হিল ভয়েস, ২৪ জুলাই ২০২৩, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলাধীন বাঘাইছড়ি উপজেলার ৩০নং সারোয়াতলী ইউনিয়নের ৬, ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের এবং ৩৯১নং চুরাখালী মৌজার জুম্ম এলাকাবাসী তাদের এলাকায় বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য প্রকল্প (গেইম সেঞ্চুয়ারি) ঘোষণার প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং প্রকল্পটি বাতিলের দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
উক্ত অভয়ারণ্য হলে বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ, তাদের ব্যাপক বাগান-বাগিচা ধ্বংসসহ স্থানীয় জুম্মদের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
গত ১৯ জুলাই ২০২৩ এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ৩৯১নং চুরাখালী মৌজার হেডম্যান ও কার্বারিগণ রাঙ্গামাটিস্থ আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যানের বরাবরে এই স্মারকলিপি প্রদান করেন।
স্মারকলিপিতে স্বাক্ষরদাতা হেডম্যান ও কার্বারিগণ হলেন- কিরণ বিকাশ চাকমা (হেডম্যান প্রতিনিধি, ৩৯১নং চুরাখালী মৌজা), সুপ্রসাদ চাকমা (কার্বারি), মিলন চাকমা (কার্বারি), অমূল্যসেন চাকমা (কার্বারি), প্রমোদ চাকমা (কার্বারি), নয়ন তারা চাকমা (কার্বারি), শান্তশীল চাকমা (কার্বারি), মৃণা চাকমা (কার্বারি), নীতিময় চাকমা (কার্বারি), চম্পা চাকমা (কার্বারি), কমল কেতন চাকমা (কার্বারি), ধনা চাকমা (কার্বারি), এন্টি চাকমা (কার্বারি), অভিজিৎ চাকমা (কার্বারি)।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, “মাননীয় জেলা প্রশাসক, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার স্মারক নং- ৩১.৪২,৮৪০০.২২৬.১৯.০৩২.১৪-৭৫৫ তারিখ ২৭/৫/২০১৪ খ্রি: মূলে এলাকাটিকে ডি ফরেস্ট করে নতুন মৌজা সৃষ্টির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে লংগদু উপজেলাধীন ৩৯০নং কালাপাকুজ্জ্যা মৌজা সৃষ্টির পর নব সৃষ্ট মৌজার নম্বর হবে ৩৯১ নং চুরাখালী মৌজা।”
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, “মহোদয় আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারি যে, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলার অন্তর্গত মোট ৪২ হাজার ৮৭ হেক্টর জায়গা ১৯৬২ সালে কাচালং রিজার্ভের দক্ষিণ পূর্ব অংশকে (গেইম সেঞ্চুয়ারি) বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, ১৯৮৩ সালে ২৯ সেপ্টেম্বর তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তদানীন্তন কৃষি মন্ত্রণালয়ের নোটিফিকেশন নং xiii for-১/৮৩/৬৮২ মূলে সংশ্লিষ্ট মৌজার স্থানীয় এলাকারবাসীর মতামত না নিয়ে একতরফা ভাবে পাবলাখালী (গেইম সেঞ্চুয়ারি) বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ বহু বৎসর অতিবাহিত হওয়ার পর বিগত ১৪/০৬/২০২২ইং ও ১৪/০৬/২০২৩ইং তারিখে পরপর দুইবার সংশ্লিষ্ট মৌজার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এই বিষয়ে রাঙ্গামাটিস্থ ফরেষ্ট অফিস সম্মেলন কক্ষে এবং জেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে ওয়ার্কশপ (সত্তা) অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় উপস্থিত এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গগণ অত্র এলাকায় বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করিলে এলাকাবাসীর মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রহিয়াছে বিধায় বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য প্রকল্প ঘোষণার বিরুদ্ধে জোরালো বিরোধীতা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।”
স্মারকলিপিতে উক্ত অভয়ারণ্য হলে জুম্মদের যেসব ক্ষতি হবে বলে উল্লেখ করা হয় সেগুলি হল:
১) বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা ও বাস্তবায়ন করা হলে যুগ যুগ ধরে বসবাসরত হাজার হাজার পরিবারকে বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ করা হবে, অন্যদিকে পাহাড়িদের জীবন-জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে বিধায় উক্ত এলাকায় কোন বাসিন্দা বসবাস করার মত পরিবেশ থাকবে না।
২) তাছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে সমতল থেকে নিয়ে আসা বহিরাগত বাঙ্গালী সেটেলার দ্বারা বসবাসরত পাহাড়িদেরকে নিজ নিজ বাড়িভিটা থেকে উচ্ছেদ করে ভূমি বেদখল করার কারণে স্থানীয় পাহাড়িদের সীমাহীন দুঃখ দুর্দশা জীবন যাপন করছে।
৩) তদপুরি বিগত ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের এক নিরব ঘাতকের মত পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাসরত নিজ নিজ রেকর্ডীয় ও ভোগ দখলীয় জায়গা ও বাড়ি ভিটা থেকে উচ্ছেদ করা হয়।
৪) এযাবত যুগ যুগ ধরে আমরা স্ব-স্ব ভোগ দখলীয় জায়গার উপর অক্লান্ত পরিশ্রম ও বহু অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে পরিবেশ বান্ধব নানা জাতের ফলজ, বনজ ও ঔষধী গাছের বাগান সৃজন করিয়া পাশাপাশি অনাবাদি জলে ভাসা জায়গাকে আবাদ করতঃ চাষাবাদের উপযোগী করিয়া পরিবারের ভরণ পোষণ করিয়া আসিতেছি।
৫) প্রকাশ থাকে যে, যেহেতু বনবিভাগের অধীনে পরিকল্পিত বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে এলাকায় বসবাসরত জনসাধারণের অবর্ণনীয় ক্ষতি সাধন করা হবে। যা বিগত ১৯৬০ সালের কাপ্তাই বাঁধের ফলে স্থানীয় পাহাড়ির যে ক্ষতি করা হয়েছে তাহার সামিল হবে।”
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, “জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা মুলে বাংলাদেশে খেটে খাওয়া মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্য আবাদি অনাবাদি ১ ইঞ্চি জমিও খালি না রাখার জন্য বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার মাধ্যমে বার বার প্রচার করেন, সুতরাং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার আলোকে উক্ত মৌজার স্থানীয় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের একমাত্র অবলম্বন হিসাবে স্থিত অত্র এলাকার পাহাড় জায়গায় পরিবেশ বান্ধব সৃজনশীল ও আয়-বর্ধন মূলক নানাবিদ ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের বাগানের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ক্লিনিক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সমূহ রক্ষার স্বার্থে অত্র এলাকার উন্নয়নের নামে ক্ষতিসাধন করার লক্ষ্যে গ্রহণকৃত বন্যপ্রাণী অভয়রাণ্য (গেইম সেঞ্চুয়ারি) প্রকল্পটি বাতিল পূর্বক ৩৯১নং চুরাখালী মৌজাটি অনুমোদনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে মহোদয়ের নিকট সবিনয়ে আকূল আবেদন জানাচ্ছি।”