হিল ভয়েস, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলাধীন লংগদু উপজেলার আটরকছড়া ইউনিয়নে জুম্মদের গ্রাম লক্ষ্য করে সেনাবাহিনী বেপরোয়াভাবে ব্যাপক ফাঁকা গুলি বর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া পরে সেনা সদস্যরা গ্রামের লোকদের হয়রানি এবং হুমকি প্রদান করেছে বলে জানা গেছে।
হিল ভয়েসের লংগদু প্রতিনিধি জানিয়েছে, গতকাল ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ রাত আনুমানিক ৯:৩০ টার দিকে আটরকছড়া ইউনিয়নে অবস্থিত ‘তেজস্বী বীর করল্যাছড়ি সাব-জোন’এর সেনা সদস্যরা ক্যাম্পের পূর্ব ও উত্তরদিক বরাবর জুম্মদের বসতি লক্ষ্য করে বেপরোয়াভাবে কমপক্ষে ১০০-১৫০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। এতে আশেপাশে থাকা জুম্মদের বসতবাড়িতে গিয়ে গুলি পড়ে। এসময় স্থানীয় জুম্মদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
লংগদু প্রতিনিধি আরও জানান, আজ (১৭ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টার দিকে করল্যাছড়ি সাব-জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর রিফাত এর নেতৃত্বে ২০/২৫ জনের একটি সেনাদল করল্যাছড়ি গ্রামে প্রবেশ করে এবং ১৫/১৬ জন গ্রামবাসীকে ধরে এনে এক জায়গায় জড়ো করে। এসময় গতকাল রাতে কে বা কারা সেনা ক্যাম্পের সেনা সদস্যদের উদ্দেশ্য করে একটি ফায়ার করলে সঙ্গে সঙ্গে সেনা ক্যাম্প থেকেও ব্রাশ ফারায় করা হয় বলে গ্রামবাসীদের সামনে উল্লেখ করেন মেজর রিফাত। এসময় মেজর রিফাত ওই গুলি বর্ষণের জন্য উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে জেএসএসকে দায়ী করেন।
এসময় মেজর রিফাত গ্রামবাসীদের উদ্দেশ্য করে হুমকি দিয়ে বলেন, কারা আমাদের ক্যাম্পকে আক্রমণ করেছে তোমরা সবকিছু জানো, তোমরা তাদের খাবার দিয়েছো, তাদের গোপন আস্তানা সম্পর্কে সবকিছু জানো, সত্য কথা বলো, না হলে সবাইকে জেলহাজতে পাঠাবো, হয়রানি হতে না চাইলে স্বীকার করো কে বা কোন দল এই কাজটা করেছে।
এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত করল্যাছড়ি গ্রামের জুম্মদের যাদের বাড়িতে গুলি পড়েছে তাদের মধ্যে দুইজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- শুক্ক বিকাশ চাকমা, পিতা-বাঙাল্যা চাকমা ও মিহির কিরন চাকমা, পিতা-রাজেন্দ্র প্রসাদ চাকমা। তাদের বসতবাড়িতে বুলেট পড়েছে বলে বাড়ির মালিকেরা নিশ্চিত করেছেন।
অপরদিকে, যে জুম্ম গ্রামবাসীদের ডেকে নিয়ে সেনাবাহিনী জিজ্ঞাসাবাদ ও হয়রানি করেছে এবং হুমকি দিয়েছে তাদের মধ্যে চার জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- (১) শুক্ক বিকাশ চাকমা, পিতা-বাঙল্যা চাকমা, (২) মনি বাপ চাকমা, পিতা-শিলাপ্রু চাকমা, (৩) কালা চান চাকমা, পিতা-ঝুর্ব চাকমা, (৪) লক্ষি বিকাশ চাকমা, পিতা-উলামন চাকমা। তারা সবাই করল্যাছড়ি গ্রামের বাসিন্দা।
জানা গেছে, উক্ত গ্রামবাসীদের সাময়িক আটক রেখে জিজ্ঞাসাবাদ ও হুমকি প্রদান করার পর সেনাক্যাম্প থেকে ডাকলে যেকোনো সময়ে ক্যাম্পে আসতে হবে বলে শর্তারোপ করে সেনাবাহিনী গ্রামবাসীদের ছেড়ে দেয়।