হিল ভয়েস, ২২ আগস্ট ২০২৩, রাঙ্গামাটি: আজ ২২ আগস্ট ২০২৩, সকাল ১০ ঘটিকায় কলেজ ফটকে রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজে শিক্ষক সংকট, পরিবহন, হোস্টেল ও নানা সমস্যা নিরসনের দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডাব্লিউএফ), রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখার যৌথ উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মানববন্ধনে সাধারণ সম্পাদক সুনীতি বিকাশ চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থী, পিসিপি ও এইচডব্লিউএফের নেতৃবৃন্দ।
মানববন্ধনে স্বাগত বক্তব্যে এইচডব্লিউএফ রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখার সহসভাপতি কবিতা চাকমা দ্রুত মহিলা হোস্টেল নির্মাণ শেষ করে চালুর দাবি জানান।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কুর্নিকোভা চাকমা, দ্বাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী প্রেনঙি ম্রো, ডিগ্রী ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী বষার্মুনি চাকমা, অনার্স উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী উমংসিং মারমা, রাষ্ট্র বিজ্ঞান ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী বাচিং মারমা। তারা বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে নিয়মিত ক্লাস পাচ্ছে না এবং যথাযথ ক্লাস না পাওয়ার কারণে তাদের পরীক্ষার ফলাফলের মান যথাযথভাবে উন্নতি হচ্ছে না। তারা আরও বলেন, যে কলেজের অন্য বিভাগের বা অন্য বর্ষের শিক্ষার্থীদের যদি পরীক্ষা হয় তাহলে ক্লাস বন্ধ হয়ে যায়। মানসম্মত ক্লাস রুমের ব্যবস্থা না থাকার কারণে তারা ক্লাস রুমের শিক্ষার মনোনিবেশ করতে পারছে না। এছাড়াও তারা কলেজের পরিস্থিতি ও কলেজের নাজেহাল অবস্থার দ্রুত নিরসনের জন্য জোর দাবি জানান।
সংহতি বক্তব্যে পিসিপির রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখার সহসভাপতি অমরজ্যোতি চাকমা বলেন, প্রত্যেক বছর সেমিনারের জন্য ফি দেওয়া সত্ত্বেও দু একটি বিভাগের সেমিনার ছাড়া কোনো সেমিনার কক্ষ বর্তমানে চালু নেই। প্রতি বছর প্রত্যোক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পরিবহনের জন্য ৫০০ টাকা করে ফি নেওয়া হয়। কিন্তু এতোগুলো টাকা কোথায় যায়? তারপরেও নিজস্ব পরিবহনের কোনো ব্যবস্থা নেই। আর এটি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও সরকারি বা জাতীয় কোনো প্রোগ্রাম কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার জন্য কোনো অডিটোরিয়াম নেই। যার কারণে ক্লাসরুমের মধ্যে এইসব জাতীয় প্রোগ্রামগুলোর অনুষ্ঠান করে যাচ্ছে কলেজ প্রশাসন। তিনি পরিত্যক্ত ছাত্রাবাস পুনরায় নির্মাণ করে ও নিমার্ণাধীন মহিলা হোস্টেল চালু করার আহ্বান।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙ্গামাটি জেলা কমিটি সাধারণ সম্পাদক সোনারিতা চাকমা বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ থাকা সত্ত্বেও আমাদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাবি জানাতে হচ্ছে, যেটা খুবই দুঃখজনক বিষয়। এইখানে দূর দূরান্ত হতে গরীব পরিবারের সন্তানরা উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজে পড়তে আসেন। কিন্তু কারো কারো আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে বাসা ভাড়া চালাতেও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে এবং ভাড়া বাড়িতেও অনেক সময়ে দেখা যায় বাড়ির মালিকের কর্তৃক নারী শিক্ষার্থীরা হেনস্তার শিকার হচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের নির্মাণাধীন মহিলা হোস্টেল দ্রুত সম্পন্ন করা প্রয়োজন।
সংহতি বক্তব্যে পিসিপির রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক টিকেল চাকমা বলেন, বিভিন্ন উপজেলা প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য খেটে খাওয়া মানুষের ছেলেমেয়েরা আসেন এই রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজে। পরিবহন সংকটসহ নানাবিধ সমস্যার কারণে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ বাড়ছে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকলে তারা কীভাবে জাতি গঠনে কাজ করবে? কলেজ কতৃর্পক্ষ ও সরকারের সদিচ্ছার অভাবের কারণেই আজকে তিন পার্বত্য জেলার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠের এই সমস্যা। তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়গুলো দ্রুত সমাধানের দাবি জানান।
পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক থোয়াইক্যজাই চাক বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে মান সম্মত শিক্ষাব্যবস্থা নেই। পার্বত্য অঞ্চলে শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, এইখানে ১৩টি বিভাগের অনার্স কোর্স ও ৮টি বিভাগের মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকলে অতিরিক্ত বিভাগ থাকার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আওয়ামীলীগ সরকার ১৫ বৎসর ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও এত বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অবহেলিত করে রেখেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান যথাযথ উন্নতি ছাড়া জাতি সমাজ এগিয়ে যেতে পারে না। বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে রূপান্তরিত করতে হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নতি ঘটাতে হবে। পিসিপি সবসময় শিক্ষার্থীদের কল্যাণের জন্য কাজ করে থাকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এই সংকট নিরসনের জন্য যেকোনো আন্দোলনে পিসিপি শিক্ষার্থীদের সাথে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে সুমন চাকমা বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন যে উন্নয়নের জোয়ারে পার্বত্য অঞ্চল ভেসে যাচ্ছে। অন্যদিকে রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ সহ প্রাইমারি ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বেহাল অবস্থা। তিনি মানববন্ধনে উপস্থাপিত দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য কলেজ ও সরকার কতৃর্পক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।