাপিয়ে দেওয়া শিক্ষানীতি বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজের প্রতিবাদ আজ ৬১তম বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। কিন্তু স্বাধীন বাংলার মাটিতে এখনো সেই শিক্ষার অধিকার নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে, এটার চাইতে লজ্জা আর হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, পাহাড় ও সমতলের আদিবাসী মানুষের সাথে শিক্ষার যে বৈষম্য সেটা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে অবসান ঘটাতে হবে।
উকিংসাই মারমা বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫২ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও এখনো পাহাড়ের শিক্ষার মান উন্নতি হয়নি। পাহাড়ের শিক্ষা ব্যবস্থা আর সমতলের শিক্ষা ব্যবস্থার পার্থক্য আকাশ চুম্বী।
তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার ফলে পাহাড়ের শিক্ষা ব্যবস্থা অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রধান সমস্যা হচ্ছে ভূমি সমস্যা। ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন গঠন করা হলেও সেখানে কার্যক্রম করতে গেলে তথাকথিত একটি গোষ্ঠী হরতালের ডাক দেয়। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গ ও যথাযথ বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারকে আহবান জানাই।
লামিউ মারমা বলেন, স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের শিক্ষার সংকোচনীতির বিরুদ্ধে ১৯৬২ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর বাংলার ছাত্র যুব সমাজ হরতালের ডাক দেয়। ১৯৬৪ সালে শরিফ কমিশন বাতিল করতে আইয়ুব সরকার বাধ্য হয়। মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশে শিক্ষা নীতি গ্রহণ করা হলেও এখনো দেখা যায় বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা। তিনি বলেন, এই বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা অবসানের লক্ষ্যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষক সংকট, নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ করতে হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন করা জরুরি।
ডিষান তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, মহান শিক্ষা দিবসে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের শিক্ষার অধিকার নিয়ে সচেতন ছাত্র যুব-সমাজকে আরো সোচ্চার হতে হবে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় আজকে পাহাড়ে শিক্ষার বৈষম্য আকাশচুম্বী।
অন্বেষ চাকমা বলেন, একটা স্বাধীন দেশে শিক্ষার যে মূল লক্ষ্য তা বাস্তবায়ন হওয়া কথা ছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। সারা বাংলাদেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে যে বৈষম্য সেটা হওয়ার কথা ছিল না। আবার পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা আরো বৈষম্যমূলক। চুক্তিতে মাতৃভাষায় শিক্ষার কথা থাকলেও চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় সেটা হয়ে উঠেনি।
সুদীপ্ত চাকমা বলেন, আইয়ুব খানের শিক্ষা সংকোচন নীতির মত আজও বাংলাদেশে শিক্ষা নীতির ক্ষেত্রে বৈষম্য দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আজকে দাস গড়ার কারিগর হয়ে গেছে। সেখানে চিন্তার স্বাধীনতা সংকোচন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সাথে শিক্ষা নিয়ে যে তালবাহানা সেটা আমরা লক্ষ্য করেছি।
নরেশ চাকমা বলেন, শিক্ষা একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার, সেটা বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রের যে দায় সেটা আমরা বাস্তবায়ন হতে দেখিনি।
তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে তাকালে দেখতে পাই শিক্ষা ক্ষেত্রে যে বৈষম্য তা কোনো ভাবে কাম্য নয়। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকার গড়িমসি করছে।
বিনিময় চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ছাত্র সমাবেশ শেষে আন্দরকিল্লা মোড় হতে মিছিল বের হয়ে চেরাগী মোড়ে এসে সমাপ্ত হয়।