হিল ভয়েস, ২০ জুলাই ২০২৩, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় চলমান জাতিসংঘের এক্সপার্ট ম্যাকানিজম অন দ্য রাইট্স অব ইন্ডিজেনাস পিপল্স (এমরিপ) এর ৪র্থ দিনের সভায় বাংলাদেশের মানবাধিকার ও আদিবাসী অধিকার বিষয়ক বেসরকারি সংস্থা কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি মনজুনি চাকমা বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ও সমতলে রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আদিবাসীদের মালিকানাধীন ভূমি বেদখল করা হচ্ছে। স্বাধীন ও পূর্বাবহিত সম্মতি ব্যতিরেকে তাদের প্রথাগত ভূমির অধিকার লংঘন করে তাদের বসতভিটা ও পূর্বপুরুষের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
আজ ২০ জুলাই ২০২৩, জেনেভায় অনুষ্ঠিত এমরিপের ১৬শ অধিবেশনের ৪র্থ দিনের সভায় এজেন্ডা আইটেম ৯: ইন্টারএ্যাকটিভ ডায়ালগ ইউএনপিএফআইআই, দ্যা স্পেশ্যাল র্যাপোর্টিউর অন দ্যা রাইটস অব ইন্ডিজেনাস পিপলস, এন্ড ডি ইউএন ভলান্টারি ফান্ড ফর ইন্ডিজেনাস পিপলস (পাবলিক) এর উপর বিবৃতি উপস্থাপন করার সময় কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি মনজুনি চাকমা এসব কথা বলেন।
জাতিসংঘের এমরিপের এই ১৬শ অধিবেশনটি শুরু হয় গত ১৭ জুলাই এবং তা আগামী ২১ জুলাই পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে জানা যায়।
বিবৃতিতে মনজুনি চাকমা বলেন, “আপনারা সবাই জানেন, আদিবাসীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে তাদের ভূমি ও ভূখন্ড কেড়ে নেওয়া এবং স্বাধীন ও পূর্বাবহিত সম্মতি ব্যতিরেকে তাদের প্রথাগত ভূমির অধিকার লংঘন করে তাদের বসতভিটা ও পূর্বপুরুষের ভূমি থেকে উচ্ছেদ।
উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ সরকার ১৯৭২ সালে আদিবাসী ও ট্রাইবাল জনগোষ্ঠী বিষয়ক আইএলও কনভেনশন নং ১০৭ অনুসমর্থন করেছিল, যেখানে আদিবাসীদের ব্যক্তিগত ও সমষ্ঠিগত ভূমির অধিকার এবং তাদের প্রথাগত ভূমির অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতলে রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আদিবাসীদের মালিকানাধীন ভূমি বেদখল করা হচ্ছে।
এধরনের একটি দৃষ্টান্ত হল গাইবান্ধায় চিনি কারখানার জন্য সরকার কর্তৃক আদিবাসী সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর ভূমি অধিগ্রহণ, যা চিনির কারখানাটি বন্ধ হলে ফেরত দেওয়ার কথা। কিন্তু সমঝোতা অনুযায়ী সাঁওতাল জনগোষ্ঠীকে ভূমি ফেরত দেওয়া হয়নি।
অনুরূপভাবে, ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুসারে কাপ্তাই হ্রদে ডুবে যাওয়া আদিবাসী জুম্মদের ভূমি আদিবাসী প্রকৃত মালিকদের নিকট ফিরিয়ে দেওয়ার কথা রয়েছে, যদি এসব ভূমিসমূহ চাষের উপযোগী হয়। চুক্তির উক্ত বিধান লংঘন করে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় মুসলিম সেটেলাররা এসব ভূমি অব্যাহতভাবে বেদখল করছে।
সুতরাং আমি প্রস্তাব রাখছি যে, বাংলাদেশের আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত ভূমির অধিকার তথা সমষ্টিগত অধিকারের উন্নয়নে ও সুরক্ষায় যুক্ত আইএলও কনভেনশন নং ১০৭ ও ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে বোঝাতে জাতিসংঘ কর্তৃক যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
অবশেষে, আমি বিভিন্ন জাতিসংঘ অধিবেশনে অংশগ্রহণের জন্য আদিবাসী প্রতিনিধিদের তহবিল জোগান দানের কর্মসূচি সম্প্রসারণ করতে ভলান্টারি ফান্ড ফর ইন্ডিজেনাস পিপলস-কে অনুরোধ জানাই।