হিল ভয়েস, ২৫ জুলাই ২০২৩, ঢাকা: আজ ঢাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে সামিল দেশের প্রগতিশীল ছাত্র ও যুব সংগঠনসমূহের উদ্যোগে আয়োজিত সংহতি সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ জনগণের বিশ্বাসের সাথে প্রতারণা করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
পার্বত্য চুক্তি দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়নের দাবিতে আজ (২৫ জুলাই) বিকাল ৩ টায় ঢাকার শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনে সামিল প্রগতিশীল ছাত্র ও যুব সংগঠনসমূহ’ এর ব্যানারে এই সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আদিবাসী ও বাঙালি বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র ও যুব সংগঠনসমূহ মিছিল নিয়ে সমাবেশ স্থলে যোগদান করেন এবং সমাবেশ শেষে একটি বিশাল মিছিল বের করে শাহবাগ কাটাবন প্রদক্ষিণ করে টিএসসিতে এসে শেষ হয়।
উক্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ যুব মৈত্রীর সভাপতি তৌহিদুর রহমান তৌহিদ এবং সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন এর সভাপতি দীপক শীল।
সংহতি সমাবেশের সঞ্চালক বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন এর সভাপতি দীপক শীল সমাবেশে উপস্থিত সকলকে সংগ্রামী শুভেচ্ছা জানিয়ে সমাবেশের শুরুতে প্রশ্ন রেখে বলেন, “আমার কি পেরেছি পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে? এ সরকার পারে নাই! আমরা যদি জাগি তাহলে সরকার বাধ্য হবে চুক্তি বাস্তবায়ন করতে।”
সমাবেশে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অং সোয়ে সিং মারমা বলেন, “পাহাড়ে ৭৫ পরবর্তী ৯৭ সাল পর্যন্ত অরাজকতা বিরাজমান ছিল। দীর্ঘ সংগ্রামের পর জনসংহতি সমিতি সরকারের সাথে চুক্তিতে সাক্ষর করে। চুক্তিকে ঘিরে ছিলো অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা। চুক্তির ২৫ বছর পরও এর কোনো বাস্তবায়ন নেই। এখনও মূল ধারাগুলো অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে।”
পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পাহাড়ের ছাত্র যুবদের আন্দোলন চলমান রয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, এই পাহাড় আমার, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত এই দেশ, এই রাজপথ, পাহাড় কিংবা সমতল ছাড়বে না।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, কেন্দ্রীয় সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবেই চুক্তিটি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এই নীপিড়নমূলক ব্যবস্থা না পাল্টালে কোনো পরিবর্তন আসবে না, আমাদের এই ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে হবে।
আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ বলেন, আজকে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও আমরা দেখতে পাই জুম্ম জনগোষ্ঠী তাদের অধিকারের জন্যে, আত্মপরিচয়ের জন্য এবং নিজেদের অস্তিত্বের জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। ১৯৯৭ সালে চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ জনগণের মধ্যে যে আশা আকাঙ্খা তৈরী হয়েছিল তা আজ ২৫ বছর পরে এসে হতাশায় পরিণত হয়েছে। সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ জনগণের বিশ্বাসের সাথে প্রতারণা করেছে।
বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক টনি চিরান বলেন, একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের জন্যে আমরা যুদ্ধ করেছি। পার্বত্য চট্টগ্রামকে সামরিকীকরণের মাধ্যমে সেখানকার আদিবাসী জনগণের অধিকারকে কুক্ষিগত করে রাখা হয়েছে। পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ জনগণ তাদের ভূমি ও অস্তিত্বের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করলেও সরকার এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
সরকারের সদিচ্ছার অভাবের কারণেই পার্বত্য চট্টগ্রামের চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হচ্ছে না দাবি করে সমাবেশে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম বলেন, আমরা এক দেশে দুই শাসন দেখতে পাচ্ছি। পুরো দেশে এক শাসনব্যবস্থা আর পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক শাসন ব্যবস্থা। এই দ্বৈত শাসনব্যবস্থা আমরা চাই না, পাহাড় থেকে সেনাবাহিনীকে সরিয়ে দেওয়া হোক। সরকার ইচ্ছা করেই এই অবস্থাকে জিইয়ে রাখছে।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ যুব মৈত্রীর সভাপতি তৌহিদুর রহমান তৌহিদ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির এই আন্দোলন শুধু আদিবাসীদের আন্দোলন না, এটি আদিবাসী ও বাঙালিদের আন্দোলন, সমস্ত দেশবাসীর আন্দোলন। এই আন্দোলনে ছাত্র ও যুবদের অধিকতর যুক্ত থাকতে হবে।
এছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় যুব জোটের সভাপতি রোকনুজ্জামান রোকন, জাতীয় আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি হরেন্দ্র নাথ সিং, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ) এর সভাপতি বাশিদুল হক ননী, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী সভাপতি অতুলন দাস, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল) সভাপতি গৌতম চন্দ্র শীল প্রমুখ।
উক্ত সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন এর সদস্য দীপায়ন খীসা।