হিল ভয়ে, ১৯ আগস্ট ২০২৩, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কাঞ্চনপুরে ত্রিপুরা চাকমা স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন ও চাকমা ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’র উদ্যোগে এবারেও ১৭ আগস্ট দিনকে ‘চাকমা কালো দিবস’ অভিহিত করে ঐদিন শাক্য সদক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চাকমা ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট অনিরুদ্ধ চাকমা, চাকমা স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুবল কুমার চাকমা, চাকমা স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক প্রশান্ত চাকমা, চাকমা স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন, কাঞ্চনপুর শাখার সভাপতি ক্রিতম চাকমা।
সংবাদ সম্মেলনে অনিরুদ্ধ চাকমা বলেন, আজকের দিনটা সর্বভারতের চাকমা এবং ভারতের বাইরেও বাংলাদেশ ও মিয়ানমার, যেখানে যেখানে চাকমা আছে তাদের সকলের জন্য কালো দিবস হিসেবে পালন করছি। আমরা ২০১৬ থেকে এই কালো দিবসটি পালন করে আসছি।
অনিরুদ্ধ চাকমা বলেন, আমরা চাকমারা হচ্ছি পার্টিশনের (দেশ বিভাগের) ভিকটিম। পার্বত্য চট্টগ্রাম চাকমাদের রাজ্য ছিল। বর্তমানেও চাকমাদের অস্তিত্ব আছে। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে সিরিল রেডক্লিপ তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামকে জুরে দেয়। দেশভাগের পরবর্তী সময়কাল থেকে আজ অবধি পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা সহ অন্যান্য আদিবাসী জন-সমাজের লোকদের ভারতপন্থী আখ্যা দেয়ার কারণে কোনো সময়ই সেই দেশের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। যার ফলে, বর্তমানে চাকমা সহ অন্যান্য আদিবাসী জন-সমাজের উপর অন্তহীন নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, ভূমি দখল, ধর্মান্তরিতকরণ, এথনিক ক্লীনসিং, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। ঐতিহাসিক এক ভুলের কারণে চাকমারা আজ বিপন্ন।
তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে পূর্ব পাকিস্তানের সাথে জুরে দেওয়ায় চাকমারা আজ বিপন্ন। চাকমারা আজ ভূমি হীন, ঘর-বাড়ি হীন, দেশ হীন। আজকে পার্টিশনের কারণে চাকমারা যে ভিকটিক হয়েছে সেই প্রতিবাদে আজ ১৭ আগস্ট দিনটি কালো দিবস হিসেবে উদযাপন করছি। আজ চাকমারা শোকাহত, মর্মাহত। সেইজন্য আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আপিল করছি যে, ১৯৪৭ সালে আমাদের সাথে যে অবিচার হয়েছে তা যাতে পুনর্বিবেচনা করে আমারদেরকে যাতে ন্যায়বিচার দেওয়া হয় আর পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়, সেজন্য আমরা এই ব্ল্যাক ডে বা কালো দিবস উদযাপন করছি।
সুবল কুমার চাকমা বলেন, আজকে কালো দিবস উদযাপনের উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রতিবাদ। দেশ ভাগের সময় মুসলমান সংখ্যাঘরিষ্টদের নিয়ে পাকিস্তান ও অমুসলীম সংখ্যাঘরিষ্টদের নিয়ে ভারত রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার কথা। তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রামে ৯৮.৫% অমুসলিম হওয়ায় সবাই মনে করেছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারতের অন্তর্ভুক্ত হবে। কারণ সেই সময় স্নেহ কুমার চাকমাসহ অন্যান্য নেতারা ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর সাথে সাক্ষাত করলে নেহেরু চাকমা নেতাদের আশ্বস্ত করেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তজ্জন্যে স্নেহ কুমারের নেতৃত্বে ১৫ই আগস্টের দিন রাঙ্গামাটিতে ভারতের পতাকা উত্তোলন করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ১৭ই আগস্ট রেডিওর মাধ্যমে জানতে পারা যায় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামকে পূর্ব পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পরবর্তীতে পাকিস্তান সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের লোকদের গাদ্দার তকমা দেয়, কেননা পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হয়েও ভারতের পতাকা উত্তোলন করা হল।