হিল ভয়েস, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি অডিটোরিয়ামে ৬১ তম শিক্ষা দিবস উপলক্ষে “বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক ও আদিবাসীবান্ধব শিক্ষানীতি প্রণয়ন কর” এই স্লোগানকে নিয়ে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ছাত্র সমাবেশ ও আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন সভায় প্রধান আলোচক সাবেক ছাত্রনেতা ও অধ্যাপক অশোক সাহা।
আজ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সকাল ১১:৩০ ঘটিকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি অডিটোরিয়ামে উক্ত ছাত্র সমাবেশ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় আরও আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি প্রত্যয় নাফাক, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক অন্বেষ চাকমা প্রমুখ।
আলোচনা সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নরেশ চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অন্তর চাকমার সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ছাত্র ইউনিয়ন চবি সংসদের দপ্তর সম্পাদক ইফাজ উদ্দীন আহমদ ইমু।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অশোক সাহা বলেন, “বর্তমানে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া শেষ করেও শিক্ষার আসল ব্যঞ্জন কি তা বুঝতে পারে না। শিক্ষা এমন ভাবে গ্রহণ করা উচিত যা শিখব সেটি জীবনে কাজে লাগানো যাবে। বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলোতে যে সাম্প্রদায়িকতার চর্চা করা হয় তা কাম্য নয়।”
তিনি আরো বলেন, “সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ মনোভাব তৈরির মাধ্যমে এক প্রজন্মকে বড় করা হচ্ছে, তার ফল একদিন রাষ্ট্রকে ভোগ করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতারা ক্ষয়তায় বসে যা ইচ্ছে করে যাচ্ছেন। আমাদের সর্বদা সত্য এবং ন্যায়ের পক্ষে থাকতে হবে।”
প্রত্যয় নাফাক বলেন, “শিক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার এবং তা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব সরকারের হলেও সরকার এখনো সেটি সুনিশ্চিত করতে পারেনি । দেশের স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পাঠ্যপুস্তকগুলোতে সাম্প্রদায়িকতা ধারার পাঠ্যসূচি চালু করার প্রবণতা বাড়ছে।”
তিনি আরো বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলের নামগুলোকে মৌলবাদী নামে নামকরণ করা হচ্ছে। জাতীয় বাজেটে আদিবাসীদের নির্দিষ্ট করে কোনো বাজেট থাকে না। পাহাড়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নানা সংকটের কারণে পাহাড়ী শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে অর্ধেকের ও বেশি ঝরে যাচ্ছে।”
অন্বেষ চাকমা বলেন, “শিক্ষা মৌলিক অধিকার হলেও শিক্ষাকে প্রতিনিয়ত বানিজ্যকরণ করার ফলে যথাযথ শিক্ষা পাওয়া থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বঞ্চিত হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে এমন এলাকা আছে স্কুল আছে, ছাত্র আছে কিন্তু শিক্ষক নেই। রাঙ্গামাটি শহরের সবচেয়ে প্রাচীন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজে পর্যন্ত একটি বিভাগ চলে মাত্র একজন শিক্ষক দিয়ে। পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষক সংকট ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।”
আলোচনা সভা শেষে মিছিল সহকারে শহীদ মিনারে গিয়ে মহান শহীদ দিবসের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
ছাত্র সমাবেশ থেকে নিম্নোক্ত দাবিসমূহ উত্থাপন করা হয়:-
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি:-
১. শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি কর।
২. শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসন কর।
৩. অবিলম্বে শাটল ট্রেনে বগি ও শিডিউল বৃদ্ধি কর।
৪. চবি মেডিকেলে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন চিকিৎসক ও চিকিৎসা সরঞ্জামসহ পর্যাপ্ত মেডিসিন নিশ্চিত কর।
সরকারের প্রতি:-
১. উচ্চশিক্ষা ও সরকারি চাকরিতে আদিবাসীদের জন্য ৫% কোটা নিশ্চিত কর।
২. সর্বজনীন ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষানীতি প্রণয়ন কর।
৩. পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট নিরসন কর।
৪. আদিবাসীদের স্ব স্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত কর।
৫. পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকীকরণ বন্ধ কর।