হিল ভয়েস, ২৮ আগস্ট ২০২৩, রাঙ্গামাটি: আজ ২৮ আগস্ট ২০২৩ সকাল ১১টা ঘটিকায় নিজ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের দায়ে যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত ধর্ষক আব্দুর রহিমকে করল্যাছড়ি রশিদ সরকার ( আর.এস) উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককের পদ হতে স্থায়ী বহিষ্কার ও যাবজ্জীবন সাজা বহালের দাবিতে রাঙ্গামাটির ডিসি অফিসের গেইট প্রাঙ্গণে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে অমরজ্যোতি চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সাধারণ শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ।
মানববন্ধনে সভাপতি দিপন বিকাশ চাকমা বলেন, ধর্ষক সাজা হতে না হতে সে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে সে কিভাবে ক্লাস রুমে কার্যক্রম করে? প্রশ্ন রাখতে চাই, সাজাপ্রাপ্ত আসামি কিভাবে বিদ্যালয়ে ক্লাস রুমে থাকতে পারে? ধর্ষক কখনো সমাজের বন্ধু হতে পারে না, ধর্ষক কখনো রাষ্ট্রের মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। তাকে ধর্ষক হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। তিনি অতি দ্রুত শাস্তি পুনরায় বহালের দাবি জানান, আর যারা ধর্ষককে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছে তাদেরকে ও শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান।
মানববন্ধনে স্বাগত বক্তব্যে কল্যাণ প্রিয় চাকমা বলেন, একজন ধর্ষক সমাজের কলঙ্ক, জাতির কলঙ্ক। সমাজে ধর্ষকের কোনো স্থান নেই। তিনি শিক্ষককে স্থায়ী বহিষ্কার এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহালের দাবি জানান।
অভিভাবক প্রতিনিধির বক্তব্যে এরিক চাকমা বলেন, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটি নান্দনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিলো। সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দেশের জন্য কিছু করবে বলে দেশের নাম করবে বলে আশাবাদী ছিলো। স্কুল প্রতিষ্ঠাকালীন সময়কার সময়ে এতোদিন কোনো এরকম কালিমা লেপন হয় নাই। এক সময় যে স্কুলের সুনাম ছিলো এখন কি হয়েছে সেটি ভাবুন। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়ার পরে, সেই আবার কিভাবে আপিল করে সাজা বহাল করা হতে পারে? আমরা অভিভাবকরা স্কুল ম্যানেজিং কমিটি করে দিয়েছি স্কুলে শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখার জন্য। আমরা কোনো ধর্ষকের পক্ষ নেওয়ার জন্য ধর্ষককে প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য স্কুল ম্যানেজিং কমিটি বানিয়ে দেইনি। এই স্কুলের সম্মান ও অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখার জন্য অতি দ্রুত শাস্তি বহাল রাখার দাবি জানান তিনি।
সংহতি বক্তব্যে মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান বলেন, আমি আমার সারাটা জীবন ৩৫ বছর শিক্ষকতা করেছি। আমি মনেকরি ধর্ষক জঘন্য অপরাধ করেছে, সে আমাদের পুরো শিক্ষক সমাজকে কলঙ্কিত করেছে। এইখানে শুধু শিক্ষার্থী নয় প্রত্যক অভিভাবক, প্রত্যেকে জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে ধর্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন।
এতবছর শিক্ষকতা করে এতো অভিভাবক এত শিক্ষার্থীর সম্মান পেয়ে, আমরা এই সময়ে এসে যদি শুনি শুধু শিক্ষক নয়, তিনি প্রধান শিক্ষক যিনি যার নেতৃত্বে স্কুলের মানোন্নয়ন স্কুলের সুস্থ শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তোলার কথা ছিলো, তিনি সেখানে তার নিজ ছাত্রীকে ধর্ষণের মতো লজ্জাজনক ঘটনা আর কোথাও হয়তো নেই। কিন্তু আমরা জানিনা সাজা দেওয়ার পরে কিভাবে স্বাধীন বিচার বিভাগের কাছে সম্মান জানিয়ে জানতে চাই কিভাবে বিয়ে করেছে বা জরিমানা দিয়েছে বলে ধর্ষক তিন মাস জামিন পায়? এতো জঘন্য ঘটনার পর ম্যানেজিং কমিটি কিভাবে ধর্ষকের পক্ষ নিচ্ছে? সেখানে থাকা সেই বিদ্যালয়ে প্রবেশ করার কোনো নৈতিক অধিকার থাকে না।
আমাদের উদ্দেশ্য থাকে ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে আসার জন্য উৎসাহিত করার, শিক্ষায় শিক্ষিত করে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার। কিন্তু সেখানে ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। এই ধরনের ধর্ষকদের চিহ্নিত করে তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। ধর্ষকের শাস্তি পুনরায় বহাল রাখার দাবি জানান।
সাধারণ শিক্ষার্থীর পক্ষে জিকো চাকমা বলেন, একজন দন্ডপ্রাপ্ত আসামী কিভাবে তার চাকরিতে পুনরায় যোগদান করেছেন? তিনি সকল শিক্ষকের সমাজকে কলঙ্কিত করেছেন। যেখানে শিক্ষক শিক্ষার কারিগর সেখানে তিনি ধর্ষক। তিনি ধর্ষকের শাস্তিসহ তাকে যারা সহযোগিতা করেছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। তিনি যদি ধর্ষণের ঘটনায় পার পান তাহলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আরো ঘটাবেন বলে মন্তব্য করেন।
তিনি আরো বলেন , যতদিন দাবি মেনে নেওয়া না হবে ততদিন পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া এবং শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ করা হবে।