হিল ভয়েস, ১৯ আগস্ট ২০২৩, বিশেষ প্রতিবেদক: বাংলাদেশের মাত্র তিন উপজেলায় বসবাসকারী দেশের অন্যতম সংখ্যালঘু আদিবাসী বানাই সম্প্রদায় বর্তমানে জাতিগতভাবে বিলুপ্তির মুখে রয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের ভাষা-সংস্কৃতি যেমন বিলুপ্তির মুখে, তেমনি রাষ্ট্রীয় নানা বঞ্চনা, প্রভাবশালী মহল কর্তৃক ভূমি বেদখল ও নিপীড়ন এবং শিক্ষা ও উন্নয়নের সুযোগের অভাবের কারণে তাদের জাতীয় অস্তিত্ব বর্তমানে হুমকির মুখে।
জানা গেছে, দেশের তিন উপজেলার চারটি গ্রামে মোট ৭০টি বানাই পরিবার রয়েছে। বানাইদের মাতৃভাষায় থাকলেও তা শুধু মুখে মুখে ব্যবহৃত হয়, তাদের বর্ণমালা না থাকায় তারা লিখতে পারেন না। বানাইরা তাদের এই ভাষা নিজেদের মধ্যে ব্যবহার করেন। শিশুরাও নিজেদের মধ্যে বানাই ভাষায় কথা বলে। বানাই ভাষায় নানা গল্প, ছড়া ও কবিতা থাকলেও সেগুলো এখন প্রায় হারিয়ে যাওয়ার পথে।
জানা গেছে, বাংলাদেশে বানাই সম্প্রদায়ের মোট জনসংখ্যা মাত্র ৩২৩ জন। সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলায় ভারত সীমান্তবর্তী মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে মোহনপুর ও বহেরাতলী নামে দুটি গ্রামে বানাইদের ৬৩টি পরিবারে ২৭৬ জন নারী-পুরুষ বাস করে। এছাড়া নেত্রকোনার বালুচড়া গ্রামে ৫টি পরিবার ও ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার গানই গ্রামে আরো দুটি পরিবারের অস্তিত্ব রয়েছে।
লেখক, গবেষক ও ভাষা বিজ্ঞানী ড. সেলু বাসিত এর মতে, বানাই জনসংখ্যা ও তাদের সচেতনতা, শিক্ষায় অনগ্রসরতা, পার্শ্ববর্তী বাঙালিদের ওপর সামাজিক নির্ভরশীলতা, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, সর্বোপরি চর্চার অভাব- এসব কারণেই বানাই ভাষার বিলুপ্তি ঘটতে চলছে।
তিনি আরও বলেন, একটি ভাষা হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে এ ভাষার নানা গল্প, উপকথাও হারিয়ে যায়। যেগুলো একটি ভাষার শুধু নয়, একটি দেশের সংস্কৃতিরও অমূল্য সম্পদ বলে বিবেচিত হয়। একটি ভাষার সঙ্গে একটা জনজাতির অস্তিত্ব নির্ভর করে। তাই বানাই ভাষা সংরক্ষণে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রিপন বানাই বলেন, খুব কষ্ট লাগে যখন দেখি আমার ভাষাটি হারিয়ে যাচ্ছে। এই ভাষা প্রায় বিলুপ্তির পথে চলে এসেছে; কারণ, এই ভাষায় কথা বলার মানুষ কমে গেছে। বেশির ভাগ মানুষ দেশত্যাগ করে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে চলে গেছে।
এছাড়া আরও জানা গেছে, বানাইরা প্রতিনিয়ত সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর ভূমি বেদখল, কটাক্ষ, বৈষম্য ও ঘৃণার শিকার হচ্ছে। এছাড়া রয়েছে রাষ্ট্রীয় উদাসীনতা। ফলে বানাইরা তাদের ঐতিহ্যগত জীবন, প্রথা, আচার, ধর্ম, উৎসব, অভ্যাস, ভাষা-সংস্কৃতি হারাতে বাধ্য হচ্ছে এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বঞ্চনার কারণে সর্বহারায় পরিণত হচ্ছে। এইভাবে ধীরে ধীরে জাতিগতভাবে বিলুপ্তির পথে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
সূত্র: ভোরের কাগজ, ১৯ আগস্ট ২০২৩