হিল ভয়েস, ৩ আগস্ট ২০২৩, ঢাকা: ঢাকায় পার্লামেন্টারি ক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জনাব আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক এমপি বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আন্তরিকতায় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। যে চুক্তি হয়েছে সে অনুযায়ী কাজ করা গেলে নিশ্চয়ই শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি। তিনি বলেন, পার্বত্য এলাকা আরো বড় সংঘাতের দিকে গেলে তা দেশের জন্য সুখকর হবে না, তা শুভ লক্ষণ নয়।
আজ (৩ আগস্ট ২০২৩) আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় ককাস এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত “বহুত্ববাদ, বৈচিত্র্য ও আদিবাসী অধিকার” শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জনাব আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক এমপি এসব কথা বলেন। আসন্ন ৯ আগস্ট ২০২৩ আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় ককাস এর আহ্বায়ক ফজলে হোসেন বাদশা’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ রাশেদ খান মেনন এমপি ও বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ র ম ওবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী এমপি। এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন আ ক ম ফজলুল হক এমপি, আরমা দত্ত এমপি, লেখক ও সাংবাদিক আবু সাইদ খান, অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, ইউএনডিপি-র সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ চাকমা প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী জনাব আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক এমপি আরও বলেন, ‘৮০-র দশকে জিয়াউর রহমানের উদ্যোগে যে সেটেলার বাঙালিদের পার্বত্য এলাকায় পুনর্বাসন করা হয়েছিল তার উদ্দেশ্যটা ভালো ছিল না, কাজটা ভালো ছিল না। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সেখানে পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। কাজেই এখন দেখতে হবে সেখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা যেন অধিকার বঞ্চিত না হয়।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, ‘কুকি-চীন তো এমনি এমনি হয় নি। কুকি-চীন তৈরী করা হয়েছে। এখন বিড়াল বাঘ হয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পৃথিবীব্যাপী বহুত্ববাদের ধারণা সংকুচিত হয়ে আসছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তবতায় জিয়াউর রহমান এই বহুত্ববাদী সমাজ ধারণার বিপরীতে একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন, যা সঠিক ছিল না।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আ র ম ওবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী এমপি বলেন, ‘শান্তিচুক্তির সময় আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব ছিলাম। আমার মনে হয়, চুক্তিকালীন সময়ে যে একটা আস্থার সম্পর্ক ছিল, সেটা এখন অনেকাংশে কমে গেছে। এই আস্থার সম্পর্কটা ফিরিয়ে আনতে হলে উভয় পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। আমার মনে হয় না যে, পার্বত্য চুক্তির কোনো একটি ধারাও অবাস্তবায়নযোগ্য।’
আ ক ম ফজলুল হক এমপি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের তুলনায় সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এখানে অনেকেই জমি হারাচ্ছেন। সমতল ভূমির আদিবাসীদের জন্য একটি পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করা উচিত।’
আরমা দত্ত এমপি বলেন, ‘৭৫ পরবর্তী সময়ে সামরিকায়নকে একধরনের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা হয়েছে। এটা লজ্জাজনক যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে একরের পর একর ভূমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে।’
সিনিয়র সাংবাদিক আবু সাইদ খান বলেন, ‘এদেশের সংবিধান রচনার সময়ে আমরা বৈচিত্র্যকে স্বীকার করতে পারি নি। পঞ্চদশ সংশোধনীতে আদিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ ছিল, কিন্তু তাও করা হয় নি।’
আলোচনা সভায় মূল ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় ককাস এর সমন্বয়ক অধ্যাপক ড: মেসবাহ কামাল। তিনি বলেন, বৈচিত্র্যকে অস্বীকার করে যখনই একীকরণ করার চেষ্টা করা হয়, তখন সমস্যার সৃষ্টি হয়। সারা পৃথিবীতে কম করে হলেও ৩৭ কোটি আদিবাসী রয়েছে। পৃথিবীর ৮০ ভাগ জীববৈচিত্র্যই রক্ষা করছে আদিবাসীরা। তিনি আরো বলেন, ‘বহুত্ব, বৈচিত্র্যকে স্বীকার করতে হবে। পৃথিবী আজ অনেক এগিয়েছে। কারো অস্তিত্ব অস্বীকার করে অগ্রগতি নিশ্চিত করা যেতে পারে না।’
এতে অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ইউএনডিপির সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ চাকমা, কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা, আদিবাসী নেত্রী হেলেনা তালাং, নমিতা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক সন্তোষিত চাকমা বকুল, বাংলাদেশ আদিবাসী কোচ সংগঠনের সভাপতি রমেশ কোচ, বাংলাদেশ রাজবংশী সমিতির সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রাজবংশী প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।