হিল ভয়েস, ২০ আগস্ট ২০২৩, ঢাকা: গতকাল ‘এসো বুনোফুলেরা, হাতে হাত মিলিয়ে শেকড়ের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে নবদিগন্তের গান গায়’ শ্লোগানকে সামনে রেখে ইন্ডিজেনাস স্টুডেন্টস ইউনিয়নের উদ্যোগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীন বরণ, বিদায় সংবর্ধনা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানটি দুটি পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পর্বে নবীন বরণ ও বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ৪র্থ বর্ষের ছাত্রী রিয়া রোয়াজা ও ৩য় বর্ষের ছাত্র মং খিং অংয়ের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন ইন্ডিজেনাস স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সভাপতি সাগর ত্রিপুরা। দ্বিতীয় পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন ৩য় বর্ষের ছাত্রী রুমিতা চাকমা এবং ২য় বর্ষের ছাত্র ক্যহিং রাখাইন কেইন। প্রধান অতিথি হিসেবে সংরক্ষিত নারী আসন-১১ সাংসদ অ্যারোমা দত্ত(এমপি) উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও বিশেষ কাজের কারণে উপস্থিত থাকতে পারেননি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাসুদ, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শাওলী মাহবুব এবং সিনিয়র শিক্ষার্থী হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি রিপন জ্যোতি চাকমা, সাবেক সহ-সভাপতি সুইপ্রু মারমা।
ইন্ডিজেনাস স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এন্জেল চাকমা স্বাগত বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। তিনি আদিবাসীদের পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে নবীনদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপমা চাকমা ও জুয়েল তঞ্চঙ্গ্যা এবং বিদায়ী ১২তম ব্যাচের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন লুম্বিনী তালুকদার ও কৌশিক মৃ ডন।
সুইপ্রু মারমা প্রথমবার অডিটোরিয়ামে নবীন বরণের অনুষ্ঠানটি আয়োজন করতে পারার জন্য বর্তমাস কমিটিকে প্রশংসা করেন। সবাইকে ভ্রাতৃত্ববোধ সুদৃঢ় করার জন্য বিপদে-আপদে পাশে থাকার জন্য অনুরোধ জানান।
রিপণ জ্যোতি চাকমা তাঁর বক্তব্যে পাহাড় এবং সমতলের জাতিসত্তাগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে যেসব হয়রানির শিকার হয় সেসব তুলে ধরেন। পাশাপাশি রাষ্ট্র কর্তৃক শোষণের বিষয়গুলো তুলে ধরেন। আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির জন্য সবাইকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শাওলী মাহবুব তার বক্তব্যে বলেন, তিনি আদিবাসী জনগোষ্ঠী বিষয়ে অধ্যয়ন করার জন্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে মেলামেশার সুযোগ পান। তিনি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি রক্ষার্থে ভূমির গুরুত্বটা তুলে ধরেন এবং পাহাড়িদের ভূমি রক্ষার জন্য সরকারের আন্তরিকতা কামনা করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল আদিবাসী শিক্ষার্থীদের মঙ্গল কামনা করি। পাহাড়িরা অনেক সহজ, সরল হয়। আমি চাই তারা যেন সার্বিকভাবে এগিয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন দুর্গম অঞ্চল থেকে আদিবাসী শিক্ষার্থীরা এখানে পড়তে আসে। তারা অনেক সংগ্রাম করে জীবনযাপন করে। ১ম এবং ২য় শ্রেণির চাকরিতে তাদের জায়গা নিশ্চিত করতে হবে।
সর্বশেষ সংগঠনের সভাপতি সাগর ত্রিপুরা তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমরা দেশে ৪৫ টির অধিক জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করি। তাদের সংস্কৃতি আলাদা। তাঁরা কঠিন পরিস্থিতিতে সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পায়। এই পরিস্থিতিতে নিজের সংস্কৃতি ঠিকিয়ে রাখার জন্য আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সচেতনতার পাশাপাশি শিক্ষকদের পাশে থাকার অনুরোধ জানিয়ে তার বক্তব্য শেষ করার মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠান সমাপ্তি ঘোষণা করেন।