জড়িতা চাকমা
চুরাশি বছর আগে, পনের সেপ্টেম্বরে, এসেছো মায়ের কোলে,
সোনালী আলো আর সবুজ পাহাড়ে, তাকালে দু’চোখ মেলে।
আকাশে বাতাসে ছিল অশনী সংকেত পহেলা সেপ্টেম্বরে,
দুনিয়া ছিল আন্দোলিত, প্রলয়ঙ্কর দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ডামাডোলে।
মহাযুদ্ধে, জানমাল ক্ষয়-ক্ষতি, মানবতা হলো ছারখার,
এসেছিল সময়, পরাধীন দেশ আর জাতির ঘুম ভাঙাবার।
মহাযুদ্ধ দু’টি শেষে, উড়েছে পাক-ভারত স্বাধীনতার পতাকা,
জুম্ম ছাত্র-জনতারে শুনিয়েছিলে, পাক-ভারত স্বাধীনতার ইতিকথা।
শিক্ষক হয়ে পৌঁছেছিলে, হিল চাদিগাঙের জুম্ম জনপদে,
তুমি সূর্যের মতো ফেলেছো রশ্মি, পাহাড় আর সমতলে।
জুম্ম জাতিরে দিয়েছো আলো, দিয়েছো বটবৃক্ষের ছায়া,
মেহনতি মানুষের তরে গড়েছো নিজেরে, ছেড়ে নিজের মায়া।
প্রগতির পথে তুমি, গেছো বহুদূর জুম্ম জাতিরে নিয়ে,
পদ্মা, যমুনা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, সাংগু, মাতামুহুরী পেরিয়ে।
চেঙ্গী, মেয়নী, কাজলং, কর্ণফুলীর শুভ্র তরঙ্গিত জলরাশি,
তারি সাথে মিশে আছে, দশ ভিন্ন ভাষাভাষী জুম্ম আদিবাসী।
সংগ্রামী জীবনে সদা, জ্ঞানের সমুদ্র ছিল অতল তোমারি,
রচিলে জুম্ম জাতির ভবিষ্যৎ, জীবন-যৌবন স’বি ত্যাগ করি।
জুম্ম জাতির অন্ধকারে জ্বালিয়ে দিয়েছিলে জ্ঞানের আলো,
জন্মেছো তুমি হেথায়, সবহারা জুম্ম জাতিরে বেসেছো ভালো।
নিপীড়িত জুম্ম আর মেহনতি মানুষকে দিয়েছো সংগ্রামী দিশা,
পথ হারাদের দেখিয়েছো পথ, দিয়েছো প্রতিবাদের ভাষা।
স্বপ্ন দেখা, টিকে থাকা, বচনে-ভাষণে তুমি সদা নির্ভীক নির্ভয়,
পর সুখ তরে, দিয়ে আত্মবলিদান, মৃত্যুকে করেছো জয়।
জুম্ম জাতিরে রাখিতে ধরে, জন্ম তব এই পাহাড়ে,
তুমি তাই কীর্তিমান, প্রাতঃস্মরণীয় আদিবাসীর ঘরে ঘরে।
জুম্ম জাতিরে দিয়েছো মুক্তির মন্ত্র, বজ্রমুষ্টি মরণ-পণ তোমার,
তুমি অহংকার জুম্ম জাতির, স্বাধিকারের রূপকার।
গেয়েছিল ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের সেরা সে যে আমার জন্মভূমি..’
গুণগুনিয়ে আর বাঁশিতে, সে গান আজো শোনা যায়,
তাই, আজি এই ৮৪তম জন্মদিনে প্রণাম তোমায়।