হিল ভয়েস, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলাধীন কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাদা পোষাক পরিহিত ৬ সদস্য কর্তৃক ১৬ বছরের এক মারমা কিশোরী জোরপূর্বক গণ-ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে, গতকাল রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল আনুমানিক ৯:০০ টার দিকে কাপ্তাই সেনা জোনের ৫৬ বেঙ্গলের অধীন রাইখালীর মিতিঙ্গাছড়ি সেনা ক্যাম্পের সাদা পোষাক পরিহিত ৬ সদস্য রাইখালী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মিতিঙ্গাছড়ি গ্রামের বাসিন্দা এসএসসি পরীক্ষার্থী এক কিশোরীকে গণধর্ষণ করে।
ঘটনার পর উল্টো ক্যাম্পের কর্তৃপক্ষ গণধর্ষণের শিকার কিশোরীর পরিবার ও গ্রামের কার্বারীকে ক্যাম্পে ডেকে কাউকে না জানাতে নির্দেশ দেয় এবং প্রকাশ করলে ভুক্তভোগী পরিবারের চরম পরিণতি মুখোমুখী হবে বলে হুমকি প্রদান করে।
বর্তমানে ধর্ষিতা কিশোরীর অবস্থা শারিরীক ও মানসিকভাবে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য যে, ২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারি রাত ২:৩০ টায় বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ওড়াছড়ি গ্রামে এক মারমা কিশোরী (১৭) ফারুয়া সেনা ক্যাম্পের সেনাসদস্য কর্তৃক নিজ বাড়িতে ধর্ষণের শিকার এবং তার আরেক ছোট বোন (১৫) শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছিল। সেই সময় অভিযুক্ত সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে সেনা কর্তৃপক্ষ সহিংসতার শিকার দুই মারমা কিশোরীকে সেনাবাহিনী হেফাজতে ঘরবন্দী করে রেখেছিল।
আরো উল্লেখ্য যে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি হতে জুন মাস পর্যন্ত জুম্ম নারীর উপর ১২টি সহিংস ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এবং এতে ১১ জন নারী মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে। ১২টি ঘটনার মধ্যে মাত্র ২টি ঘটনার অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। বাকি ১০টি ঘটনার কমপক্ষে ২৪ জন অভিযুক্ত ব্যক্তি পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল।
১২টি ঘটনার মধ্যে গত ২৭ মে ২০২৩ জুরাছড়ি উপজেলায় সোনালী ব্যাংক লিমিটেডে কর্মরত এক পুলিশ সদস্য কর্তৃক চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া এক জুম্ম স্কুল ছাত্রী ধর্ষণের চেষ্টা ও যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে।
উল্লেখ্য, এ যাবত জুম্ম নারী ও শিশুর ওপর যত সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তার কোনোটিরই সুষ্টু বিচার হয়নি। এই বিচারহীনতার কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে বার বার এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। ফলে জুম্ম নারীরা আজ চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে চলাফেরা করতে বাধ্য হচ্ছে।
যার অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে নিজ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের দায়ে যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত ধর্ষক করল্যাছড়ি রশিদ সরকার ( আর.এস) উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিমকে আদালত কর্তৃক যাবজ্জীবন সাজা প্রদান হলেও জালিযাতির মাধ্যমে উচ্চ আদালত থেকে জামিন দেয়ার ঘটনা বিচারহীনতার অন্যতম উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে।